চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাবুলের সঙ্গে থাকা তার মা হোসনে আরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেটা খিদা একদম সহ্য করতে পারে না। দুপুরে ভাত খেতে বাসায় ফেরার পথে তার এ অবস্থা। ”
বুধবার হরতালের দুপুরে বন্দর নগরীর বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগরে ইসলামী ছাত্রশিবিরকর্মীরা হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। আর তাতেই বাম হাতে জখম হয় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া বাবুলের।
বোমার স্প্লিন্টারবিদ্ধ ১৩ বছর বয়সি বাবুল এখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
বিকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে বাবুল। তার পাশে বসা মা হোসনে আরা হতবিহ্বল, আর বড়ভাই ছুটেছে রক্তের খোঁজে।
হরতালে সহিংসতায় আহত এই কিশোর পরে অবশ্য বেড পেয়েছে।
তক্তার পুল এলাকায় তৈয়ব সওদাগরের কলোনিতে বাসা বাবুলের। স্থানীয় ইউসেপ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে।
বাবুলের বাবা আব্দুল কুদ্দুস মিয়াখান নগর ব্রিজের পাশে একটি গ্যারেজে নিরাপত্তাকর্মী।
রাতের বেলায় গ্যারেজ পাহারার দায়িত্বে ছিল কুদ্দুসের। হরতালের সকালে গ্যারেজে গাড়ি থাকায় বাবার পরিবর্তে বাবুল গিয়েছিল গ্যারেজে।
“দুপুরে ওর বাবা গ্যারেজে গেলে সে বাসায় আসছিল ভাত খেতে,” বলেই কাঁদতে থাকেন হোসনে আরা।
বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “মিয়াখান নগর ব্রিজের ওপর দিয়ে আসার সময় হঠাৎ বাম হাতের বাহুতে কিসের একটা আঘাত লাগে।
সাথে সাথে আমি রাস্তায় পড়ে যাই, দেখি আমার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। ”
কুদ্দুস ও হোসনে আরার চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বাবুল চতুর্থ।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী নিবন্ধক ডা. রানা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আপাতত বাবুল শঙ্কামুক্ত হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার শরীরে রক্তের প্রয়োজন।
বাবুলের বাহুতে কোনো স্প্লিন্টার রয়ে গেছে কি না- তা দেখতে এক্স-রে করা হয়েছে।
“পরে বলা যাবে, তার কোনো নার্ভ ইনজুরি হয়েছে কি না,” বলেন চিকিৎসক।
বাকলিয়া থানার ওসি মো. মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুপুরে মিয়াখান নগর ব্রিজ হেঁটে পার হওয়ার সময় শিবিরকর্মীদের ছোড়া হাতবোমায় আহত হয় বাবুল।
বোমা ছোড়ায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
ফাইল ছবি নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টা হরতালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানেই বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি হয়েছে।
ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে এর আগের হরতালেও বোমাবাজি হয়েছে এবং তাতে একজন নিহতও হয়েছেন।
গত ২৫ মার্চ সকালে হরতাল চলাকালে নগরীর বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকায় শিবিরকর্মীদের ঢেলে দেয়া পেট্রোলের আগুনে গুরুতর আহত হয় টমটম চালক মুসা মিয়া।
১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ১২ মার্চ সন্ধ্যায় চেরাগী পাহাড় এলাকায় শিবিরের ছোড়া হাতবোমায় বাম চোখ হারায় মেডিক্যাল ছাত্র সুজন চন্দ্র নাথ (২৩)।
২৮ মার্চ সকালে নগরীর মোমিন রোডে শিবিরকর্মীদের ছোড়া হাতবোমায় চোখে আঘাত পায় অপর্ণা চরণ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্তু বড়ুয়া (১২)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।