সাফকথা
দুর্নীতির সূচকে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১২তম। গত বছর ছিল ১৩তম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল- টিআই’র বিশ্বব্যাপী জরিপে বাংলাদেশের দুর্নীতি আরও একধাপ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেন। দুর্নীতিতে এ বছর গত বছরের মতো শীর্ষস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। তৃতীয় স্থানে ইরাক, চতুর্থ স্থানে সুদান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান। বাংলাদেশের সঙ্গে সূচকে রয়েছে আরও ৯টি দেশ।
এগুলো হচ্ছে- আজারবাইজান, হন্ডুরাস, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, সিয়েরা লিওন, টোগো, ইউক্রেন ও জিম্বাবুয়ে। এ রিপোর্টে বিশ্বে কম দুর্নীতি দেশ হচ্ছে- ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর যৌথভাবে এবারই প্রথম শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়- দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত অকার্যকর করে দেয়া, বিরোধী দলের সংসদ বয়কট, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, অঙ্গীকার করেও একমাত্র অর্থমন্ত্রী ছাড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কারও সম্পদের হিসাব না দেয়া, বাজেটে বারবার কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া, সরকারের ক্রয় খাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা না করা, জনপ্রতিনিধিদের মদতে ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং জনপ্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপকে। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ ১০-এর মধ্যে ২ দশমিক ৪ স্কোর পেয়েছে।
গত বছরও একই স্কোর পেয়েছিল। তার মতে, বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপে এক-তৃতীয়াংশ দেশের স্কোর ৫-এর নিচে। বাংলাদেশের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, সূচকে ৩-এর কম স্কোর অর্জনকারী দেশের তালিকায় বেশ ক’বছর ধরে রয়েছে বাংলাদেশ। এসব দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত কোন দেশ নেই।
কম দুর্নীতির দেশ বলে রিপোর্টে স্থান পাওয়া তিন দেশের স্কোর ১০-এর মধ্যে ৯.৩। তার মতে, ৫-এর উপরে স্কোর এমন দেশের দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি বলা যায়। যা রাষ্ট্র পরিচালনা বা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে না। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য সূচকে ৩-এর নিচে অবস্থানকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। দুর্নীতি এসব দেশের উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।
টিআইবির কর্তা ব্যক্তিরা দুর্নীতি বন্ধে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারসহ বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে সামপ্রতিক ঘটে যাওয়া বেশ কিছু নেতিবাচক ঘটনার উল্লেখ করেন। তারা আশঙ্কা করেন, এসব বাধা দূর করতে না পারলে আগামী সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও পেছনে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিবিরোধী স্পষ্ট অঙ্গীকার, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন, তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন গঠন, নাগরিক সনদ প্রণয়ন, সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী ক্যাম্পেইন ও ট্রেনিং এবং বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশকে ইতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মিডিয়া সরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি নির্মূলে কোন উদ্যোগই পূর্ণতা পাবে না। দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের পরিবর্তন এবং উন্নতির জন্য টিআইবির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এই সুপারিশ সমূহ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে বলেন, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর এর উন্নতি-অগ্রগতি নির্ভর করছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, তথ্য কমিশন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ, জনপ্রশাসন, মানবাধিকার কমিশনের মতো গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠান সমূহের সততা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা বর্তমান সরকার কতটা নিশ্চিত করতে চায় তাই বিবেচ্য।
তার ওপরেই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি-অগ্রগতি বিশেষ করে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করছে। তিনি সরকারি ক্রয় খাতে স্বচ্ছতা, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীকরণ এবং তার জবাবদিহি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. হাফিজ উদ্দিন খান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতা শোনা যায়। কিন্তু তাদের উদ্যোগ দৃশ্যমান হয় না। এসব বক্তৃতা বা অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন হয় না।
তিনি সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা প্রত্যাহার, দুর্নীতির মামলা খারিজ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি থেকে মুক্তির পথ নেই। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজনীতি জনপ্রশাসনে বিরাজমান দুর্নীতির ব্যাপকতা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণে এ রিপোর্ট তৈরি হয়। এতে টিআইবির কোন ভূমিকা নেই বলে জানানো হয়।
কেন বাড়লো
*দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়া
*অর্থমন্ত্রী ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের কারও সম্পদের হিসাব না দেয়া
*বাজেটে কালো টাকাকে সাদা করতে দেয়া
*সংসদ বর্জন
*স্বার্থের দ্বন্দ্ব
*জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভূমি দখল
*জনপ্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপ
*সরকারের ক্রয় খাতে অস্বচ্ছতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।