আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আরেক পরিবার আমার অফিস (রম্য রচনা)



যখন অড্ডায় বসি সবাই যার যার অফিস নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প তুলে ধরে। সবাই কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আফিসকেই পছন্দ করে। কারণ হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৭/৮ ধন্টা সবাই ঘুমায়, বাকী থাকে কয় ঘন্টা ১৭/১৮, আর অফিস যদি ১০/১২ ধন্টা করেন তাহলে বাসায় থকেন কত ঘন্টা? অফিস যাওয়া আসা সময় বাদ দিলে পরিবারের জন্য সময় বরাদ্ধ থাকে ৩ থেকে ৬ ধন্টা। বড় পরিবারতো আফিসই। প্রত্যেক অফিসেই নানা কিসিমের লোকজন পাওয়া যায়।

কিছু আছে মুডি, আছে বোকা কিসিমের কিন্তু কাজ জানে এবং করেও গাঘার মতো, আরো আছে ভালো, আন্তরিক মাই ডিয়ার টাইপের কলিগ, চালাকতো আছেই। আছে আতেল/চামচ টাইপের লোকজন, এদের নিয়েই যত সমস্যা। কিছু আছে ভালো কাজ করে কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা আবার আছে কাজ জানে না কিন্তু চাপাবাজি জানে (মালিকপক্ষ তাদের বেশী পছন্দ করে), আরো আছে ডেসপারেট টাইপের(মালিকপক্ষ তাদেরকেও রাখে এবং ঢোক গিলে)। সবঅফিসের আছে অন্তত ১জন ফুর্তিবাজ টাইপের লোক, নো চিন্তা ডু ফুর্তি। তার সবকথাই মজার মনে হয়।

আরেক প্রকৃতির লোক আছে গিবত বা কুৎসা রটনা না করতে পারলে তার ভাত হজম হয়না(হিন্দি ছবিতে এমন এক লোক দেখেছিলাম যার পেট বড় হয়ে যেত) আমি যত অফিসে কাজ করেছি মালিক এবং আমার বস পেয়েছি ভালো যার জন্য আমার অনেক বড় বড় সমস্যাকে কোন সমস্যা মনে হয়নি। অনেক বিপদে পেয়েছি রক্ষা। আমার বর্তমান প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর আগে যখন জয়েন করি, কিছু ভুল করেছিলাম, আমার এখনো মনে আছে আমার বস তা সামাল দিয়েছেন। আমার বস(জিএম) কাজ ছাড়া কিছুই বুঝেনা, ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘুম ছাড়া সারাক্ষনই শুধু কাজ আর আজ। খুব ভালো মানুষ।

প্যাচের মধ্যে নাই। যা বলেন সব ওপেন, কাউরে ছাড়াননা এমনকি এমডিকেও না। আমার এক কলিগ, বেশ বড় দায়িত্ব পালন করে, অফিসের অর্ধেক সময়ই(শনি ও রোবিবার সারাক্ষনই) চ্যাট করে সবার সামনে, আমার বস ও মালিক পক্ষ ধারনা করেন কাজ করতে করতে শেষ। লাঞ্চ ও পানি পান করারই সময় পায় না। আহারে...... তবে যখন কাজ করেন ভালো ভাবেই করেন।

আমার আরেক কলিগ, বড়ই অদ্ভুদ তার কোন ক্নান্তি বা বোরিং/একঘেয়েমি নাই কমপিউটারে কার্ড খেলার ব্যাপারে, একই খেলা খেলেন বছরের প্রতিদিন। কেমনে যে পারে.......!! প্রতিদিন সকালে তার নিয়মিত কাজ হচ্ছে কানের ময়লা পরিষ্কার করা তা নাহলে কেমনে সে রুমের পিন পড়ার আওয়াজও পায়। তার কাছে পাওয়া যায় অফিসের অনেক গোপন তথ্য। মালিকের এক কাজিন আছে আল্লায় তারে ৪ চোখ ও ১০ কান দিছে। সব অফিসেই মনে হয় এমন একজন থাকে।

এক বড়ভাই আছেন ইন্সপেকশন এর দায়িত্বে। বড়ই ভালোলাগে যখন দেখি ইন্সপেকশন যখনই শেষ, উনার ডিউটি তখনই শেষ। উনি আমার বয়সে অনেক বড় এবং কোরিয়া ট্রেনিংপ্রাপ্ত। উনার শিশুশুলভ আচরণ আমার খুব ভালো লাগে। খুবই সাধারণ একব্যক্তি।

আরেকজন আছে প্রায় ১৮ বছর এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তার অফিসের যাওয়া ও আসার টাইম ঠিকনাই। সকাল ১১:৩০ মিনিটে ফোন করলেই কয় অমুক প্রতিষ্ঠানের সাথে জরুরী মিটিং। কমার্শিয়ালের একজন আছেন, যে কোন কাজের শুরুতেই সে কয় “না” অনেকেই জানেনা তার না রে কেমনে “হা” করতে হয়। এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান যিনি খুব কাজ করেন, দক্ষও বটে, কিন্তু নাম নাই কারণ স্মার্টনেস নেই।

স্মার্টনেস অবশ্য অন্যদিকে আছে। আমাদের অফিসে সর্বদাই ঝাড়ি খাওয়া ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট, মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা তাদের কাজগুলো এমন ভাবে সাজায় ২:৩০ বা ৩ টায় যেন ব্যাংকে যেতে হয়। ব্যাস.......... ব্যাংক টু বাসা। যেদিন তারা ফ্যাক্টরী ও অফিসের জন্য ব্যাংক থেকে সেলারী আনে তাদের মুখ দেখে মনে হয়, হজ কামাই করে এই মাত্র আফিসে আসলো। আমার এক কলিগ প্রতি মাসের ৩ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত তাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে, সেলারী পাওয়ার পরই ঝাড়ি......... আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতার সমকক্ষ সকল প্রতিভার অধিকারী হচ্ছে আমাদের প্রডাকশন ২জন ম্যানেজার।

মোহনীয় কথা বলার দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি, যে কোন বানোয়াট তাদের বক্তব্য আপনার কাছে দিনের মতো সত্য বলে মনে হবে। প্রায় সাড়ে ৪ ধন্টা ডিরেক্টরের সাথে মিটিং করে কয়, সব কথা এই অল্প সময়ের মধ্যে বলতে পারলো না। আগামী পর্বে থাকবে এইচআরডি এবং বায়ার কিউসি নিয়ে লেখা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।