আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসংগঃ প্রাথমিক শিক্ষা

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

প্রসংগঃ প্রাথমিক শিক্ষা জীবনমুখী কর্মমুখী সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। বর্তমান বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে শিক্ষা এবং প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কার দ্বারা। শিক্ষা ছাড়া প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।

ব্যক্তি বা সমাজ উন্নয়নে, ব্যক্তির প্রত্যাশা পূরণে শিক্ষা শক্তিশালী হাতিয়ারের ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা আসলে কি? শিক্ষার উদ্দেশ্যই বা কি? কিভাবে একে সঙ্গায়িত করা যায়? জ্ঞানকে কাজে লাগাবার কৌশল বা শক্তি অর্জনই শিক্ষা। এ শক্তি অর্জন করার জন্যই স্কুল-কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদান করা হয়। এতে পশ্চাৎপদ, অসংগঠিত জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী মানব সম্পদে রূপান্তরিত করা যায়। শিক্ষা বলতে তাই সবসময় কাংখিত পরিবর্তনকে বুঝায়।

যে শিক্ষা সামাজিক পরিবর্তনে সাহায্য করে না তাকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বলা যায় না। শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যক্তি সত্তার বিকাশ সাধন। শিক্ষার শুরু শিশুকাল থেকেই। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা। যদিও শিক্ষার কোনো শেষ নেই।

তবে শিক্ষার শুরুটা যদি ভালোহয়-তাহলে শেষটা আরো বেশী ভালো হতে বাধ্য। শিশুর সমর্থনযোগ্য আচরণের পরিবর্তনকে শিক্ষার উদ্দেশ্য বলা যেতে পারে। এবার দেখা যাক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি কোথায়? শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভূমি হলো প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মূল ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষাদান এবং গ্রহণের সবচে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের শিক্ষা দেয়া। এ স্তরের শিশুকে শিক্ষা দান বড় জটিল ও কঠিন কাজ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগমন প্রত্যেক শিশুর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা এ সময়ে শিশু তার আপন পরিচিত ভুবন থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক ভুবনে প্রবেশ করে। একান্ত প্রিয়জন বাবা-মা-ভাইবোন ছেড়ে দিনের কিছুটা সময় তাকে কাটাতে হয় অপরিচিত জনের সান্নিধ্যে। তখন সেই পরিবেশ পরিজন তার কাছে সহজ স্বাভাবিক না লেগে বিরূপ লাগাই স্বাভাবিক। শিশুর এই মানসিক অবস্থা অনুধাবন করে যিনি তাকে স্বজন প্রিয়জনের মত কাছে টেনে নেন সস্নেহে, তিনি তার শিক্ষাগুরু, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

যাঁর কথা সে সারাজীবন বুকের গভীরে লালন করে এক স্বপ্নীল আবেশে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে হতে হবে যাদুকরের মত, হেমিলিয়নের বংশী বাদকের মত। তিনি হবেন মজার মানুষ। শিশুর বিদ্যালয়ে অবস্থানের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি করবেন স্বপ্নের মুহূর্ত। প্রতিটি দিন করবেন নতুন সূর্য উদয়ের দিন।

তাঁর স্নেহ-মায়া-মমতা, জ্ঞানদানের ধরণ শিশুকে এতটাই মুগ্ধ করবে যে বিদ্যালয় শিশুর কচি মনে ফুটে উঠবে নানা রংযের ফুলের মত। শিশু ভাববে আমাদের স্কুল- স্বপ্নের এক রঙিন প্রজাপতি। তার ভাবনাকে প্রসারিত করে শিক্ষক বুঝিয়ে দেবেন বিদ্যালয় কেবল যেন তেন স্থান নয়। এটা পবিত্র শিক্ষাঙ্গন। এখানে সভ্যতার ফুল ফুটানো হয়- এখানে প্রতি ভোরে নতুন সূর্যোদয়।

এ কাজ শাসনে নয়- করতে হবে স্নেহের আন্তরিকতায়। যিনি যতটা সফলভাবে করতে পারবেন তিনি হবেন ততটা সফল শিক্ষক। শিক্ষকগণই হবেন আদর্শ শিশু-শিক্ষার্থী সৃষ্টির মহান দায়িত্ব পালনের দিশারী। প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি- যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে জাতির প্রত্যাশাও প্রচুর। কেননা তাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর- ফুল ফুটাবার মালি, মালা গাঁথার মালাকার।

জাতিকে নির্মাণ করেন, মেধাকে সৃজন করেন তাঁরা। তাঁদের কর্ম দিয়ে মেধা এবং প্রতিভার স্ফূরণ ঘটান। প্রাথমিক শিক্ষকগণ কি পারছেন সে আশা পূরণ করতে? যদি না পারেন তবে দুর্বলতা কোথায়? খতিয়ে দেখতে হবে অপারগতার মূল কারণ। বিদ্যালয় যতই সাজানো-গুছানো হোক না কেন- শিক্ষক যদি সুশিক্ষক না হন তবে সব প্রচেষ্টাই পানিতে পড়তে বাধ্য। তাই সর্বাগ্রে সচেষ্ট হতে হবে সুশিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ এবং অন্য চাপের মুখে সুশিক্ষক নিয়োগ কষ্টকর দুর্নীতির দুষ্টবলয়ের প্রভাব মুক্ত হয়ে এই পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিয়োগ করতে হবে সত্যিকার যোগ্যতম শিক্ষককে আদর্শ নীতিমালার মাধ্যমে। যোগ্যতম শিক্ষক হবেন প্রজ্ঞাবান, সদালাপী, মিষ্টভাষী, চরিত্রবান সর্বোপরি স্নেহ প্রবণ। শিশুদের ভালবাসার গুণ থাকতে হবে তার। এসব মানবিক গুণাবলী ছাড়াও যোগ্যতম শিক্ষক হবেন ট্রেনিং প্রাপ্ত ব্যক্তি। শিক্ষাদানে যার থাকবে যথাযথ প্রশিক্ষণ।

প্রশিক্ষণ মানুষকে পূর্ণ করে। শিক্ষক যদি হন একজন পূর্ণ মানুষ তা হলে তিনি দিতেও পারবেন পরিপূর্ণ ভাবে। খন্ডিত মানুষ পূর্ণতা দিতে পারেন না। অতি সম্প্রতি দেশে ৩৫ হাজারের বেশী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জানিনা,এই শিক্ষকদের মধ্যে কতজনের আছে শিক্ষকতাকে শুধুই চাকুরী হিসেবে নানিয়ে শিক্ষকতাকে “ব্রত” হিসেবে নেয়ার মানষিকতা।

বৈষম্য কখনই ভাল ফল বয়ে আনতে পারে না। শিক্ষকে শিক্ষকে বৈষম্য সৃষ্টি হোক তা কেউ চাইবেন না। প্রয়োজনে একই ক্যাটাগরির শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষকদের মধ্যে ভেদাভেদের দেয়াল তুললে শিক্ষার মানের হেরফের হবেই। বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা আজও সম্ভব হয়নি।

তাই মানসম্মত শিক্ষার একটি মাপকাঠি ঠিক করা। এর প্রয়োগর ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে দক্ষ শিক্ষক তৈরি/ শিক্ষক নিয়োগ এবং এর জন্য প্রশিক্ষণ, গবেষণা, মূল্যায়ন ও সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। আমি সরেজমিনে দেখেছি- প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক একথা এখনও গ্রামের অনেক অভিভাবক জানে না- জানলেও মানে না। তাই সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠায় না- সন্তান উদ্দেশ্যহীন জীবন যাত্রায় ছন্নছাড়া হয়ে যায়। নিজের জীবন নষ্ট করে তাদের পাল্লায় পড়ে অন্যরাও উচ্ছন্নে যায়।

ছোট থেকে বড় হয়ে সে সন্তান আর সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে পারে না। বখাটে মাস্তান হয়ে পরিবারের, সমাজের তথা দেশের ঘাড়ে বোঝা হয়। এজন্য আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে সব অভিভাবকের উচিত সন্তানকে স্কুলে পাঠানো এবং স্কুল থেকে কোথায় যায় না যায় বা সে কেমন পড়ালেখা করেছে তা শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নেয়া। কোন অবস্থাতেই যেন ছাত্র স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা। সবাইকে মনেপ্রাণে চাইতে হবে সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশে শিক্ষার মান বাড়ুক, বাড়ুক শিক্ষার হার।

অগণিত শিক্ষার্থী সমস্ত অন্ধকার, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ফুলের মত প্রস্ফুটিত হোক। যারা তাদের ফুটিয়ে তুলবেন তারা মনে রাখবেন শুধু লৌকিক আচার, মৌখিক কথা, পুথিগত বাক্যে নয়- শিশু শিক্ষার্থীকে স্নেহে সোহাগে শিক্ষাদান করতে হবে। ছোটছোট শিক্ষার্থী শিশুরা ফুলের মত। তাই শিক্ষকগণের কাছে প্রত্যাশা- এ ফুলকে আন্তরিকতা দিয়ে, চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে সৎ গুণাবলীর ধারক-বাহক করে ফুটিয়ে তুলুন। দেশ ও জাতির কল্যাণ করে আপনার মহান পেশাকে আরো সমুন্নত করুন, নিজে হউন আরো মহৎ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।