"রাজনীতি মানুষের কাজ, ছাগুদের উচিৎ কাঁঠাল পাতা চিবানো, লোকালয় থেকে দূরে গিয়ে!"
অনলাইনে এতোদিন ইতিউতি ঘুরেফিরে যা বুঝলাম, জাতি হিসেবে যুক্তি খন্ডনে মোস্ট ফেলাসিয়াস পথটাই আমাদের পছন্দনীয়। যুক্তি খন্ডনে সাধারণত আমরা যে লজিক্যাল ফেলাসিগুলো ক্রিয়েট করি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্সোনাল এটাক। লেখক ব্যক্তির বিষয়ে নেগেটিভ কিছু জানেন? তবেই হয়েছে! ওইটাই ইস্যু, আলাপ শেষ! ধরুন তারেক জিয়া একটা স্ট্যাটাস দিলো, সেখানে যদি সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চিক্কুর মারে কোন লাভ আছে? সবাই তো হেরে তারেইক্কা চোরাই কইবো! বিষয়টা সহজ, তুই চোর তোর কথা শুনার টাইম নাই। এটাকে 'লুক হুজ টকিং' থিওরীতেও ফেলা যায়। তর্ক বিতর্কে এই ধরনের ফ্লুক বা গিমিক তখনই সৃষ্টি হয় যখন বক্তার ব্যাক্তিগত চর্চার সাথে লেখাটি মিলিয়ে একটা ফলাফল টানার চেষ্টা করা হয়।
একই উদাহরন, তারেক জিয়া চোর সুতরাং ভালো কোন কথা তার পক্ষে বলা সম্ভবপর নয়।
এর পর পরেই বহুল ব্যবহৃত লজিক্যাল ফেলাসি হিসেবে চোখে পড়ে স্কেয়ার ট্যাক্টিক্স! তোর আইডি খেয়ে ফেলবো, স্ট্যাটাস গায়েব করে দেবো, পারলে আসিস! সামনে পেলে শেষ করে দেবো! হিসেব শেষ! প্রবলেম সলভড! অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে আলোচনায় জিততে চাওয়া।
পরবর্তী যে বিষয়টা খুব চোখে পড়ে তা হচ্ছে রেড হেড়িং (Red Herring). এটি মুলত একটি লাল রঙের একটি বিশেষ মাছের নাম। তীব্র গন্ধযুক্ত এই মাছ ব্যবহার করা হয় শিকারী কুকুর টাইপের প্রাণীদের নিবিড় ট্রেনিং এর জন্য। সেখানে এই মাছ এর ডিস্ট্রাকশন ব্যাবহার করা হয় এটা এভোয়েড করে 'কাঙ্ক্ষিত' গন্ধের দিকে প্রানীর মনোযোগ ধরে রাখার কাজে।
সেখান থেকেই যুক্তি খন্ডানোর এই ভুল পদ্ধতির নামটির আগমন। মুলত ছাগুদের এই পদ্ধতি ব্যাবহার করতে দেখা যায়। সোজা বাংলায় যেটাকে আমরা ল্যাদানো বলি! আপনি যদি বলেন সাঈদী রাজাকার, তার বিচার হওয়া দরকার, ওরা বলতে শুরু করবে সাগর-রুনির খুনের ঘটনা! এবং এক সময় গিয়ে প্রিটেন্ড করবে মূল সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে যেখানে আদতে তা হয় নি।
হ্যাঁ, ভূমিকা হিসেবে যথেষ্টর থেকে বেশী বলে ফেললাম, কিন্তু কেন বলছি আজ এসব কথা? এইগুলো খুবই সাবজেকটিভ কপচানি এটা জানি বটে, কিন্তু এগুলো আমরা হয় জানিনা, ভাবিনা না মোটেই মানতে চাই না। We just love the way we do things! কিন্তু সঠিক-বেঠিকের বিচার অবশ্যই করতে হবে আমাদের।
আজ ইত্তেফাকে স্যার মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখাটি পুরোটা পড়লাম। একবার নয়, তিন তিনবার! উনিও উনার পদ্ধতিতে বলে গেছেন পূর্বে আমার বলা কথাগুলোই, অন্য উপায়ে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। মিথ্যে প্রচারে আমরা যেমন নিজেদের দক্ষতা প্রমান করতে পেরেছি তেমনি জাতি হিসেবে নিজেদের অযোগ্যতাও। আর মিথ্যে বলে পার পেয়ে যাওয়ার বিদ্যমান সুযোগ আমাদের সত্যিই করে তুলেছে বেপরোয়া! সংবাদপত্রগুলো, মিডিয়া নিজেদের মতো ভুল ও মেনুপুলেটেড তথ্য ও কোন বিষয়ে যুক্তি প্রধানের ফেলাসিয়াস পথটিই বেছে নিচ্ছে নিয়ত! অবাক করার মতো বিষয় হলো আমরা তা গিলছিও! স্যারের কোট করা একটা অংশ সরাসরি কোট করছি, “এই নাস্তিক জাফর ইকবাল, তোদের মৃত্যুর ঘন্টা বাজছে। হতে পারে আজ রাতই তোদের শেষ রাত।
কাল হয়তো তোরা আর পৃথিবীতে থাকতে পারবি না। কারণ এই জমানার শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদিস আল্লামা আহমদ শফির ডাকে সারা বাংলাদেশের তৌহিদি জনতা মাঠে নেমে এসেছে। সেই সব তৌহিদি জনতা প্রধানমন্ত্রীসহ তোদের সব ধরে ধরে জবাই করে ছাড়বে। আমার আল্লাহকে নিয়ে, বিশ্বনবীকে নিয়ে কট্যুক্তি করার ভয়ংকর পরিণাম কী, তা আগামী কালকেই হাড়ে হাড়ে টের পাবি তোরা। ”
এখানে ব্যাবহার করা হচ্ছে স্কেয়ার ট্যাক্টিক্স, ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ করানো ও এজিউম করে নেয়া যে আমি যুক্তিতে জিতে গেছি।
এটা আমার মতো একজন চুনোপুঁটি করলে সাজে, কারও কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু একটি সংবাদ মাধ্যম? মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কেউ যদি এমন কিছু করেন, বলেন, লিখেন, যার বিস্তার সহস্রাধিক, তার পরিনাম কতো ভয়াবহ হতে পারে ভাবা যায়? লজিক্যাল ফেলাসি আরও একটি ঘটেছে উপরের ছোট্ট হুমকিটিতে, পার্সোনাল এটাক। ব্লগার মানেই শাহবাগী, শাহবাগে গেলেই নাস্তিক, নাস্তিক মানেই বিশাল অপরাধী এবং তাদের খুন করা হালাল হয়ে যাবে! এই ধরনের মিথ্যের বেসাতী খুলে পার পেয়ে যাওয়াটা এই দেশে একটা মামুলী ব্যাপার হয়েই ছিল এতোদিন।
কিন্তু পরিবর্তন আসছে! এবং সেটাই সহ্য হচ্ছে না কারো। ‘অধিকারের’ সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এর অন্যায় ‘দাবী’ এলো ৬১ জন মারা গেছে ৫ই মে’র রাতে! যেখানে মারা গিয়েছে এগারো জন তাও দিনে যখন তারা বেপরোয়া সন্ত্রাস চালিয়ে নগরীর বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে এবং বিশেষভাবে উল্ল্যেখ্য তন্মধ্যে একজন পুলিশও ছিল! বিধায় সংঘর্ষ হবার বিষয়টি সুস্পষ্ট এবং রাষ্ট্রীয় যান-মাল রক্ষায় যা সরকারের দায়িত্বই ছিল! অধিকারের সম্পাদক এর কি অধিকার রয়েছে প্রমান বিহীন একটি অপপ্রচার চালানোর? কী অধিকার রয়েছে আমার-দেশ নামক পত্রিকার(!) কিছু মানুষকে অযথা আক্রমন করে লেখা ছাপানোর? পরিবর্তন এটুকুই হয়েছে, এসবের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ব্লগাররা উলটাপালটা লিখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যারা সোচ্চার হয় তারা স্বপক্ষের কেউ এমনটি করলে স্পিকটি নট তো বটেই আইনি প্রক্রিয়ায়ও দেখান অসন্তোষ! সেলুকাস। এরকম অমানুষদের সমর্থন জানাতে এই অনলাইনেই আছে এরকমের অনেক হিপোক্রেট, নাম নিয়েই বলা যায়, Akm Wahiduzzaman, আসিফ নজরুলের মতো শিক্ষক-ছাগাধিকার কর্মীরাও আছে, To save their asses! এই অনলাইন-অফলাইনের হিপোক্রেট মিথ্যেবাদীদের শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য!
বাংলাদেশে ঘৃণ্য ইতিহাস হয়ে থাকবে এমন আরেকটি মিথ্যেও সহজে সামনে চলে আসে, সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত এই বিতর্কটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে। মিথ্যে বলা উক্ত রমনীর দৈনন্দিন ব্যাপার এটা অবশ্য জানা কথা। তারই মুখনিঃসৃত দুই ধরনের কথায় জানা যায় একবার তিনি আর্টিকেল লেখেন, আরেবার লেখেন না! তিনি হচ্ছেন সেই ড্রামাকুইন যে নির্বাচনের ইশতেহার পাঠ করতে গিয়ে নাকিকান্না কাঁদেন চোর ছেলে সহ তাকে পুনর্বাসন করে দেবার অনুরোধে!
যা হোক, জন্মদিনের বিষয়টা বিতর্কিত বটে, কিন্তু এটাকে মহাবিতর্কিত করতেই পছন্দ করলেন ‘লক্ষ্মীরানী মারমা!’ পাঁচ-পাঁচটা জন্মদিন বদলকে নিতান্তই সাপের খোলস বদলানোর সাথে তুলনা করাই যায়। কিন্তু জাতির পিতা, জাতীয় আবেগের, শোকের দিনকে পরিহাস করতে সেই জন্মদিন জন্মদিন খেলা যখন গিয়ে ঠেকে তখন বলতেই হয়, আপনি নির্মম! ভারতকে আমরা গালি দেই, সুযোগ পেলে আমিও দিয়ে নেই, সেই ভারত তাদের স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠানের ধারেকাছে যায় নি বাংলাদেশে অবস্থিত এমব্যাসিতে অথচ এই দেশের মানুষ হয়ে উনি কি করে পারেন? উনার বাস্তব জন্মদিন হলেও তো ৬৯ বছর বয়সে এসে বিধবা একটা মহিলার গোলাপী শাড়ী খিঁচে এতো এতো পুরুষের মাঝে গিয়ে কেক কেটে আমোদ করা মানায় না এই দিনে! আর সেখানে উনি দুইবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ লজ্জাবোধটুকুও ধারন করতে ব্যর্থ হলেন? রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়নতা চরমে উঠলেও একজনের এমন নেক্কারজনক-নির্মম আচরণ করা শোভা পায় না।
ধরুন জিয়ার মৃত্যু দিবসে সারা দেশে আঁতকা ঘোষনা করে দেয়া হলো এখন থেকে এই দিনে সারাদেশে আনন্দ উদযাপন হবে, কেমন লাগবে উনার? অবশ্য আমার ধারনা উনার কিছুই মনে হবে না, জিয়ার ‘খুনে’ সাহায্য করার পরের তথাকথিত যে সামান্য বিদ্যমান ‘আদর্শ’ তা-ও কোনভাবে উনাকে স্পর্শ করতে সমর্থ নয় এটা আমি হলফ করেই বলতে পারি। (আমি অবশ্য ফালু বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না, লোকে আবার আমাকে খারাপ বলবে তখন), তারেক কোকো সুপুত্রদ্বয়ই আমার কথার সমর্থনে সর্বোত্তম উদাহরণ হতে পারে।
আবার ফিরছি পুরনো কথাতে, মিথ্যাকে হালাল করতে পার্সোনাল এটাক, স্কেয়ার ট্যাকটিকস এসব টেনে লাভ নেই। মিথ্যেকে মিথ্যে হিসেবেই এডমিট করতে শিখুন! এডমিট করতে শিখুন খালেদা জিয়া শেখ মুজিবের মৃত্যুতে মিথ্যা উল্লাস করতেই পালন করেন এই সো কলড জন্মদিন! ফ্যালাসিয়াস ট্যাকটিক্স দিয়ে এই তর্ক জেতার যে চেষ্টা চলছে তা অত্যান্ত হাস্যকর!
আর তর্কগুলো পুরোনো ও ইতোমধ্যেই মীমাংসা হয়ে যাওয়া তর্ক! ১৯৯১ এর পরে থেকে উনি এই উদযাপন ও জন্মদিনের খোলস পড়েছেন। তাই মিথ্যাকে বর্জন করুণ সর্বত্র! গ্রহন করুণ সত্যকে।
উল্টাপাল্টা যুক্তি দিয়ে নিজেদের বিতর্কিত করা ছাড়া আর কোন কিছুই অর্জন করা হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।