মিনারেল ওয়াটার নামে আমরা যা খাচ্ছি তা কি আদৌ বিশুদ্ধ? পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারে জারে বিক্রি করা এসব পানির ৯৯ শতাংশই বিশুদ্ধ নয়, দূষিত।
একশ্রেণীর অসত্ ব্যবসায়ী এ পানির রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। ওয়াসা ও নলকূপের সাধারণ পানি সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ না করেই জারে ও বোতলে ভরে তারা বিক্রি করছেন। প্রতি জার পানি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৭০ টাকায় এবং টি স্টল ও হোটেলে প্রতি গ্লাস বিক্রি হয় ১ টাকায়। এমন ভেজাল পানি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে মিনারেল ওয়াটার নামে।
গতকাল মতিঝিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বোতলজাত পানির ২৪ কোম্পানিকে জরিমানা করে হাতেনাতে সেটাই প্রমাণ করলেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে মতিঝিলে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা ভেজালবিরোধী এ অভিযানে ২৭টি কোম্পানির পানি ও কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৪টি কোম্পানির পানিতে দূষণ এবং কাগজপত্রে অসঙ্গতি পাওয়ায় তাদের ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বাজেয়াপ্ত করা হয় ৪০০ জার দূষিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ পানি। অপরদিকে ৩টি কোম্পানির পানির মান ও কাগজপত্র সঠিক থাকায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন জানান, এসব পানির সবটাই দূষিত এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বিএসটিআই কর্মকর্তা এবং র্যাব-পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণে মতিঝিলের নটরডেম কলেজ এলাকায় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান। অভিযানকে কেন্দ্র করে কয়েকটি স্পটে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ স্থান দিয়ে চলাচলরত বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার বহনকারী ৩১টি ভ্যান ও গাড়িকে থামিয়ে পানির গুণমান পরীক্ষা করা হয়। একইসঙ্গে ওইসব গাড়িতে থাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ৪০ জন কর্মচারীকেও আটকে রাখা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ৩১টি গাড়িতে থাকা পানির জার পরীক্ষা এবং আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেসব কোম্পানির গাড়ি আটকানো হয়েছে তার মধ্যে আছে আলপাইন, নোয়াখালি ফুড প্রডাক্টস, রাজিব ফ্রেশ ড্রিঙ্ক, ইউনিট ওয়াটার, জান কোম্পানি, থাই এট কর্নার, রুবেল, এ ওয়ান প্রভৃতি।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭টি কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়। পানি মানসম্পন্ন না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ইউনিট ওয়াটারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ড, জান কোম্পানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাস, থাই এট কর্নারকে ৫০ হাজার অনাদায়ে ২ মাস, চিটাগাং রোডের রুবেলকে ২০ হাজার অনাদায়ে ১ মাস, রাজিব এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার অনাদায়ে ২ মাস, এ ওয়ানকে ৪০ হাজার অনাদায়ে ২ মাস, নোয়াখালী ফুডকে ৩০ হাজার অনাদায়ে ১ মাস এবং এক্সিম কোম্পানিকে ৫০ হাজার টাকা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, সর্বশেষ বেলা ২টা পর্যন্ত ২৮টি কোম্পানির পানি ও কাগজপত্র পরীক্ষার পর ২৫টিতেই গরমিল পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ৮টি কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়েছে। বাকিদের কাছ থেকে আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানান, পানির গুণমান পরীক্ষা করা হয় সঙ্গে থাকা ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিতে। এখানে পানির দুই ধরনের পরীক্ষা করা হয়। এগুলো হলো টোটাল ডিজল্ভ সলিড (টিডিএস) ও পিএইচ।
পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব পদার্থ থাকে তার গুণমান পরীক্ষার নাম টিডিএস। আর পানির ক্ষার বা অম্লত্বের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয় পিএইচ পদ্ধতিতে।
বিএসটিআই পরিদর্শক আবু সাঈদ জানান, অভিযানে পানি ও বোতলের পরিচ্ছন্নতা, উত্পাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখসহ অন্যান্য বিষয়ও পরীক্ষা করা হয়।
বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক কেএম হানিফ বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা গেছে, একশ্রেণীর বোতলজাত পানি ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে অননুমোদিত ও অনির্ধারিত স্থান থেকে অনিরাপদ পানি বোতলজাত করে তা সরবরাহ করছে, কিন্তু দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় বিএসটিআই ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।