আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোরখা বনাম শাড়ী/থ্রিপিস

এক অসাম্প্রদায়িক উজ্জল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি

গতমাসে হাইকোর্টে ১টা রায় দেয়া হয়েছে,বোরখা পড়তে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। অবশ্যই এটা বেশিরভাগ মানুষ মেনে নিয়েছে এবং নেবে বলেই এই রায়। কারন আমাদের দেশটা মুসলীম প্রধান হলেও মডারেট। ধর্মীয় অন্ধত্বের চেয়ে এখানে অসাম্প্রদায়ীক চেতনা,মুক্ত গনত্ন্ত্র চর্চা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রাধান্য পায়। এবং এটা ই ইতিবাচক,যেদিন এর অন্যথায় হবে,বুঝতে হবে দেশ পশ্চাদ দিকে ধাবমান।

যাইহোক,রায় প্রচারীত হবার সাথে সাথে কিছু মানুষ বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। এটা হবেই। গনতান্ত্রিক দেশে বিরোধী মত জানানোর উপায় থাকে এবং তা স্বাগত জানানো হয়। তাদের মতানুযায়ী সম্পূর্ন দক্ষীনপন্থী(মৌলবাদী/তালেবান) কোন সরকার ব্যবস্থা থাকলেতো কেউ মুখ ই খুলতে পারত না। হাইকোর্ট রায়ের সেই সব বিরোধী মতাদর্শীদের প্রশ্নের উত্তর দিতেই আজ আমার এই কলমধরা।

১ ব্যক্তি তার ব্লগে লিখেছেন,"বোরখা পরা কি অপরাধ ?This is nothing but a security,this is nothing but a morality .....it is a crisis of Virtues and Values. We must choose to prosper as a society, not just as individuals ?" তার প্রশ্নের উত্তরগুলো পর্যায়ক্রমে দিচ্ছি..... বোরখা পরা কি অপরাধ ? -না অবশ্যই না। সবার ই ১টা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আছে। তাহলে বোরখা না পড়া কী অপরাধ?একই উত্তর হবে। অবশ্যই না। (ধর্মীয় আলোকে দেখা যাবে না।

কারন,ধর্মীয় দৃস্টিভংগী কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। অতএব,যে বোরখা পড়তে চায় না তাকে ধর্মীয় দোহাই দেয়াটাই ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী ১টা অপরাধমূলক কাজ। ) This is nothing but a security,this is nothing but a morality ..... -নিরাপত্তার জন্য সমাজে আইন আছে,আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আছে নৈতিকতা বোধ আর সাহস। নিরাপত্তা কী জন্য?পুরুষের কামনার দৃস্টি এড়ানোর জন্য?এখেত্রে,কে দোষী?পুরুষটি,না নারী?অবশ্যই পুরুষ। তবে নারীটিকেই কেন পর্দা করতে বলা হবে,নারীকেই শুধু কেন উদ্যোগী হতে হবে?নারীর তো কোন দোষ নেই।

যেহেতু পুরুষটির দৃস্টিভংগীতে সমস্যা,অতএব তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাকে একঘরে করা হোক,নাহয় তার চোখে পর্দা লাগাতে বলা হোক। আর morality র কথা বলছেন?.....১টা মেয়েকে ছোট বেলা থেকে নিজের নিরাপত্তার জন্য বোরকা পরতে অনুশীলন করানোর চেয়ে হাজার গুন গুরূত্বপূর্ন ১টা ছেলেকে এই শিক্ষা যথাযথভাবে দেয়া ,১জন নারীকে কতটা শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে। তাহলে সমাজে এত অনাচার থাকবেনা। অপরাধ নিয়ন্ত্রনের জন্য আইন ই যথেস্ট হবে।

আর নারীকে নিরাপত্তার জন্য বোরকা পড়তে হবেনা। তবে ১টা কথা,যখন বোরকা বা পর্দা প্রথা চালু হয় তখন মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তা অপরিহার্য ছিল। কারন তখন ছিল আইআমে জাহেলিয়াত। কিন্তু পৃথিবীতে দেশে দেশে এখন গনতন্ত্র আছে। সমাজে এখোনো বিশৃংখলা আছে সত্য,তবে আইআমে জাহেলিয়াত পরিস্থিতি নয়।

আমরা আশাবাদী। কালের সাথে সবই বদলায়। এই প্রথাও বদলাতে হবে। কিন্তু এই বদল টা সবাই মেনে নিতে পারে না . it is a crisis of Virtues and Values..... Virtue এর সাথে পোষাকের সম্পর্ক বরাবরই কম। তবে শালীনতা র ১টা ব্যাপার আছে।

পোশাক শালীন হলে Virtue বজায় থাকে। আসলে আচরনটাই হল Virtue। এখন ১টা শিবিরের ছেলে যদি টুপি আর পান্জাবী পড়েও খিস্তি করে আর রগ কেটে, কুপিয়ে বেড়ায়, ধর্মীয় পোষাক পরেছে বলেই কী তার Virtue বজায় থাকলো?নিশ্চয়ই না। সে যদি সুন্দর আচরণ করত,তাহলেই সেটা Virtue হত। সে শার্ট প্যন্ট পরলেও তাতে ক্ষতি কিচ্ছু হত না।

Virtue ঠিক ই থাকত। আর Values এর কথা বলছেন? আমাদের শিকর কী?মূল্যবোধ কী??আমরা বাংগালী। বাংলা আমাদের ভাষা,বাংলা আমাদের জীবন,বাংগালী আমাদের সংস্কৃতি। শুধু ধর্মের খাতিরে আমরা ভীনদেশি(আরবী) সংস্কৃতি মেনে নিতে পারি না। তবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি যা ধর্মের খাতিরে না, গাজোয়ারী মনোভাবের কারনে নতুন প্রজন্ম মেনে নিচ্ছে,তাও আমাদের এই বাংগালী সংস্কৃতির অস্ত্র দিয়ে ই রুখতে হবে।

সেখানে ও আমরা কোন ছাড় দেবো না। আর আমার মনে হয়, বাংগালীরা এত অশালীন বা অসুন্দর পোশাক পড়ে না,যার চেয়ে বোরকা শালীন হবে। থ্রিপিছ বা শাড়ী অনেক মার্জিত এবং শালীন পোশাক। এগুলোর উপর আস্থা হারানোর কোন কারন দেখি না। We must choose to prosper as a society, not just as individuals ?" মানুষ পাশ্চাত্য সংস্কৃতিমুখি হওয়ায় যে অসামন্জস্যতা(অশালীন পোষাক পড়া,অনুকরণ)সমাজে তৈরী হয়েছে তা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার জন্য সামাজিক আন্দোলন হিসেবে ধর্মকে নয় আমাদের শিকর-বাংগালী সংস্কৃতিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে হবে।

অন্যকিছু নয়। মনে রাখবেন,ধর্মের চেয়ে সংস্কৃতির শক্তি অনেক বেশি। যদি তা ই না হত,তাহলে ভিন্য ভিন্য ধর্মের মানুষদের জন্য ভিন্য ভিন্য দেশ থাকতো। আর পৃথিবীতে এত দেশ হওয়ার কোন কারণ ছিল না। দেশ হত মাত্র ৪টা বা যে কয়টা ধর্ম সে কয়টা।

তাই আমাদের বেশি ধার্মিক হওয়ার চেয়ে বেশি সংস্কৃতিবান হওয়া জরুরি। আমরা আশাবাদীও । আমরা পারবো। বাংগালী বা বাংলাদেশী,মুসলমান- হিন্দু-খৃস্টান-বৌদ্ধ যে যা ই হোকনা কেন শিকরে একদিন ফিরবেই।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।