সৈয়দ মুতনু
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের সুরমা নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে ও বাংলালিংক মোবাইল কোম্পানির আর্থিক সাপোর্টে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে লালিত একটি সৌখিন প্রতিযোগিতা। আগেকার দিনে বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ার প্রাক্কালে এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। গায়ের মানুষজন চাঁদা তুলে অবসর বিনোদনের জন্য এরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন।
তখন আনন্দও ভোগ করতেন মানুষ প্রাণ খুলে।
আর বর্তমানে এসব প্রতিযোগিতায় চলে এসেছে ব্যবসায়ীক হিসাব নিকাশ। এ ধরনের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে কিভাবে কত টাকা বেনিফিট করা যায় সেই চিন্তা থাকে উদ্যোক্তাদের মাথায়। আর স্পন্সর কোম্পানিগুলোর চিন্তা থাকে যেমন করেই হউক বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটিয়ে তাদের পণ্যের প্রসার লাভ। আর এতে যদি কারো প্রাণ যায় যাক।
তাদের যেন কিছু যায় আসেনা। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। সুরমা নদীতে বাংলালিংক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে এসে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই কালে একটি নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন বিপুল সংখ্যক মানুষ। গত তিনদিনে তাদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক কৃতি ফুটবলারসহ দিনমজুর খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে।
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে শুধু এই একটি নৌকা নয়। আরো অসংখ্য নৌকা নদীতে ঘুরেছে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে। কিন্তু তাদের কোন নিরাপত্তা ছিলনা। কেউ তাদের বারনও করেনি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে। মাইকে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন ঘোষণাও শোনা যায়নি।
ফলে ৩৮ জন যাত্রী নিয়ে প্রবল ঢেউয়ের মধ্যে ডুবে যায় ডিঙি নৌকাটি। সাথে সাথে সাঁতার শেখা অনেকে সাঁতরে কূলে উঠতে পারলেও অনেকেই প্রবল স্রোতে পড়ে তলিয়ে যান অতল গহব্বরে। পরে তাদের মধ্য থেকে একেক করে ভেসে উঠে সাতটি লাশ। আরো লাশ উঠার সম্ভাবনা এড়িয়ে দেওয়া যায়না। সাতটি পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশা অন্ধকার।
স্বজন হারানো আর্তনাদ এখন এসব ঘরে ঘরে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই সাতটি মৃত্যুর জন্য দায়ী কারা। সচেতনতার দৃষ্টিতে যদি চোখ পড়ে তবে দায়ী করতে হবে উদ্যোক্তাদের। আবার দায়ী করতে হবে স্পন্সরকারীদের এবং সবশেষ দায়ী হচ্ছে নৌকার মাঝি এবং যাত্রীরা। সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় কেন।
যে প্রতিযোগিতা মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।