ভারতে বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ নিয়ে প্রায়শই অভিযোগ করা হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা ভিসার মেয়াদ কিছুটা বাড়িয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই পাঁচ বছরের মেয়াদে ভিসা পেয়ে থাকেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৩০ দিনেরও কম সময়ের জন্য ভিসা পেয়ে থাকেন। নবায়নের সুযোগ থাকলেও ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কড়াকড়ি একটু বেশি। এই ভিসা নীতির কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে বিনিয়োগের পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই শেষ হচ্ছে ভিসার মেয়াদ। ফিরতে হচ্ছে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। আবার বাংলাদেশে বিদেশি সাংবাদিকদের সফরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকলেও ভিসা নীতির কারণে সাংবাদিক প্রবেশে এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীকেও সম্প্রতি সিএনএনের এক সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসানীতি নিয়ে উদাসীনতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের ভিসা নীতিমালায় 'টি' (ভ্রমণ বা পর্যটক) ও 'ই' (চাকরি) ক্যাটাগরির ভিসায় সর্বাধিক সংখ্যক বিদেশি ভ্রমণে আসেন। 'টি' ক্যাটাগরির ভিসায় একজন বিদেশি ভ্রমণ বা পর্যটনের জন্য সর্বোচ্চ দুই মাসের জন্য ভিসা পেয়ে থাকেন। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে আবার প্রয়োজন হয় অনুকূল পুলিশ প্রতিবেদনের। 'ই' ভিসা শ্রেণী অনুযায়ী বিদেশিদের এ দেশে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রকল্পে চাকরির সুযোগ দেওয়া আছে। শর্তানুযায়ী, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিনিয়োগ বোর্ড বা বেপজাকে প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। এ ছাড়া নিয়োগপত্র ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের যথার্থতা পরীক্ষা করে ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাল্টিপল ভিসা সুবিধাসহ সর্বোচ্চ তিন মাসের ভিসা প্রদান করতে পারে। এ ভিসার মেয়াদ বাড়ানোও যাবে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সুপারিশ, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও নিরাপত্তা ছাড়পত্রের ভিত্তিতে বহু ভ্রমণসহ কার্যানুমতির পূর্ণকালীন মেয়াদে ভিসা বাড়ানো যাবে। দ্বিতীয় দফায় ভিসার মেয়াদ বাড়াতে কার্যানুমতি পূর্ণকালীন মেয়াদে বা তিন বছর, যা কম হবে সে সময়ের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যাবে। এনজিওতে প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ তিন মাসের ও পরে এনজিও ব্যুরোর কার্যানুমতি ও নিরাপত্তা ছাড়পত্রের ভিত্তিতে কার্যানুমতির মেয়াদকাল পর্যন্ত ভিসা পাবেন সংশ্লিষ্ট বিদেশি। নিয়মানুসারে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে হয়। নীতি অনুযায়ী কোনো বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশের পর ভিসা শ্রেণী পরিবর্তন করতে পারবেন না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পুরো বিষয়টি দেশের ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদারকি করে থাকে। তবে নীতির বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সাংবাদিকদের বাংলাদেশে ভিসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির অনুকরণেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এর পরও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নীতিমালা দুই মাস আগে আরেক দফা সহজ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নীতিমালা যেমন পর্যালোচনা করা হয়েছে, তেমনি সার্বিক ভিসা নীতিও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ আমি শুধু অন্য দেশের ভিসার মেয়াদ কম বলে উচ্চবাচ্য করব কিন্তু নিজের দেশের ভিসার পদ্ধতি মান্ধাতা আমলের করে রাখব তা হয় না। তিনি বলেন, বিশ্বের দেশগুলো দ্রুত পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসছে। এখন পরস্পরের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। এ পরিস্থিতিতে আমাদের ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এ ছাড়া উন্নত দেশের নাগরিকরা যেহেতু বাংলাদেশে বসবাস করবে না, তাই তাদের ভিসার মেয়াদ কিছুটা বাড়াতে সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা মাদক চক্র থেকে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।