আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

ভালো ..তবে কালো

বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ভূমিকম্প হচ্ছে, এর শক্তির মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে ভারতীয় প্লেট এবং বার্মা প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণে বাংলাদেশের ভূমিতে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। গত প্রায় ২৫০ বছরের মধ্যে আমাদের এখানে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ভূমিকম্পের মাধ্যমে এ শক্তি যে কোনো সময় বের হয়ে আসবে।

অর্থাত্ এদেশে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প পাওনা হয়ে আছে। আজ হোক কাল হোক, বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবেই। তাদের আশঙ্কা, ঢাকা শহরে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৩০ ভাগ ভবন ভেঙে পড়তে পারে এবং মারা যেতে পারে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। রাতের বেলায় ভূমিকম্প হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। এ সত্যকে মাথায় রেখেই আমাদের উচিত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি যাতে কম হয় সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া।

দৈনিক আমার দেশ-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ন আখতার বলেন, বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প আমাদের পাওনা হয়ে আছে। আজ হোক আর কাল হোক একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আমাদের এখানে হবেই। তিনি বলেন, যমুনা এবং মেঘনা অববাহিকার পূর্বের অঞ্চল ইন্ডিয়ান প্লেট এবং পশ্চিম অংশ বার্মা প্লেটের অংশ। এই দুই প্লেটের পরস্পরমুখী সংঘর্ষে যে কোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। গত ৯ সেপ্টেম্বর আমাদের এখানে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার উত্পত্তি কুমিল্লার মতলব এলাকায়।

এ ভূমিকম্প নিয়ে আবহাওয়া অফিস যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। গত ৯ তারিখ রাত ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১২ তারিখ সকাল ৮টা পর্যন্ত ওই এলাকায় ৯টি ভূমিকম্প হয়েছে। তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মা প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণে বাংলাদেশের ভূমি প্রতিবছর ৬ মিলিমিটার হারে সংকুচিত হচ্ছে। অর্থাত্ প্রতি হাজার বছরে সংকুচিত হচ্ছে ৬ মিটার। এই সংকোচনের ফলে আমাদের এখানকার ভূমিতে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে।

বড় ধরনের ভূমিকম্পের মাধ্যমে এ শক্তি যে কোনো সময় বের হয়ে আসবে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই সত্যকে মাথায় রেখেই আমাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে হাইতিতে ৭ মাত্রার এবং গত ৩ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। প্রায় একই মাত্রার ভূমিকম্প হওয়া সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডে কোনো প্রাণহানি হয়নি। কিন্তু হাইতিতে মারা গেছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

এর কারণ, হাইতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং নগর পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ। ভূমিকম্পের ব্যাপারে সরকারের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো, নগর পরিকল্পিত এবং ভূমিকম্পের ব্যাপারে সরকারের প্রস্তুতি ছিল। ফলে সেখানে কোনো প্রাণহানি হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেসব ভূমিকম্প হচ্ছে তার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে যে কোনো সময় এ এলাকায় একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। যেহেতু আমরা ভূমিকম্প ঠেকাতে পারবো না তাই আমাদের উচিত যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সে ব্যবস্থা নেয়া। এজন্য আমাদের উচিত ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। বিশিষ্ট ভূকম্পন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, সাধারণত ২৫০ বছর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়।

১৭৬২ সালে আমাদের এখানে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই হিসাবে আমাদের এখানে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। তবে কবে হবে এটা বলা মুশকিল। কারণ, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া যায় না। তিনি বলেন, এ প্রেক্ষিতে আমাদের উচিত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা।

কিন্তু আমাদের এখানে এটা মানা হচ্ছে না। গত বছর দুইশ’ বিল্ডিং জরিপ করে দেখা গেছে পঞ্চাশ শতাংশের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। যদিও এটা করতে প্রতি স্কয়ার ফিটে মাত্র ১০ টাকা বেশি লাগে। ঢাকা শহরে প্রায় ৪ লাখ বিল্ডিং আছে। এগুলোর অবস্থা জরিপ করা হয়নি।

সিটি করপোরেশন এবং রাজউক এগুলোর অবস্থা জরিপ করতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.