মানুষ ৩ রকম, ১। আগুনে পুড়ে যায়, ২। আগুনে গলে যায়, ৩। আগুনে ঋদ্ধ হয়
আপু মেয়েটা বরাবর ছায়া স্বভাবের ওর উপস্থিতি আলাদা ভাবে টের পাওয়া খুব শক্ত। সারাক্ষনই মনে হবে ও আসেপাশে আছে, এত শান্ত এত চুপচাপ মনেই হয় না ওর আলাদা কোন অস্থিত্ব আছে।
হঠাৎ হঠাৎ ভ্রম হয়, এই তো বসে আছে সোফার কোণ দিয়ে হয়তো ঘরের কোন এক পাশে টেলিফোন কানে নিচু গলায় কথা বলছে। রাতে ঘুম ভাঙ্গলে হঠাৎ রাগ হয় এখনও বিছানায় আসে নি? বসে বসে নামাজ পড়ছে, ইসস!! আল্লাহ’র কাছে ওর কত যে চাইবার জিনিশ আছে! রাত ৩টা বেজে যায় আর ওর চাওয়া শেষ হয় না?
ক্রেয়নগুলো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কবে শেষ হয়েছে দেখাও হয় নি। খুব ছোট বেলায় কতগুলো আবছা রঙআলা ক্রেয়ন কিনতাম ৩টাকা করে, কিছুদিন ধরে আবার সে মাধ্যমে ফিরে যেতে মন চাইছে। রঙগুলো দেখলে ভীষন রাগ হত, স্পস্ট করে কিছু আঁকা যায় না!
আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে, বাহ! এই তো ভাল! সব দেখার কি দরকার? কিছু আলীক, কিছু বাস্তব, কিছু কল্পনা……….রঙের মাঝে রঙ……স্বচ্ছ…….যেন গভীর সমুদ্রের তলার শেষ বালির কণাটা দেখা যায়, যেন নষ্ট পৃথিবীর কালোছায়া যে দৃষ্টি আটকে না দেয়, যেন দৃষ্টি পাখা মেলে, যেন ৮ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চির স্কেচ খাতাটা দিকে তাকালে সারা পৃথিবী সে দৃষ্টিতে ধরা দেয়………..কোথাও চোখ বাধা না পায়, আমার মন যেন আর কোথায় শিকড় ফেলার সময় না পায়….উড়ে যায়, বহু দূর উড়ে যায়…………সব পাথির ঘরে ফিরতে হয় না।
ফেরা ঠিক না।
ঈদের মূল আকর্ষন হচ্ছে জামা। আমার জামা যেন কারও মত না হয়। কিছুতেই না, কিছুতেই না, কিছুতেই না। আমি অনন্যা, অদ্বিতীয়া, অতুলনীয়া।
আমার জামা আমি ডিজাইন করি। তুলনা করি কারটা সেরা? আপুরটা না আমারটা? অবশ্যই আমারটা। আমি ওরটা সেরা মানলে তো? ব্লক করব তাও নিজে হাতে। কাঠের পুতি, হাজার রঙের চুমকি, লেস, পুতি, কড়ি একটা একটা করে করে সংগ্রহ কত যে হয়েছে! ডাইস গুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, নিজেকে বুঝাই আমার সময়ের বড় টানাটানি। কত্ত জামা পরে আছে! সেগুলোই পরা হয় না আবার নতুন করে জামা বানানোর কি দরকার! জানি সে মনটা আজ বড় হয়ে গেছে, জামার চেয়ে poverty elimination করা বেশি দরকার, মার্কেটিং রুলস বুঝা বেশি দরকার অথবা রবিন্দ্রনাথের উর্বশী নিয়ে রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করার মত অপ্রয়োজনীয় কাজের নিচে পরতে পরতে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই কড়ি, পুতি লেস!
হাড়ের মাঝে শীত ঢুকে গেছে, প্রচন্ড গরমেও শীতল একটা অনুভূতি হচ্ছে।
বারবার ভ্রম হচ্ছে ধুলাকে কুয়াশা মনে হয়, বৃষ্টি ভেজা দূর্বা দেখে শিশির ভেজা ভোরের অনুভূতি হয়। কতক্ষণ ধরে হাটছি এ পথে? এটা কোন নদী? পানিগুলো টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে কেন? আলাদা আলাদা রঙ, টুকরো গুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলে, ঝগড়া করে একে অন্যকে ভালবাসে হাত ধরে, গান গায়, যেমন আমরা ছোট বেলায় খেলতাম! সবুজ ক্রেয়নটা গোলাপীটার বন্ধু, আর নীলটা ২ জনেরই প্রানের সখী। গোলাপী সুন্দরী বলে ওর ভারী দেমাগ! নীল তো খুব লক্ষী মেয়ে ঠিক আপুর মত! সবুজটা কেমন স্বার্থপর দেখ, একা একা সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেল! গোলাপীকে একবার বললও না? নীল গোলাপীকে বুঝায়, চল আমরা বনভোজন বনভোজন খেলি।
বনের মাঝে খেলার ছলে ওরা হারিয়ে যায়। আলোর পথ ধরেই তো হাঁটাছিল, ঘন বনের মাঝে পথ গুলিয়ে গেল কিভাবে? আলো কি তবে কুহেলিকা ছিল? সবুজ বাড়ি ফিরে আসে যথাসময়ে।
হলুদ ক্রেয়নটা দাদী। কিন্তু সে তো জানে না গোলাপি আর নীল কোথায় গিয়েছে! সবুজ অনেক কাঁদে অনেক কাঁদে। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলে, দুনিয়া ভাসিয়ে ফেলে। ভাল হয়েছে! যাবি আর? এখন বসে বসে কাঁদ। ফিরব না তো, আর কোন দিন ফিরব না।
এসব অং বং ভাবতে ভাবতে নীল আর গোলাপী ঘন বনে হারিয়েও সুখ পায়!
ভাবতে ভাবতে ওরা সত্যি বনের পথে হারিয়ে যায়। মানুষের বন, পাপী পৃথিবীর নিগুর আধার বন, এখানে পথ একবার হারালে খুঁজে পাবার আর কোন সুযোগ নাই। যথাসময়ে সবুজ ফিরে আসে, চিরজীবনের স্বার্থপর সবুজ। নীল গোলাপীর খোঁজও নেয় না! উলটা দুই শয়তাননি নাই দেখে খুশি হয়! আহ! আজ থেকে সব কিছুতে তার নিরঙ্কুশ অধিকার!
পানির টুকরাগুলো বিজ বিজ আওয়াজ তুলে মৌমাছি হয়ে যায়, পানিগূলো হালকা সোনালী রঙের। কোথা থেকে আসলো? আমার তো এই রঙের ক্রেয়ন নাই! কি সুন্দর একটা ঢলঢলে ভাব! ইস! আমি এত সুন্দর করে ছবি আঁকতে পারি না! তুমি কেমন করে গান করে হে গুনি আমি অবাক হয়ে শুনি, শুধু শুনি…………
“মধু খাইবেন নি? মাত্র চাক ভাঙ্গিয়েসি।
” গরম গরম অমৃত জ্বিব থেকে কন্ঠ পর্যন্ত আগুনের নহর হয়ে যায়! ওদের বাড়ি ছিল, এটা ওদের বাড়ি। কেন ভাঙ্গল? কেন ভাঙ্গল? ওরা এখন কই থাকবে? কই থাকবে ওরা? ওরা মরে যাবে। ওরা মরে যাবে, ওরা পাগল হয়ে যাবে, ওরা আগুন জালিয়ে দেবে, সব বিষ হয়ে যাবে, বড় বড় ঢেউ। পানি পানির মাঝে আগুন, জ্বমে না শুধু পুড়িয়ে দেয়, নিশ্চুপে পুড়িয়ে কুঁচকে দেয়, কালো করে দেয় সব………….গরম ভীষন গরম, ভীষন গরম।
মেশিনে দূর্বোধ্য চিহ্নের পালস রেট হিসাব করে নিরাশভাবে মাথা নাড়ে ডাক্তার, “ও ড্রাগ নিয়েছে!” প্রতিবাদ করে নার্স “রক্তে কোন ড্রাগ পাওয়া যায় নি স্যার আর এই পান্ডব বর্জিত এলাকায় সে ড্রাগ কই পাবে?” চোখ সরু করে রিপোর্টার দিকে একবার আর একবার ১৯ বছরের নিষ্পাপ চেহারাটার দিকে তাকায়।
অসম্ভব একটা খেয়াল আসে মনে। তাহলে কি সে ব্রেনকে নিজে থেকে সেইভাবে স্টিমুলেট করতে পারে? ওর ড্রাগ লাগে না? তা কিভাবে সম্ভব? ও তো এডিক্টেট ছিলও না কোনদিন, বিষন্নতার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়ছিল। যদিও পরিবারের লোকজনের সন্দেহ ছিল ও ড্রাগ নেয় আর সব সময় রঙ নিয়ে কি যেন উলটো পালটা কি যেন বলে। অন্য কেউ হলে আথারিটি এই সব আজগুবি কথা কানে তুলত না ভর্তিও নিত না, ২ সপ্তাহ রিসোর্ট ভ্রমন করিয়ে ছেড়ে দিত, প্রচন্ড প্রতাপশালী পরিবারের প্রতাপের মুখে ভর্তি করা হয়েছে।
কানের পাশ দিয়ে চিকন একটা ঘামের রেখা নেমে যায়।
এত কড়া ডোজের অষুধের পরেও ও কিভাবে জেগে আছে? ভীষণ ফ্যাকাসে মুখটায় জ্বলজ্বলে করছে এক জোড়া চোখ, যেন দেহ ভেদ করে দেখছে আত্মা বা পরমাত্মার গভীর থেকে গভীর নিগুর থেকে নিগুর সত্যকে যেন ও দেখতে পাচ্ছে।
আদতে ও কিছুই দেখছে না। ওর চোখ শুধু নিজের ছায়াটা দেখার চেষ্টা করছে। যত দেখতে চাচ্ছে তত দৃষ্টি আরো বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে…….দূর থেকে দূরে। অনেক অনেক দূরে, পাখির মত।
সেখানে সন্ধ্যা নামে। দিগন্তে সূর্য মিলিয়ে যাবার আগেই সন্ধ্যা নামে। সব পাখি ঘরে ফিরে, শুধু সে ফিরে না…….. সব পাখির ঘরে ফিরতে হয় না।
(***কালকে সকাল ৭টায় ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি, ২০ দিনের মত ট্যুর। কমেন্টের জবাব ফিরে এসে দিব)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।