অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার চর্চা না করে শিষ্টাচার মেনে চলতে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে ব্রিফিংয়ে আগামী নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সংলাপ না হলে সংঘাতের আশঙ্কা ও নির্বাচনের আগের সময়গুলোতে সুশীল সমাজের কাজের স্বাধীনতা নিয়ে নিজেদের উৎকণ্ঠার কথা জানান বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা সরকারের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারের ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষভাবে বলেন, কোনো কোনো কূটনীতিক আদিলের মামলায় আদালতে উপস্থিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে আমরা জেনেছি।
এটা অপ্রয়োজনীয়, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ ও বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার শামিল। এ ধরনের অনধিকার চর্চা থেকে বিরত থেকে কূটনীতিকদের শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সরকার বিদেশিদের অবশ্যই জবাব দেবে। পাশাপাশি আমরা মানবাধিকার কর্মী ও তাদের কর্মকাণ্ডে সব ধরনের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদেরও জনজীবনে যাতে নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘি্নত না হয়, সে জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে।
জানা যায়, সমসাময়িক বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানানোর জন্য সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ে একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এতে ইউএনডিপি, কানাডা, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ভারত, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ প্রায় ৩৫ রাষ্ট্রের মিশনগুলো তাদের ডেপুটি হাইকমিশনার বা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে এতে পাঠিয়েছিল। সব মিলিয়ে ৪৪ মিশনের ৬৪ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বেশির ভাগ দেশের মিশনপ্রধানরা ছিলেন না।
কারণ কয়েকজন রয়েছেন ছুটিতে আর কয়েকজন রয়েছেন তাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে। অবশ্য কয়েকজন ইচ্ছা করেই ব্রিফিং এড়িয়ে গেছেন। কারণ এই ব্রিফিংয়ের প্রথম নির্ধারিত সময় ছিল রবিবার। সেদিন খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিসে ব্রিফিংয়ের কথা জানানো হয়েছিল। আবার স্বল্পসময় পর তা বাতিল করে পর দিন আয়োজনের কথা বলা হয়।
পেছানোর কারণ হিসেবে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা না হলেও প্রধানমন্ত্রীর জরুরি সংবাদ সম্মেলনের কারণে তা পেছানো হয় বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু বাতিলের ঘোষণা পাওয়ার আগেই সেদিন পেঁৗছে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন কূটনীতিক। সোমবার ব্রিফিংয়ে এই সমন্বয়হীনতার কারণে ভোগান্তির কথা উঠে আসে। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে ও বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় কূটনৈতিক পত্র দিয়ে আদিলের গ্রেফতারের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং সরকারি প্রেসনোটে এ বিষয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।
পরে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে মানবাধিকার কর্মকর্তা গ্রেফতার, নির্বাচন-সংলাপ ও গার্মেন্ট শিল্পের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের উত্তর দেন দীপু মনি। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, আদিলুর রহমান খানকে যেভাবে আটক করা হয়েছে, তাতে সুশীল সমাজের স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলে সরকার মনে করে কি না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করে নিরাপত্তা বিনষ্ট করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কেউই আইনের ঊধের্্ব নন।
ফলে এই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ যৌক্তিক হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি কূটনীতিকদের বলেছেন, সরকার আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করতে চায়নি। কারণ, মানবাধিকারের প্রশ্নে সরকার বিভিন্ন সময়ে অধিকারের সহায়তা নিয়েছে। কিন্তু হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে তিনি যে মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাতে সরকার তাকে গ্রেফতারে বাধ্য হয়েছে। তার প্রতিবেদনের ফলে সমাজে সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
এ ব্যাপারে তাদের কাছে নিহতের তালিকাসহ বিস্তারিত তথ্য সরকার চেয়েছে। কিন্তু অধিকার এসব তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে আদিলকে গ্রেফতারে উপযুক্ত প্রক্রিয়া গ্রহণ এবং তার আইন ভঙ্গের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না_ জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দারা তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি পন্থা অনুসারে গ্রেফতার করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতেই আদিলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে নির্যাতনের আশঙ্কা অমূলক।
অনুষ্ঠানে এক কূটনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে জানতে চান, নির্বাচন নিয়ে সংলাপের পথ বন্ধ হয়ে গেছে কি না। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলেননি; বরং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনার দরজা সব সময়ই খোলা আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। ফলে সংবিধানের আওতার মধ্যে যতটা নমনীয় হওয়া সম্ভব, তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। শেষ আরেকটি প্রশ্নের জবাবে গার্মেন্ট কর্মীদের শ্রমমান উন্নয়নে নতুন আইন প্রণয়ন, বিধিমালা, প্রয়োজনীয় নিয়োগের কথা জানিয়ে সরকারের আন্তরিকতার কথা জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।