সংঘাত অনিবার্য নয়, সংঘাত চলমান। ২২-২৩ বছর ধরে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি অবস্থা বিরাজ করছে। এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২ হাজার ৫১৯ জন প্রাণ দিয়েছেন। বিএনপি আহূত তিন দিনের হরতালেও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগের হরতালের সময়ও এ রকম মৃত্যু হয়েছে।
একজনের মৃত্যুই তো কষ্টকর। দিনে দিনে সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখছি না। এরশাদ আমল থেকে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের আলোচনা শুরু হয়েছে। একবারই একটা আলোচনা হয়েছিল।
সম্প্রতি দুই নেত্রীর ৩৭ মিনিটের টেলিফোন সংলাপও পরস্পরের উত্তেজনা, হিংসা-বিদ্বেষে পর্যবসিত হয়েছে। সমঝোতায় তারা যেতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। রবিবার চ্যানেল আইয়ের টকশো 'আজকের সংবাদপত্র'-এ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এসব কথা বলেন। মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় তিনি বলেন, গত ২২ বছরে হরতাল হয়েছে ৪৫৬ দিন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হরতাল দিয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ।
এই মৃত্যু, সহিংসতা, হরতালসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক দিনের হরতালে ক্ষতি হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। ৪৫৬ দিনের হরতালকে এর সঙ্গে যুক্ত করলে টাকার হিসাব বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক ভুলত্রুটি করলেও সবচেয়ে কম রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে তাদের সময়ে। তারা নানা নীতিহীন কাজকর্ম করেছে।
তবে ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড এবং একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তারা দিতে পেরেছিল। ওই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এবং বিএনপি বিপুলভাবে পরাজিত হয়েছে। সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের চেষ্টায় কোনো সমঝোতা হবে না। আজ পর্যন্ত হয়নি। '৯৬ সালে স্যার লিনিয়ান এখানে এক মাসের বেশি সময় ছিলেন।
কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জিমি কার্টার ঢাকায় এসেছিলেন। কিছু হয়নি। সর্বশেষ আমরা দেখলাম জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন দুই নেত্রীকে ফোন করলেন। আমরা নিশ্চিত তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে কথা বলেছেন।
কোনো কিছুই হয়নি। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে আগামী দিনগুলোতে কী হবে। ২২-২৩ বছরে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে কখনো কোনো আলোচনা, সমঝোতা, মীমাংসা হয়নি। দুই দলের নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক সমালোচনামূলক ও কখনো কখনো মনে হয় চরম বিদ্বেষমূলক অবস্থানে তারা আছেন। হয়তো কারণ আছে।
যার অনেক কিছু আমরা জানি না। যেটুকু শুনি, বুঝি, চোখে দেখি তাতে বাস্তবে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, বিগত ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে অন্তত ৩৫টি জেলায় যে ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এর পুনরাবৃত্তি হবে খুবই দুঃখজনক। এখানে সরকারের দায়িত্ব অধিক। প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর সঙ্গে যেভাবে আলোচনায় যাওয়ার কথা ছিল সেভাবে তারা যায়নি।
সবাই বলছে শেষ বিচারে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে যাবে, সে আলামতই আমরা দেখছি। অন্যদিকে যদি বলি বিএনপিই নির্বাচনে যেতে চায় না। হয়তো বেগম জিয়া মনে করেন '৯৬ ও ২০০৭ সালে আমাকে আওয়ামী লীগ শাস্তি দিয়েছে। আমি এবার পাল্টা শাস্তি দেব। সংলাপের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে ৩৭ মিনিটের যে টেলি আলোচনা হলো তা বাংলাদেশসহ বিশ্বের পত্রপত্রিকায় একটা কৌতুককর ঘটনা বলে তারা বর্ণনা করছে।
বেগম জিয়ার কথায় আক্রমণের সুরটা বেশি ছিল। কিন্তু এর পরে দুই দলের পক্ষ থেকে নতুন করে আলোচনা, সমঝোতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না। যদিও সৈয়দ আশরাফ হরতাল প্রত্যাহার করে আলোচনা হতে পারে বলেছেন। কিন্তু এ কথায় সারবস্তু কিছু আছে বলে আমি দেখি না। প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, এ সরকারের প্রতি মানুষের বিপুল আশা।
আমরা ২০০৮-এ জরিপ করেছি। চলতি বছর তিনবার করে ফেলেছি। ২০০৯-১০ সালে এ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ছিল। তাদের অধিকাংশ কাজে মানুষ সমর্থন দিয়েছে। সে অবস্থাটা আজকে নেই।
সর্বশেষ জরিপে দেখলাম যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ এ সরকারের কয়েকটি কাজে এখনো মানুষের সমর্থন থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় মানুষের মনোভাব সরকারের বিরুদ্ধে। সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহসা কোনো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠার মতো অবস্থা বাস্তবে নেই। আর সামরিক তৃতীয় শক্তি কখনোই বাংলাদেশে ভালো ফল বয়ে আনেনি। এটা আসা উচিতও নয়। আসার সম্ভাবনাও আমি দেখি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।