তোমাদের এয়ারক্রাফ্টটা দিগন্তরেখার আড়ালে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমার কিছুই মনে হয়নি। তারপর হঠাৎ করেই একটা বিশাল শুন্যতা চেপে ধরল আমাকে। এই পুরো ফোবস উপগ্রহে এখন আমি একা। তবু মনে ভরসা যেকোন সময় তোমাদের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করতে পারব।
মাথার উপর এখন মঙ্গলের পূর্নিমা।
ডিমোস কে অবশ্য দেখা যাচ্ছেনা। ভারি পোষাক সত্ত্বেও হালকাই লাগছে নিজেকে। লাফিয়ে এগোলাম আমার তাবুটার দিকে। এই কদিন এখানেই থাকতে হবে। মনিটরগুলোর সামনে বসলাম।
আমাদের রোবটগুলো ফটো পাঠানো শুরু করেছে। আমি নির্দেশ দেওয়া মাত্র ওরা স্যাম্পল কালেক্ট করবে।
ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। ঘুম ভেঙ্গে হঠাৎ খুব মন খারাপ হয়ে গেল। নিঃসঙ্গ, বিষন্ন একটা অনুভূতি।
মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রোবটগুলো ফটো পাঠিয়ে চলেছে। কিন্তু কি যেনো একটা অন্য রকম! মনটা খচখচ করে উঠল। রাডারে রোবটগলোর অবস্থান দেখাচ্ছে। ওরা কি ঠিক পথে চলছে? ওদের দূরত্বটা কি কমে আসছে? মনে হচ্ছে ওরা কোথায় যেন যাচ্ছে। কি অদ্ভুত কথা !!!
তুমি তো জানো রোবটগুলোকে একটা কাজের জন্যই প্রোগ্রাম করা, আর তা হল, একেঅপরের সমদূরত্বে ঘুরে ঘুরে ফটো তুলে পাঠানো আর সিগনাল পেলে নমুনা সংগ্রহ করা।
ওরা তো একেঅপরের কাছাকাছি আসার কথা নয়!!
আমি ঢোক গিলে শুকনো গলাটা ভেজানোর চেষ্টা করলাম। রাডারে রোবটগুলোর গতিপথ দেখে গন্তব্য আন্দাজ করার চেষ্টা করছি। ওরা যেভাবে কাছাকছি চলে আসছে তাতে মনে হচ্ছে জায়গাটা বেশি দূরে নেই। মনিটরের দিকে তাকালাম। গত পনের মিনিটে ওরা কোন নতুন ছবি পাঠায়নি।
অথচ ওদের প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা ছবি পাঠানোর কথা।
তুমি থাকলে মনে সাহস পেতাম। যাই হোক, রোবটগুলো এখন ফোবসের তৃতীয় বৃহত্তম খাদটার কাছে জড়ো হচ্ছে। মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে।
নিশ্বাস টানলাম জোরে জোরে।
তোমাদের কাছে একটা রেডিও সিগনাল পাঠালাম। পোষাক পরলাম ধীরে ধীরে। আমার আজ কোন তাড়া নেই। তাবু থেকে বেরিয়ে হেটেই এগোলাম খাদটার দিকে।
সমভূমিটা পেরিয়ে খাদে নামতেই দূর থেকে আমাদের রোবটগুলোকে চোখে পড়ল।
ওগুলো এখন গোল হয়ে লোহার বস্তার মত দাড়িয়ে আছে। বৃত্তের মাঝখানে প্রায় ৫০ মিটার মত জায়গা কেমন মসৃণ মনে হচ্ছে।
আরো কাছে এগোলাম। জিনিসটা এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। গোলএকটা বড় পাথর নাকি ঘর, মনে হচ্ছে মাটি ফুড়ে বের হয়ে এসেছে।
দেওয়ালগুলো মসৃণ, ধাতব কিনা বুঝতে পারছিনা। কোন ফাকফোকর চোখে পড়ছেনা। কেজানে, কত হাজার বছরের মহাজাগতিক ধুলো জমে আছে ওটার উপর। কেমন যেন অবাস্তব মনে হল ওটার অস্তিত্ব।
আলো কমে আসছে।
মঙ্গল ডুবছে দিগন্তের আড়ালে। খেয়াল করলাম, অদ্ভুত অবয়বটা থেকে হালকা সবুজ আলো বের হচ্ছে। এটার এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল অরিজিন নিয়ে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই।
পিছন ফিরলাম। আমাকে তাবুতে ফিরতে হবে।
উপরে দেখতে পাচ্ছি তোমাদের এয়ার ক্রাফট। আমার সিগনাল পেয়েছো তা হলে?
মঙ্গল ডুবে গেছে তাতে সমস্যা নেই। দূরের আকাশে সূর্য উঠছে। নতুন দিন শুরু হবে এখনই। আমাদের হাতে এখন অনেক কাজ, অনেক কিছু এখনো জানতে বাকী।
চলো, শুরু করা যাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।