কত অজানারে!
তিন পেয়ে ক্যামেরা স্টান্ডের এক পা দিয়ে জোরে জোরে বালিতে খোঁচা দিচ্চে যুঁথী। এটা হল রাগের বহিপ্রকাশ। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। আর কান্নাও পাচ্ছে। কিন্তু কাঁদা যাবে না।
সামনে আকবর মিয়া বসে আছে। আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইফতেখার গেছে চায়ের ফ্লাক্স আনতে। কিন্তু কোথায় যে গেল? আর আসার নাম নেই। বেচারাকে আবার চা আনতে এত দূরে না না পাঠালেও হত।
কিন্তু চা খুবই ইম্পর্টেন্ট! আজকের এই মিশনের জন্য। মিশনের নাম ‘মিশন স্বপ্ন পুরন’! চা ছাড়া এই মিশন পুরা ফেইল!!
আজ যুথীর বার্থডে। সেই উপলক্ষে এই মিশন হাতে নিয়েছে ইফতেখার। আজকে তার সবচেয়ে আরাধ্য স্বপ্ন টা পুরন করা হবে! এই ব্যপারটা নিয়ে বিয়ের আগে যুঁথী আর ইফতেখার আলোচনা করেছে ঘন্টার পর ঘন্টা। স্বপ্নটা সিম্পিল।
একটু জোরে বাতাস বইতে থাকবে। তবুও যুঁথী আর তার বর নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে চলে যাবে। নৌকা ড্রাইভ করবে তার বর। তখন বাতাস আরো বেড়ে যাবে। যুথী বলবে, “এই ইফতি!! খুব ভয় করছে! প্লিজ ফিরে চল।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ...। ” ইফতি বলবে, “এত ভয় পাচ্ছো কেন? তোমার তো এখন মাঝ নদীতে চা খাবার কথা!” তখন যুথী ভয়ে ভয়ে ইফতির কাছে এসে বসবে। আর কাপা হাতে চায়ের কাপে চা ঢালতে থাকবে। স্বপ্নের শুধু এই পর্যন্তই ইফতেখার কে বলেছে যুথী। এর পরে ইফতেখারের টুক করে একটা কাজ করার কথা!!! সেইটা বলা হয়নি।
যুথীর দেখার ইচ্ছা ইফতি সেটা করে কিনা। কিন্তু ইফতি যে বকলু। মনে হয়না তার মাথায় এসব আসবে। সেক্ষেত্রে যুথীই কিছু একটা করে ফেলবে!
প্লান এরকমই ঠিক ঠাক। স্বপ্ন টা যূঁথী দেখেছে জেগে জেগে।
ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন পুরন করতে হয়না। কিন্তু জেগে জেগে দেখা স্বপ্ন কিছু কিছু পুরন করা উচিৎ! স্বপ্ন পুরনের সব দায়িত্ব ইফতির। গত তিন দিন যাবত ইফতেখার আকবর মিয়ার কাছে ট্রেইনিং নিচ্ছে। নৌকা চালানোর। শিখেও ফেলেছে বোধ হয়।
আজকেই সেই মহান দিন। ইফতেখারেরও প্রস্তুতির সীমা নেই। সিম্পিল একটা কাজের জন্য সে হাজার খানেক ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে এসেছে। ক্যামেরা, ক্যামেরার স্টান্ড, একটা আই পড, চায়ের কাপ, একটা প্লায়ারস আরো হাজারটা জিনিশ!!! ক্যামেরার স্টান্ড আর প্লায়ারস কেন নিয়ে এসেছে বুঝা যাচ্ছেনা। আসলে চায়ের কাপটা ছাড়া আর কিছুরই তো দরকার ছিলনা! ব্যাপার না।
সব দায়িত্ব আজ ইফতির। ও যা পারে করুক। খালি মিশন সাকসেসফুল হলেই হল!
কিন্তু নৌকায় ঊঠার পর যুথী দেখে আকবর মাঝিও নৌকায় উঠে বসে আছে!! ব্যাপার কি? ইফতি আমতা আমতা করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, “ইয়ে... মানে চায়ের ফ্লাক্স টা ভুল করে আনা হয়নাই!! নৌকায় ছোট কাঠের চুলা আছে। আকবর মিয়া চুলায় চা বানাবে। তার চা খুবই সুস্বাদু।
আমি দুই দিন খেয়ে দেখেছি!” আকবর মিয়া বলে, “হ চাচীআম্মা। আমার চা খুবই টেস!!” এই বুড়া মাঝি কেন জানি যুথী কে চাচীআম্মা, চাচীজান বলে ডাকছে!! বুড়ার মুখে চাচীআম্মা শুনতে এতক্ষন খারাপ লাগছিলনা। কিন্তু এইবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। যুঁথী রীতিমত ঝগড়া ঝাটি করে ইফতিকে আবার ফ্লাক্স আনতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ইস্ তার বরটা ক্যান যে এত বকলু!!!
তবে এখন খুব খারাপ লাগছে যুঁথীর।
কান্না পাচ্ছে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আকবর মিয়া বলছে, “চাচিআম্মা, আপনে মন খারাপ কইরেন না। আপনেরে একটা গান শুনাই? ভাটিয়ালি গান। আমার গানের গলা ভাল।
” চাচীআম্মা শুনে যুথীর মেজাজ আরো খারাপ হয়েগেছে! কেবলি মাঝিকে ধমক দিয়ে কিছু বলতে যাবে। অমনি ফোনটা বেজে উঠলো!! ফোন করেছে শারমিন। এই মেয়ে মহা ফাজিল। আজে বাজে কথা বলবে। অন্যসময় হলে ফোন কেটেদিত যুথী।
কিন্তু এখন এই আকবর মাঝির ভাটিয়ালির চেয়ে শারমিনের কল টাই ভালো মনে হচ্ছে।
শারমিন বক বক করে যাচ্ছে, “কিরে প্রেম কুমারী। তোরা নৌকায় উঠিসনি এখনো!!! আমি তো ভাবলাম নৌকায় শুয়ে মাঝ নদীতে মেকিং লাভ চলতেছে! হি হি হি” বলেই কেমন জেন গা জ্বালানো খচ্চর মার্কা হাসি দিচ্ছে। “শোণ নৌকায় যখন উঠিসই নি। আগেই সাবধান করে দেই।
নৌকা কিন্তু হেভি দুলে টুলে উঠবে। পরে দেখা যাবে জামাই বাবাজী টুপুস করে পানিতে পড়ে গেছে। তবে সন্ধ্যা হোক তার পর যাস। বুঝলি তো ? অন্ধকারটা দরকার আছে!! হি হি হি” আবার সেই হাসিটা দিচ্ছে। ফোন কেটে দিয়েছে যুঁথী।
তার মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে। এখন রাগে অন্ধকার দেখছে। তাই ক্যামেরা স্টান্ড (ট্রাইপড)এর তিনটা ঠ্যাং দিয়েই চরের বালিতে জোরে জোরে খোঁচা মারছে সে।
যুথীর এই রুদ্র মুর্তি দেখে আকবর মিয়া মনে হয় ভয় পেয়েছে। একটু দূরে সরে গিয়ে হাটা হাটি করছে।
ইফতেখার ফিরে এসেছে। চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে এসেছে। কিন্তু চা আনতে খেয়াল নেই! মেজাজ খারাপের লিমিট ক্রস করতে যাচ্ছে। যুথী মনে হয় এইবার পাগল হয়ে যাবে! ধেত!! তার জামাইটা পুরা গাব। ইফতি নার্ভাস ভঙ্গিতে বলেছে সে দুই মিনিটেই চা বানিয়ে ফেলবে।
এখন ফু টু দিয়ে আকবর মিয়ার চুলাটা জালানোর আপ্রান চেষ্টা করছে সে। দৌড়া দৌড়িতে আর টেনশনে ঘেমে নেয়ে একাকার! তার মধ্যে আবার চুলার ধোয়া চোখের মধ্যে চলে যাচ্ছে!! কিন্তু চুলা জ্বলছে না। করুন অবস্থা!
তার বোকা জামাইটার কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগছে যুঁথীর। আবার কেন যেন খুব ভালোও লাগছে! খুব!!! এখন আর কান্না আটকে রাখা যাচ্ছেনা। সে ইফতি কে ধাক্কা দিয়ে চুলার কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
চুলায় ফুঁ দিয়ে এমন একটা ভাব করছে, যেন চুলার ধোঁয়া গিয়ে চোখে পানি চলে এসেছে।
চুলাটা জ্বলে গেছে। পানি গরম হচ্ছে। ইফতেখার একটু দূরে হাটা হাটি করছে। নার্ভাস ভঙ্গিতে।
একটা সিগারেটও ধরিয়েছে। ইফতির সিগারেট খাওয়া নিষেধ। এই নিষেধ জারী করেছে যুঁথী। তবে মাঝে মাঝে বিশেষ উপলক্ষে সিগারেট ধরানো যাবে। কিন্তু তাদের প্রথম বাবুটা হবার আগেই এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে পুরাপুরি।
বাবু যেন না দেখে তার বাবা ধুমপায়ী। তবে আজ বেচারার উপর দিয়ে খুব ঝড় গেছে। আহারে, থাক! এখন সিগারেট খাবার অপরাধ মাফ! আকবর মাঝি ভাটিয়ালী গান শুরু করেছে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে মনে হচ্ছে যুথীর। কিন্তু চোখের পানি বন্ধ হচ্ছেনা।
ফোনটা আবার বাজতে শুরু করেছে। এবারো শারমিন। নতুন কোন টিপ্স দেবে মনে হয়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।