আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরশাদ বিষণ্ন রওশন পদত্যাগ চেয়েছিলেন

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকের আলোচনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। বৈঠকে এরশাদের প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় এবং এরশাদের কথিত কন্যা নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের মৌসুমীসহ নানা বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ। রবিবার প্রেসিডিয়াম বৈঠকে রওশনের এ বক্তব্য বাইরে ছড়িয়ে পড়লে পার্টিতে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। রাজধানী থেকে শুরু করে দলের তৃণমূলে এখন আলোচনার ঝড় বইছে। ঘটনার জের ধরে সোমবার রওশন পার্টি থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রেসিডিয়ামের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রওশন এরশাদের ওই বক্তব্য অনেকটা হুবহু মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ায় পার্টি চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিষণ্ন, ক্ষুব্ধ। আবার বৈঠকের পর দিন সোমবার সকালে এরশাদের স্টাফরা রওশন এরশাদের প্রকাশিত সংবাদ পার্টি চেয়ারম্যানকে দেখিয়ে কান ভারী করেন। তারা বলেন, স্যার, বৈঠকে ম্যাডামের এমন বক্তব্য দেওয়া সঠিক হয়নি। এতে পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। স্টাফদের এমন কথায় তাৎক্ষণিকভাবে রওশনকে ফোন করে এরশাদ। জানতে চান, কীভাবে প্রেসিডিয়ামের আলোচনা পত্র-পত্রিকায় গেল। এ সময় এরশাদ স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেন। প্রতি উত্তরে রওশনও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান এরশাদকে। একপর্যায়ে সুনীল ও মৌসুমী প্রসঙ্গ নিয়ে চলে কথা কাটাকাটি। রওশন জানিয়ে দেন, সুনীল ও মৌসুমী থাকলে তিনি আর পার্টি করবেন না। দল থেকে তাদের বাদ দিতেও বলেন। তারপরও না হলে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের হুমকি দেন তিনি। অন্যদিকে দলের একটি অংশ এ ইস্যুটি কাজে লাগিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদের বিরুদ্ধে এরশাদের কান ভারী করার চেষ্টা করছেন। চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। জানা যায়, গত রবিবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে পার্টির বিভিন্ন অনিয়ম ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সবার সামনেই এরশাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ। প্রসঙ্গক্রমে সুনীল শুভ রায় ও কথিত পালিত কন্যা দাবিদার অনন্যা হোসেন মৌসুমীর বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় ওঠে আসে। তিনি বৈঠকে বলেন, '৩৯ ধারায় বহিষ্কার করতে হলে শোকজ করো, প্রেসিডিয়ামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। গাড়িতে উঠতে চেয়েছিলেন এ জন্য চট্টগ্রামের শামসুল আলম মাস্টারকে বহিষ্কার করতে হবে কেন। পার্টির জন্য এসব নেতা-কর্মীর অনেক শ্রম আছে। খালেদা জিয়ার গাড়িতে অনেকেই উঠতে চায়। তাই বলে কাউকে বহিষ্কার করা হয় না। গোলাম মসীহর আসনে মৌসুমী অনন্যাকে কীভাবে প্রার্থী করা হচ্ছে? এ সময় নারায়ণগঞ্জের মৌসুমী অনন্যাকে এরশাদের পালিত কন্যা হিসেবেও অস্বীকার করেন রওশন। তিনি বলেন, সে কীভাবে পালিত কন্যা হিসেবে প্রচার করে? এত বড় দুঃসাহস পায় কোত্থেকে? এরশাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বক্তব্য দেওয়ার সময় তোমার আশপাশে নেতারা অযথা ভিড় করে। সুনীল শুভ রায় নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে। তুমি ৯ বছরের রাষ্ট্রপতি ও ৮ বছর সেনাপ্রধান ছিলে। এসব কর্মকাণ্ডে আমরা অপমানিত হই। গণহারে নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া বন্ধের আহ্বানও জানান রওশন। তিনি বলেন, বিত্তশালীদের কাছ থেকে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুদান নাও। চাঁদা নিচ্ছ আবার তা বোর্ডে টাঙিয়ে রেখেছ। এসব কর্মকাণ্ডে জাতীয় পার্টির ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানান সাবেক এই ফার্স্ট লেডি।

রওশনের বরাত দিয়ে পরের দিন গণমাধ্যমে এসব খবর ফাঁস হলে দলের কেউ কেউ বিষয়টি এরশাদের নজরে আনেন। সোমবার সকালে বারিধারার বাসায় এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন সুনীল শুভ রায়। এ সময় জিয়াউদ্দিন বাবলু ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও এরশাদের বাসায় যান। সুনীল ও মৌসুমী ইস্যুতে এরশাদ-রওশনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় পার্টির শিবিরে। সোমবার দুপুরে দলের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের সঙ্গে গুলশানের বাসায় গিয়ে দেখা করেন। নেতারা এ সময় তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে চেষ্টা করেন। এদিকে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে গতকাল দুপুরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি ওই দিনের ঘটনায় বিপর্যস্ত। কথা বলার সময় দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতিকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। বেগম রওশন এরশাদের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমি হাওলাদার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সুনীল শুভ রায় জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় বিকৃতভাবে ম্যাডামের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। বৈঠকে কাউকে শাসানো বা ধমকানোর কোনো কথা ছিল না। আমার ব্যাপারে ম্যাডাম বলেছেন, রাজনৈতিক সচিব হিসেবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দিতে চাইলে আগেই যেন দিয়ে দিই। তিনি মার্জিত ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুনীল শুভ রায় ও মৌসুমীর বিরুদ্ধে দলের কিছু নেতা রওশন এরশাদের কাছে নালিশ করেন। দুজনের কর্মকাণ্ডেও অসন্তুষ্ট ছিলেন রওশন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার মৌসুমী জাতীয় পার্টির এখন কেন্দ্রীয় সদস্য। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের পালিত কন্যা দাবি করে নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম করছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সোনারগাঁ জাতীয় পার্টির কমিটি ভেঙে দিয়ে নিজেই আহ্বায়কের পদ দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বনিবনা না হওয়ায় নিজের মনোনীত সেক্রেটারিকে সম্প্রতি বাদ দেন মৌসুমী। এরশাদের ভয় দেখিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি এবং বিভিন্ন কমিটি ভাঙাগড়ার কাজও করেন তিনি। এরশাদের পালিত কন্যা আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ইত্যাদি পরিচয় দেওয়ার কারণে রওশন ক্ষুব্ধ হন। রবিবার দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এরশাদকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন রওশন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.