সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১.
ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মত। শৈশবে একটা সময় কেটেছে কলোনিতে, প্রতি শুক্রবার বাজারে যেতাম বাবার কাধে চড়ে।
বাজারে গিয়েই প্রথমে আমাকে কিনে দিতেন আমের আচারের বয়াম, সারা বাজার বাবার কাধে চড়ে ঐটা শেষ করাই ছিলো আমার একমাত্র কাজ। মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় ইস! যদি আবার সেই দিন ফিরে পেতাম! আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয় শৈশবের কোন একদিনে ফিরে যেতে আমি নির্দিধ্বায় বলবো, “শুধু একটি ঘন্টার জন্য বাবার কাধে চড়ে বাজারে যেতে দাও”।
বাবার বয়স হয়েছে, আমিও আর সেই ছোটটি নেই তার কাধেও আর চড়তে পারি না। এখন কাধে চড়া বাদ দিয়ে যেটা হয় সেটা হলো আলোচনা, নানান বিষয়ে আলোচনা। দেশ, জাতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, ব্যাবসা আরো কত বিষয়াদি।
তবে সবচেয়ে বেশি হয় রাজনীতি নিয়ে, আর যাই হোক বাঙ্গালির ঐতিহ্য বলে কথা! একসময় সক্রিয় বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন; এখনো এমএম আকাশ, মুতিয়া চৌধুরি, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম এদের নিয়ে আলোচনা করার সময় চোখেমুখে অন্য রকম এক দ্যুতি ঝলমল করে উঠে। অনেক বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে থাকতে এখন উনি ঘোর আওয়ামীলীগার হয়ে উঠেছেন। অবশ্য এখন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে প্রাক্তন বামদেরই জয় জয়কার।
আমি আবার এই বিষয়ে খুবই লিবারেল। কোনটারই অন্ধভক্ত নই আবার অকারন চুলকানিও নেই।
সেই কারনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাবার সাথে এটা সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক লেগেই থাকত। যেমন কিছু দিন আগে উনি বললেন, “শেখ হাসিনা একা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলোকে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছে। হাসিনা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দলগুলো অবস্থা আরও খারাপ হতো”
মনে মনে ভাবলাম এইবার বাগে পেয়েছি; বললাম, “এটা কেমন কথা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি এতই ঠুনকো যে একে কোন এক ব্যক্তির পিছনে আশ্রয় নিতে হবে? এটাত বিশাল এক ব্যার্থতা! বরং, এখন শেখ হাসিনার উচিত দলের অন্য কাউকে সামনে নিয়ে আসা আর এটা জয় না হলে সবচেয়ে ভালো হয়। ”
দেখি বাবার মুখটা কেমন পানশে হয়ে গেছে।
এইবার সুযোগ বুঝে মোক্ষম আঘাতটা করলাম, “আর, আমার মতে একমাত্র শেখ মুজিবের মেয়ে হওয়া ছাড়া তার প্রাইমিনিষ্টার হওয়ার আর কোন যোগ্যতা নেই।
আর মানুষ এখনো আওয়ামীলীগকে ভোট দেয় নিরুপায় হয়ে। আমার কথাই ধর, তোমার কি মনে হয় আমি বর্তমান আওয়ামীলীগ বা হাসিনা কে ভোট দেই? না। আমি ভোট দেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে; শেখ মুজিবকে। এখানে হাসিনার কোন কৃতিত্ব নেই, বরং ওর লাগামহীন কথা আর ফালতু ব্যক্তিত্বের কারনে অনেক ভোট কমে যায় আওয়ামীলীগের”
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো বাবা, বলার মত কিছু পাচ্ছিলো ও না।
২.
খাবার টেবিলে, টিভি দেখার সময় বা যেকোন আড্ডায় বাবার সাথে প্রায়ই বিতর্ক হচ্ছে ইদানিং, আর আওয়ামীলীগ/যুবলীগ/ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকান্ডের ফলে আমার তোপের সামনে দাড়াতেই পারছে না ইদানিং।
তিন চারদিন আগে টিভি দেখতে দেখতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বেকায়দা ভাবে। আমি উঠে গিয়ে আলত করে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলাম, “আব্বু? আব্বু?” নিজের অজান্তেই আমি একটু কেঁপে উঠলাম! ইস বাবাকে ছুঁয়ে দেখিনা কত বছর! শুধু দুই ঈদের কুলাকুলি হয়ে, এই পর্যন্তই! আর না ডেকে কিছুক্ষণ বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, কি যে ভালো লাগছিলো! ভাবছিলাম, ছোট বেলায় কতদিন সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছি, আর বাবা আলতো করে আমাকে বিছানায় নিয়ে যেতেন, হয়ত নিজের শ্বাসও বন্ধ করে রাখতেন যাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে না যায়! মায়ের পায়ের আওয়াজ পেলাম, রান্নাঘর থেকে এদিকে আসছে; তাড়াতাড়ি বাবার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম, মা দেখে ফেললে লজ্বায় পড়তে হবে।
একটু ঝাকি দিয়ে ডাকলাম, “আব্বু? আব্বু? উঠ, বিছানায় যাও”
ধরমর করে উঠে, একটা লাজুক হাসি দিয়ে বললেন, “আরে, ঘুমাই নি ত! জেগেই ছিলাম; যাস্ট চোখটা লেগে এসেছিলো”
বললাম, “বুঝেছি, যাও বিছানায় ঘুমাতে যাও”
-------------
কিছুক্ষণ চুপমেরে বসে ছিলাম, খুব খারাপ লাগছিলো, ইস! কত কষ্টই না বাবাকে দিয়েছি বাবার বিশ্বাসে আঘাত করে! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর না। আর কোনদিন বাবার কাছে আওয়ামীলীগের বদনাম করবো না, আওয়ামীলীগ নিয়ে বিতর্ক করবো না, হোক এটা আমার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক; কারও তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না! বাবার জন্য একটু না হয় ভন্ডামিই করলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।