সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১.
চার পাঁচ দিন আগে কয়েকজন বন্ধু চেপে ধরলো, "চল সমুদ্রের পাড় থেকে বেড়িয়ে আসি", আমি আর না করতে পারলাম না। বউ কয়েকদিন আগে দেশে চলে গেছে, ভাবলাম এইতো সুযোগ।
খুব সকাল সকাল গিয়ে বিকাল বিকাল ফিরলেই হবে, সারাদিন আর বউকে ফোন দিব না, রাতে ঘরে ফিরে বলবো, "আমার একদমই ইচ্ছা ছিলো না যাওয়ার, কিন্তু বন্ধুরা জোর করে ধরে নিয়ে গেল, না করতে পারিনি"।
পানিতে নেমে খুব লাফালাফি করছি, ভালোই মজা হচ্ছিলো, যেহেতু সাঁতার পারি না তাই তীরের কাছাকাছিই থাকতাম সবসময়। তীরের কাছাকছি ছিলো কিছু বিশাল আকারের পাথর। এক বন্ধু আঁচড়ে পাঁচড়ে পাথরের উপর উঠে বেশ ভাব নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো, শেষে আমাকেও ডেকে বললো, "আরে কোন ব্যাপার না, উঠে আয়"। আমিও বাহাদুরী দেখাতে গিয়ে পাথরটার উপর উঠার জন্য দিলাম একটা লাফ, ঠিক সেই সময় বিশাল একটা বেরসিক ঢেউ আছড়ে পড়ে আমার উপর।
হুড়মুড় করে পাথরটার উপর পড়ার সময় হাত,পা সামনে এগিয়ে দিয়ে কোন রকমে সংঘর্ষটা এড়ালাম। কিন্তু বা হাতের তালুতে আর বা পায়ের হাটুতে বেশ কিছু অংশ কেটে ও থাতলে যায়। আমি পানিতে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে তীরে এসে বালিতে বসে পড়ি ।
কিছুক্ষণ পরেই তার ফোন । প্রথমেই প্রশ্ন তুমি কোথায় ?
আমি মিনমিন করে বললাম, "বন্ধুরা জোর করে সী বিচে বেড়াতে নিয়ে এসেছে"
আমি এতদিন ছিলাম, কৈ আমাকে তো একদিনও সী বিচে নিয়ে যাওনি ?
আসলে সী বিচটা অনেক দুরে তো, তাই তোমাকে নিয়ে আর আসা হয়নি।
পরের বার তোমাকে নিয়ে আসলেতো কয়েক দিন থাকবো তাই আগে একবার এসে পর্যবেক্ষণ করে গেলাম।
মনে হলো একটু শান্ত হয়েছে । তার পরপরই বললো, খবরদার কোন বিকিনি পড়া মেয়ের দিকে তাকাবে না ! খবরদার !
আরে নাহঃ ! এখানে কোন বিকিনি পড়া মেয়েই নাই।
তারপর আমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বললো, "তুমি কেমন আছ ?"
তার গলায় কেমন যেন একটা আকুতি ছিলো, আমি মুহূর্তক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, "হাতে ও পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছি"
সাথে সাথে সে চিৎকার দিয়ে বললো, "আমার মনে টান দিয়েছিলো, যে তোমার কিছু একটা হয়েছে !"
আমি একটু অবাক হলাম, এই মনে টান দেওয়া ব্যাপারটা আমি কখনই ঠিক মত বুঝি না। এই ব্যাপারটা আমার মায়ের মধ্যেও দেখেছি।
যখনই মন খুব খারাপ বা অস্হির থাকে, তখনই ফোন দিয়ে বলে, "বাবা, মন খারাপ করে না" আর সাথে সাথে আমার মন ভাল হয়ে যায়।
আগেও দেখেছি, অনেক সময়ই আমার মনের কথা কিভাবে যেন সে টের পেয়ে যায়। আর কিভাবে টের পেলে জিজ্ঞেস করলে বলে, "আমি তোমাকে নিয়ে যেভাবে ভাবি, তোমাকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করি, তোমাকে যেভাবে ভালোবাসি , সেভাবে তুমি বাসলে তুমিও বুঝতে পারবে আমার মনের কথা, আমার কষ্টগুলো, আমার আনন্দগুলো। নিজেকে তখন অনেক ক্ষুদ্র, তুচ্ছ মনে হয়, তার অনুভূতির সামনে।
২.
আজ অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি।
কাজের খুব একটা চাপ নেই, তাই হাতমুখ ধুয়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে একটা মুভি দেখলাম, সাইন্স ফিকশন। তারপর খুব ফুরফুরে মেজাজে ল্যাবে এসে ব্লগিং করতে বসে গেলাম। এক ফাঁকে মেইলটাও চেক করে নিয়েছি। সবকিছুই ঠিকঠাক, কোন অসঙ্গতি নেই কোন দিকে। শিস্ দিতে দিতে কফি বানিয়ে নিয়ে এসে আবার ডেস্কে বসলাম।
একটু পর তার ফোন, এবার প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো, দুপুরে কি খেয়েছ ?
বললাম এইতো এটা সেটা খেয়েছি। কিন্তু তোমার গলা এমন শুনাচ্ছে কেন ?
আমার কথা শুনে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো বললো, "একটু আগে বারান্দায় হাটতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছি। "
বুকটা ধ্বক করে উঠলো, নিজের অজান্তেই গলার আওয়াজ বেড়ে গেলো, বললাম, "কি?"
হুমম, এইমাত্র প্লাস্টার করে বাসায় ফিরেছি। উহঃ, কি যে অসহ্য ব্যাথা ! মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো আমার হাতটাই নেই হয়ে গেলো। পেইন কিলার খেয়েছি, তারপরও ভয়ানক ব্যাথা করছে।
আচ্ছা, এখন রাখি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, আজকে আর ফোন দিও না ।
কিছুক্ষণ থ্ মেরে বসে ছিলাম । আমার বউ হাত ভেঙ্গে তীব্র ব্যাথায় কোকাচ্ছে আর আমি মুভি দেখছি, শিস্ দিয়ে দিয়ে কফি খাচ্ছি, আমি কিছুই টের পেলাম না ! ইচ্ছে করছে ছুটে তার কাছে চলে যাই, ইস তার ব্যাথাটা যদি আমি নিয়ে নিতে পারতাম! তার এই তীব্র ব্যাথায় কিছুই আমি অনুভূব করিনি, একেবারে কিছুই না !
হায় ! এখনও তোমার মত করে ভালোবাসতে পারলাম না । ক্ষমা করে দিও ।
দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ১
দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ২
দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।