যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।
অনেক চোলাই ধোলাই শেষেও যখন দেবদূতের কাছ থেকে কোন ইনফরমেশন বের করা গেলো না তখন ওসি সাহ্বে চরম আশাহত হলেন কেননা গুপ্তচরের গোপন অভিসন্ধি আবিষ্কার করে প্রমোশনের যে রঙিন স্বপ্ন তিনি অন্তরে লালন করছিলেন সে স্বপ্নের অকাল মৃতু্যতে তিনি ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলেন। অবশেষে তিনি দেবদূতকে অর্ধ উন্মাদ মনে করে ছেড়ে দেওয়ায় উত্তম বলে সাব্যস্ত করলেন। দেবদূত ছাড়া পেলেন।
জেল হতে বের হয়ে মুক্ত আকাশ আর বিশুদ্ধ বাতাসে দেবদূত কিয়ৎ রোমাঞ্চিত হলেন।
যদি ও ইমারতের ভিড়ে আকাশের দেখা পাওয়াই মুস্কিল আর বাতাস ভর্তি বিষাক্ত গ্যাস, তথাপি চৌদ্দ শিকের ভেতর থাকতে থাকতে এই পরিবেশই দেবদূতকে ভীষণ আলোড়িত করলো। দেবদূত যেন নব উদ্যম ফিরে পেলেন। তিনি রাস্তায় আপনমনে হাঁটতে লাগলেন। কেমন যেন বেশ নীরব একটা পরিবেশ। বেশ শান্ত, তার নিকট মনে হলো স্বর্গও এইরকম শান্ত নয়।
সবসময় নারদের প্যাচাল লেগেই থাকে, ইন্দ্রের নাচ-গান নন-স্টপ ক্যাবল টিভির মতো 24 আওয়ার চলতে থাকে আর ঐ গাঞ্জাখোর পাবলিক, মহামুনি শিব মাঝে মাঝে লঙ্কাকান্ড বাঁধিয়ে বসে। তারচেয়ে এই দেশ অনেক ভালো। আগেকার দুঃসহ স্মৃতি ভুলে তিনি বেশ আশাবাদী হয়ে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।
কিছুদূর এগোতেই একদল ষন্ডা মার্কা লোক তাঁকে ঘিরে ধরলো। সবচেয়ে বিকট দর্শন লোকটা বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো, আংকেল কই যান? অফিসে নাকি? জানেনই তো আইজকা হরতাল।
বাসা থেইকা বাইর হইলেন কেলা? দেবদূত এই প্রথম হরতাল শব্দটি শুনলেন। তাই তিনি অস্পষ্টভাবে বিস্ময়ের সাথে উচ্চারণ করলেন, হরতাল!!! হরতাল আবার কি? দেবদূতের কথা শুনে চ্যাংড়া টাইপের একটা ছেলে তিড়িংবিড়িং করে লাফাতে লাগলো।
-- আংকেল মনে অয়, সরকারি দলের সমর্থক। হরতাল হুইনা ভেংচি কাটছে দেখছস? চল, হালারে ল্যাংটা কইরা পিলারের লগে বাইন্ধা রাখি।
-- আংকেল আইজকা আর অফিসে যাইয়া কাম নাই, ষন্ডা মার্কা লোকটা বললো।
আমাগো নেত্রী আপনাগো লাইগা ছুটি দিছে। ঘরে বইয়া মৌজ করবেন, আন্টির লগে বইসা বাংলা সিনেমা দেখবেন, তা না, বাইর হইছেন অফিস করনের লাইগা। অহন আমরা একটু আপনারে লইয়া মৌজ করমুনে। বলতে বলতে পকেট থেকে একটা চকচকে ছুরি বের করলো লোকটা। দেবদূত কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
তিনি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন।
-- আংকেল, যা কই মন দিয়া হুনেন, চ্যাংড়া টাইপের ছেলেটি বললো। পরথমে পাঞ্জাবিটা খুলেন, চিপা থেইকা টাকা পয়সা বেবাক বাইর করেন, তারপর পায়জামা, ভিতরে কিছু পড়লে হেইডাও খুলেন। মানে... জন্মদিনের পোশাক আপনারে আমরা দেখবার চাই।
দেবদূত করনীয় বুঝতে না পেরে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন।
লিডার আওয়াজ দিলো, ওই দেরী কইরা লাভ নাই। হাত লাগা। অর্ডার পাওয়া মাত্র মুহুর্তের মধ্যে তারা দেবদূতকে দিগম্বর করে ল্যাম্পপোস্টের সাথে বাঁধার আয়োজন করতে লাগলো। দেবদূত লজ্জায় দুই চোখ বন্ধ করে রাখলেন। তাঁর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
এরমধ্যে দুইদিক থেকে দুইটা মিছিল এসে মুখোমুখি হলো। প্রচন্ড মারামারি আর গোলাগুলি শুরু হলো। দেবদূতকে ছেড়ে দিয়ে লোকগুলি হট্টগোলের মধ্যে মিলিয়ে গেল। হঠাৎ দেবদূতের পায়ে একটা গুলি এসে লাগলো। দেবদূত লুটিয়ে পড়লেন।
সবাই পালাতে লাগল। অনেকে দেবদূতের উপর পা মাড়িয়ে চলে গেল। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে, একদল লোক এসে দেবদূতকে একটা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে খাটিয়া টাইপের একটা জিনিসের উপর উঠাল। একজন জিজ্ঞেস করলো, ভাইজানের নাম কি? দেবদূত কাতরাতে কাতরাতে বললো, আমি দেবদূত। পাশ থেকে একজন বললো বড় নাম, শ্লোগান দিতে কষ্ট হবে।
শর্ট কর। অন্যজন বললো, দেবু বললে চলবো তো? হ্যাঁ, হ্যাঁ- সবাই সম্মতি দিলো। প্রচন্ড গর্জন উঠলো সাথে সাথে,
আমার ভাই, তোমার ভাই, দেবু ভাই, দেবু ভাই। দেবু ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। দেবু ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
মিছিলটা ক্রমে অলি-গলি ছাড়িয়ে রাজপথে এলো। আর দেবদূত একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। পরদিন পত্রিকায় বিরাট করে ছাপা হলো, গতকালের সরকারী ও বিরোধী দলের তুমুল সংঘর্ষে দেবু নামক এক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তিনি এখন হাসপাতালে মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। সরকারী ও বিরোধী উভয় দলই তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবী করেছেন।
তার পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ করেননি।
হায় দেবদূত! কৃষ্ণ কোথায়??????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।