সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
রাত বারটার মত বাজে, একদমই ঘুম আসছে না, শুধু এপাশ ওপাশ করছি আর বউ চাদর গায়ে দিয়ে কুন্ডলি পাকিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। একবার ইচ্ছা হলো দেই এক ধাক্কা দিয়ে ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে, তারপরই ভাবলাম নাহ্, থাক বেচারা আরাম করে ঘুমাচ্ছে তার উপর সারা দিন ঘুরাঘুরি করে বেশ ক্লান্ত।
উঠে পা টিপে টিপে গিয়ে ব্যাগ থেকে লেপটপ বের করে বিছানার উপর নিয়ে আসলাম। তারপর মাথার কাছে রেখে চালু করলাম, আর মনে মনে ভাবছিলাম কোন মুভিটা দেখবো। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে লেপটপের স্ক্রীনের আলোয় কেমন যেন অন্য রকম একটা আভা ঘরে ছড়িয়ে পড়লো।
বউয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে চোখ পড়তেই বুকের ভিতরটা কেমন চিন চিন করে উঠলো, যেন এমন নিষ্পাপ, কোমল সুন্দর মুখ কতদিন দেখি না ! চাঁদের আলোয় প্রেয়সীর মুখ দেখা নিয়ে হয়তো অনেক সাহিত্য রচনা হয়েছে, কিন্তু লেপটপের আলোয় বউয়ের মুখ দেখা নিয়ে কোন সাহিত্য লেখা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই, তবে চাঁদের আলোর চেয়ে কোন অংশে কম সুন্দর নয় এই দৃশ্য তা আমি হলপ করে বলতে পারি।
আর পারলাম না, আস্তে আস্তে তার গালটা একটু ছুঁয়ে দিলাম, কি হলো জানি না, তবে সে হঠাৎ চোখ খুলে তাকালে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে যাই।
আমতা আমতা করে বলি, আসলে ঘুম আসছে না তো, তাই ভাবলাম একটা মুভি দেখি। তার প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মত সে বললো, এত রাতে ঢং করতে হবে না সোজা লেপটপ বন্ধ করে ঘুমাও।
আমি মিন মিন করে বললাম ঠিক আছে, তাহলে চলো কিছুক্ষণ গল্প করি , আমার ভালো লাগবে।
উফ্ ! বিরক্ত করবে না তো, অনেক টায়ার্ড , প্লিজ একটু ঘুমাতে দাও।
বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো, বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো, মুহুর্তে আমার সামনে ভেসে উঠলো চার,পাঁচ বছর আগের এক স্মৃতি।
চার বছর আগের কথা তখন ডিসুজের যুগ, ফাটাফাটি অফার, রাত বারটার পর এক কলের টাকায় সারা রাত কথা যাবে শুধু ডিসুজ থেকে ডিসুজে । প্রথম দিনই দুইটা সিম কিনে ফেললাম, অবশ্য দোকানদার কিছু টাকা বেশি নিয়েছিলো মনে হয়। যাক তাকে একটা সিম দিয়ে আমি একটা আমার কাছে রেখে দিলাম। রাত বারটা বাজলেই আমি এইদিকে ডিজুস সিম মোবাইলে ভরতাম আর সেও তার মোবাইলে ডিজুসের সিম ভরতো। তারপর চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা কথা।
কি কথা বলতাম তা আর এখন বিস্তারিত মনে নেই, তবে কবিতা, গান কোন কিছুই বাদ যেতো না।
আমার খুব প্রিয়া একটা কবিতা, "বিদায় অভিশাপ" রবি ঠাকুরের লেখা, ৭/৮ পৃষ্ঠা, একটানে পড়ে শুনিয়েছিলাম।
এমনি একসময়ের ঘটনা, আমি মোবাইলে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি, ঐ দিক দিয়ে টিভি চলছে, লাইট অন, মশারি টানাইনি। প্রায় তিন ঘন্টা পরে ঘুম ভেঙ্গের গেলো মশার কামড়ে। এক লাফে বিছানা থেকে উঠে টিভি বন্ধ করলাম , মশারি টানিয়ে লাইট বন্ধ করতে যাবো এমন সময় দেখি বিছার উপরে মোবাইল।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে আমি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি সাথে সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি এখনও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।
আমি ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সাথে সাথে সে বলে উঠলো, " কি ঘুম ভেঙ্গেছে ? "
আমি থতমত খেয়ে গেলাম ! বললাম, তুমি লাইনটা কাটনি কেন ?
সে বললো, যদি তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে তাই এতক্ষণ কানে মোবাইল হেডফোন লাগিয়ে বসে আছি ।
স্পষ্ট মনে আছে, আবেগে আমার চোখ ভিজে গিয়েছিলো, আমি শুধু একটু ধমক দিয়ে বলেছিলাম, " আর এমন করো না , তোমার না প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে ক্লাস থাকে !"
বিয়ের পর নাকি ছেলেরা বদলে যায়, তাদের আসল চেহার বের হয়ে আসে। আমি বলবো, নারী তোমরাও কম বদলাও না, শুধু তোমাদের মত আমরা অভিযোগ করতে পারি না।
---------------------------------------------------------------------------
দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ১
দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।