সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
মামা বাসাটা আলতো করে ধরে খুব কসরত করে একহাতে গাছ থেকে নেমে এলো। বাহঃ ! কি সুন্দর দুইটা ঘুঘুর বাচ্চা ! দেবদূত খুশিতে লাফিয়ে উঠলো, আনন্দে তার চোখ চিঁকচিঁক করে উঠলো! হালকা লাল ছোট ছোট ঠোট, ছোট ছোট পা ! ইস, কি সুন্দর, গায়ে ঠিকমত পশম উঠেনি, ডানাগুলোও পরিপক্ক হয়নি।
মামা, এখন ছেড়ে দিলে কি বাচ্চা দুইটা উড়ে যাবে ? আরে নাহঃ ! মামা বলে, এইগুলো এখনও উড়তে শিখেনি। দেবদূত হাসে।
আচ্ছা মামা, এই গুলো কি খায় ? এখনতো ছোট তাই শুধু পানি, সরিষা দানা, ফলের রস, খুদ এইসবই খাবে আর কি, মামা উত্তর দিলো।
আচ্ছা, তাহলে বড় হলে কি খাবে ? বড় হলে! বড় হলে খাবে কেঁচো, ছোট ছোট পোকা এইসব।
ও, দেবদূত আবার খুশি হয়।
কিছুক্ষন পর আবার, আচ্ছা মামা, এইযে আমরা এই বাচ্চা দুইটা নিয়ে এলাম, এদের মা কি কাঁদবেনা ?
এইবার মামা মাথায় একটা চাটি মেরে বলে, "তুই বেশি বকবক করিস, চুপ থাক"
দেবদূত এইবার কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়, তবে কিছুক্ষন পর আবার স্বপ্লে বিভোর হয়ে উঠে, সে তখনই চিন্তা করতে থাকে বাচ্চা দুইটা বড় হলে কিভাবে কেঁচো জোগার করবে, কিভাবে পোকা ধরবে!!!
প্রতিদিন, ঘুম থেকে উঠেই দেবদূত দৌড়ে বারান্দায় যায়, বাচ্চা দুইটাকে না দেখলে তার দিন শুরু হয়না। এমনি একদিন, ঘুম থেকে উঠে দেখে একটা বাচ্চা মরে পড়ে আছে। দেবদূতের বুকটা খাঁ খঁ করে উঠে। সারাদিন মুখ ভার করে দেবদূত বারান্দায় পায়চারি করে। বেশ কিছুদিন লাগে দেবদূতের ঐ শোক ভুলতে।
দিন যায় মাস যায়, দেবদূতের সব ভালোবাসার কেন্দ্রতে পরিনত হয় ঐ পাখিটা। ধীরে ধীরে সে বড় হয়। দেবদূতের আনন্দ আর ধরে না ! নিত্যনতুন খাবার, ভাত, সরিষা, কামরাঙা, লিচু আরও কত কি যে সে ঐ আদরের পাখিটাকে খাওয়ায় !
দেবদূত বড় হয় পাখিটাও বড় হয়, দেবদূত স্কুলে ভর্তি হয় পাখিটাও খাচার ভিতরেই উড়তে শিখে। স্কুল থেকে ফিরে প্রথমেই পাখিটার যত্নে লেগে যায়, সে জন্যে মাঝে মাঝে নানার বকাও খেতে হয়, কিন্তু দেবদূত ঐ সব তোয়াক্কা করে না ! মাঝে মাঝে দেবদূত জগ ভর্তি পানি খাচার উপর দিয়ে ঢেলে দেয়, ভিজে পাখিটা এতটুকু হয়ে যার তা দেখে আনন্দে তার বুক নেচে উঠে। দেবদূতের আনন্দ দেখে পাখিটা আবার গা ঝাড়া দিয়ে পশম ফুলিয়ে গোল হয়ে যায় তা দেখে দেবদূত হেসে গড়াগড়ি।
দিন যায় মাস যায় বছরে ঘুরে নতুন বছর আসে, এমনি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেবদূত দেখে পাখিটার নিথর দেহটা খাচার মেঝেতে পড়ে আছে ! দেবদূত ঐ দিনে স্কুলে যায়নি, কিছু খায়নি, শুধু নিশ্চুপ বসে থেকে কেদেছে। মামা বলে, ঠিক আছে তোকে আর একটা বাচ্চা ধরে দিবো, নানা বলে আর একটা পাখি কিনে দিবো, কিন্তু তারপরও দেবদূতের মুখে হাসি ফুটেনা।
ঐ দিন রাতে দেবদূত নানির সাথে ঘুমাতে যায়। শুয়ে শুয়ে নানিকে বলে নানিভাই "পাখিটা কেন মারা গেলো ?"
বয়স হয়েছিল না ! তাই বুড়া হয়ে মারা গেছে।
আচ্ছা নানিভাই, "আমরা ঐ পাখিটাকে ধরে আনার পর সে তো আর তার মাকে দেখেনি, তাই না"
না
"তার পরেও তো মনে হয় তার অনেক ভাই বোন জন্মেছে, তাই না ?"
নানি বললো, হু হতে পারে।
সে তার ভাইবোনদের কোন দিন দেখেনি, এইটা ভেবে দেবদূতের বুকটা কেঁপে উঠে ! সে আবার প্রশ্ন করে, নানিভাই, "সে তো কোনদিন আকাশে উড়েনি?"
না !
সে তো কোন বন্ধু বান্ধব পায়নি ? তার তো কোন প্রেমিকা ছিলো না !! সে তো কোন দিন ভালোবাসেনি ?
না !
দেবদূতের চোখের দুপাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে ! তার দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় ! একটা তৃব্র কষ্ট তার বুক চেপে ধরে!
সে বলে , "আমি তো মহা পাপ করেছি তাই না ?"
এইবার নানি বলে "উফঃ !! ঘুমাতে দে , তুই বেশি কথা বলিস " !!!
দেবদূত চুপমেরে যায় কিন্তু তার নিরব কান্না আর থামে না ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত।
সেই থেকে দেবদূতের স্বপ্ন, পৃথিবীর কোন পাখি কোন খাচায় বন্দি থাকবেনা। তার স্বপ্ন চিড়িয়াখানার সব খাচা ভেঙ্গে পৃথিবীর সব পাখিকে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেওয়া!! পাখি যদি খাচায়ই বন্দি থাকবে তাহলে আকাশের কি দরকার ??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।