আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্ভ্রম বনাম স্ববিরোধীতার আয়নায় মুখোশের আড়ালে মুখ -২ (প্রসঙ্গ : প্রভা)!

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

চেতনার সম্ভ্রম বনাম স্ববিরোধীতার আয়নায় মুখোশের আড়ালে মুখ -১ ! ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৭ বলা হয়ে থাকে-- মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । মানুষের হৃদয়ভর্তি ভালোবাসা আবার ঘৃণাও । মানুষ প্রেমান্ধ আবার কামান্ধও;--এইসবই জানা কথা । মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব-- তবে, যা বলা হয়না তা হলো, মানুষ সৃষ্টির সেরা ভন্ড জীবও ! গোপনে যা করতে ভালোবাসি, অন্যে তা করতে শুনলেই, জানলেই ছি ছি করি আমরা মানুষ ! একান্ত নিজের জগতে যেটা সঠিক, অন্যের জগতের সে খবরে আঁৎকে উঠি, আঁতকে উঠার ভান করি, তা হয়ে যায় বেঠিক, খুবই বেঠিক ! পরকীয়া একটি অশুদ্ধ সম্পর্ক । এই সম্পর্কের কথা শুনলেই অপবিত্র একটা ভাব আমাদের উপর 'সওয়ার' হয়, বিশেষত আমরা যারা নিজেদেরকে শুদ্ধ- বিশুদ্ধ মানুষ হিসাবে, দেখতে বা দেখাতে ভালোবাসি ! সেই 'অশুদ্ধ' সম্পর্কের সুযোগ মিললে অনেক 'বিশুদ্ধ' মানুষই সুযোগটা গ্রহণ করবেন গোপনে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, স্বীকার করতে না চায়লেও, মানুষের খুব স্বাভাবিক প্রবণতা এটাই ! কুলবধূ তথা পতিতাদের প্রতি বেশীরভাগ ভদ্রলোকই ঘৃণার ভাব প্রকাশ করে থাকেন, লজ্জার বিষয়, কুলবধূ বা পতিতাদের খদ্দের এর একটা বিরাট অংশ সেইসব সুশীল ভদ্রলোকরাই, এমনকি পতিতাকে পতিত করবার পেছনের ঘটনা হাতড়ে পাওয়া যাবে, কোন না কোন ভদ্রলোকের বদমায়েশীর ইতিহাস ! দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সম্পর্ক, সেটি যদি হয় মানব-মানবীর সম্পর্ক, বন্ধুত্বের বাইরে, সেখানে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার থাকতে পারে, হৃদয়কে ছাপিয়ে শরীরে গড়াতে পারে সম্পর্ক, কিম্বা শরীরকেও ছাপিয়ে যেতে পারে হৃদয় , এসবই খুব স্বাভাবিক ।

তেমনি স্বাবাভিক , ভালোবাসার দু'জন মানুষ পরস্পরের কাছে আয়না হয়ে যাওয়া । পরস্পরের কাছে খোলা হয়ে যাওয়া । পরস্পরের শরীরের দাগগুলো, ভাঁজগুলো মুখস্থ হয়ে যাওয়াও খুব স্বাভাবিক । অস্বাভাবিক শুধু, ভালোবাসায়-বিশ্বাসে খুলে দেয়া ভাঁজগুলো, একান্ত আমার জন্য খুলে দেয়া ক্যানভাসটা কখনো, কোন পরিস্থিতিতেই নিলামে তুলে দেবার কথা না থাকলেও, নিলামে তুলে দেই প্রতিশোধ পরায়ন আমরা মানুষ ! আপনার একসময়কার প্রেয়সী, প্রিয়তমা, প্রেমিকা বা জান (যে নামেই ডাকেন না, কেন) যখন, প্রেমে বা কামে, মমতায় বা প্রণয়ের গভীরতায় আপনার কাছে হয়ে যেতো, নগ্ন দেবী; আপনি সেটাকে উপভোগ করতেন ! আপনারা সেটাকে ভোগ করতেন ! সেই পৃথিবীটা ছিলো আপনাদের দু'জনের , একান্ত দু'জনের, সেই স্মৃতিগুলোও সোনা, রূপা, তামা বা পেতলেরই হোক, একান্ত দু'জনেরইতো ! আপনার প্রেয়সী বা জানটা আপনাকে ছেড়ে চলে গেলে, সেই একান্ত জিনিসগুলো নিলামে তুলবার কথা কি ছিলো ? ছেড়ে যাবার পর আপনি কি সেগুলো নিলামে তুলবেন ? আপনার নিজের মন কি বলে, সে উত্তরটা দিন কেবল ! প্রশ্ন আসবে, ছেড়ে যাবার কথা কি ছিলো ? স্বামী-স্ত্রী বৈবাহিক বন্ধনের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্ক শুরু করেন, তা আজীবনের সম্পর্ক হবে, সেই আশা স্বপ্ন ভালোবাসার সূত্র দিয়েই শুরু করেন । আশা স্বপ্ন ভালোবাসা ভেঙ্গে যায়।

দু'জন বিপরীতধর্মী মানুষের ভালোলাগা সবসময় একরকম যায়না, মোহ কেটে যায়, মানসিক বুঝাপড়ার জায়গাটাতেও দু'জন মানুষে ফারাক থেকে যায় যোজন, সাত কিম্বা সতের বছর সংসার করেও স্বামী- স্ত্রী আলাদা হয়ে যান, এটাও স্বাভাবিক, স্বীকার করতে না চায়লেও । মনের অমিল, মতের অমিল অশান্তি জিইয়ে থাকা সংসার টিকে থাকার চে' , খারাপ সম্পর্কের চে' একদম সম্পর্ক না থাকাটাই শ্রেয়তর সবসময় । তো, স্বামী - স্ত্রী যখন আলাদা হয়ে যাবেন, সাত-সতেরো বছরে জমা হওয়া এতো এতোগুলো রাত এবং দিনের তাদের একান্ত মুহূর্তগুলো, যেগুলোর অনেকগুলো হয়তো ভালোলাগার স্মৃতি ধরে রাখবার জন্য তারা ক্যামেরাবন্ধী করেও রেখেছিলেন, স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যাবার পর স্বামী কি ক্যামেরাবন্ধী সেই বস্তুগুলো বাজারে তুলবেন ? আপনি কি তুলতেন ? ঠিকাছে, পরস্পরের মতামতের ভিত্তিতে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি, আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে গেছেন, অন্যের সঙ্গে ভেগে গেছেন, আপনার এবং স্ত্রীর সেই বস্তুগুলো কি আপনি বাজারে তুলবেন ? গল্পটা একজন প্রভার না, আমার-আপনার, আমাদের 'জান' বলতে বলতে মুখে ফেণা তুলে ফেলা 'জানেদের'ও হতে পারে ! আমার আপনার প্রিয় বোনের গল্পও হতে পারে এটা, হয় ! সেক্ষেত্রে, আমার আপনার অবস্থান কি হবে ? প্রভা একজন 'নটি' বলেই কি আমরা ভদ্দরলোক সুশীলরা ঘৃণা উগরে দেই, সবটুকুন ? আমরা পর্ণো দেখে মৈথুন করে শীর্ষ সুখ নেবার চেষ্টাতে লজ্জিত হইনা, পর্ণো নায়িকা হিসাবে উপস্থাপিত, শরীরটি কিভাবে এরকম উন্মুক্ত হতে পারলো, (যেরকম উন্মুক্ত হয়তো আমাদের প্রেমিকারাও আমাদের সামনে হয়ে থাকেন ) তা ভেবে ভীষণ লজ্জিত হই ! পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় আমাদের চিন্তাগুলো কতো স্বার্থপর, দুর্বল এবং পরস্পরবিরোধী তা ভেবে লজ্জিত হবার কিছু নেই । জয়তু হে পুরুষ এবং পৌরুষ ! ধিক ! আমাদের এই স্ববিরোধীতাকে ! ধিক ! আমাদের এই ভন্ডামিকে ! সম্ভ্রমের এই বিশাল ঘাটতিতে(!!) ইসলামের কান্ডারী হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয়া জামাতী, ধার্মীক, আস্তিক এবং নাস্তিকরা যেই বিপুল উদ্দিপনায় এক স্রোতে মিশে যেতে পারলেন, আমাদের মুখোশের আড়ালের মুখগুলোর ভন্ডামীর এক নিদারুণ উদাহরণ হয়ে, আমাদের সমাজের একটা প্রতিচ্ছবি হয়েই তা থাকুক ! আমি কেবল পুরুষের একজন হয়ে নিজেকে ধিক্কার দেই ! ধিক ! পুরুষ তোমাকে !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.