২০১৫ সালের মধ্যে বয়স্ক সাক্ষরতার ক্ষেত্রে যেসব দেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করতে পারবে না এবং যেসব দেশে বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে এক কোটির বেশি অশিক্ষিত, সেসব দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশের নাম।
ইউনাইটেড ন্যাশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) প্রকাশিত ‘ইএফএ গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্ট ২০১২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে চার কোটি ৪০ লাখই অশিক্ষিত।
বিশ্বব্যাপী ইএফএ বা সবার জন্য শিক্ষার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা দেখার জন্যই ইউনেসকো প্রতিবছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইউনেসকো ঢাকা অফিস যৌথভাবে এ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রাজধানীর ব্যানবেইস ভবনে বিএনসিইউর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী যেসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে, তার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আলোচকেরা বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষাসচিব কামাল আবুল নাসের চৌধুরী সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরেন সেভ দ্য চিলড্রেনের দেশীয় পরিচালক মাইকেল ম্যাকগ্রাথ, ইউনেসকো ঢাকার অফিসার ইন চার্জ কিচি ওয়াসু ও সেভ দ্য চিলড্রেনের (বেসিক এডুকেশন) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর তালাত মাহমুদ। তালাত মাহমুদ বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তালাত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক যত্ন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু অর্জন আছে। তবে এ সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ৫০ শতাংশ শিশু। শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির চিত্র ভালো হলেও ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক। ২৭ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বয়স্ক সাক্ষরতার যে চিত্র দেওয়া আছে, তা খুবই হতাশাজনক।
তাই সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে যেতে হবে বহুদূর।
প্রতিবেদনে শিশুদের পাশাপাশি যুবদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২০ কোটি যুব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে পারেননি এবং কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে যুবরা শিক্ষা শেষ করলেও চাকরির ক্ষেত্রে যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। আবার অনেক যুব শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতা দুটো থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশু ও সুযোগবঞ্চিত যুবদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আদলে ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের আলোচকেরা বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজর দিতে বলেন। ২০১৫ সালের পর এমডিজির লক্ষ্যমাত্রায় শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের দক্ষতার বিষয়টি সম্পৃক্ত করা, শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়ার কথাও আলোচনায় ওঠে আসে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান সমাপনী বক্তব্য দেন।
তিনি সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।