কয়েক দিন থেকে হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব শফিক। বাড়ির সবার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত গেলেন চিকিৎসকের কাছে। জানা গেল, লিফট নেই বেশ কয়েক তলা উঁচু বাসায়। তাই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে তাঁর এ অবস্থা।
এমন ব্যথার কারণ
বয়স্কদের মধ্যে হাঁটুব্যথার প্রধান কারণ হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস, যা হাঁটুর অস্থিসন্ধির মধ্যকার তরুণাস্থির বয়সজনিত ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে।
এ ছাড়া হতে পারে আগের কোনো আঘাতজনিত ব্যথা, অস্থিসন্ধির সংক্রমণজনিত ব্যথা অথবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
কী করবেন?
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল)-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এম হাবিবুর রহমান বলেন, ক্রমাগত হাঁটুর ব্যথায় ভুগতে থাকলে জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। খাওয়ার সময় বসতে হবে চেয়ারে, নামাজ পড়তে হবে চেয়ারে বসে। গোসলসহ দৈনন্দিন সব কাজই উঁচু জায়গায় বসে করার অভ্যাস করতে হবে, যেন হাঁটুতে বেশি চাপ না পড়ে। বাথরুমেও ব্যবহার করতে হবে হাইকমোড।
রান্নাবান্না, তরকারি কাটার মতো কাজও করতে হবে টেবিল বা কোনো উঁচু জায়গায়। ঘর মুছতে ব্যবহার করতে হবে লম্বা হাতলওয়ালা ঘর মোছার যন্ত্র। এ ছাড়া হাঁটুর কিছু ব্যায়াম (যেমন কোয়াড্রিসেপস এক্সারসাইজ) নিয়মিত করতে হবে। হাঁটুতে ব্যবহার করা যেতে পারে বিশেষ ধরনের ক্যাপ অথবা হাঁটার জন্য লাগবে লাঠির সাহায্য। আর ওজনটাও রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে।
তবে এসবে ব্যথা না কমলে নিতে হবে ফিজিওথেরাপি। তাপচিকিৎসার মাধ্যমেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যান।
সিঁড়ি যদি ব্যবহার করতেই হয়
হাঁটুব্যথার রোগীদের সিঁড়ি ব্যবহার করতে হলে সিঁড়ির রেলিং ধরে ওঠানামা করতে হবে। প্রতিটি তলায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে হবে কিছুক্ষণ, এমনকি পারলে সিঁড়ির মাঝামাঝি স্থানেও বিশ্রাম নেওয়া উচিত। প্রতি পদক্ষেপে কখনোই একটির বেশি সিঁড়ি ভাঙা যাবে না।
ডান হাঁটুতে ব্যথা থাকলে সিঁড়িগুলোতে প্রথমে বাঁ পা দিয়ে উঠতে হবে আর নামার সময় আগে ডান পা দিয়ে নামতে হবে। যাঁদের বাঁ হাঁটুতে ব্যথা, তাঁদের জন্য সঠিক পদ্ধতি হলো ঠিক এর উল্টোটা।
অস্ত্রোপচারও লাগতে পারে
এত কিছু মেনে চলার পরেও যদি কারও ব্যথা উপশম না হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আর্থ্রোস্কোপি অ্যান্ড রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু জাফর চৌধুরী বলেন, যেসব অস্টিওআর্থ্রাইটিসের রোগীর হাঁটুতে খুব বেশি সমস্যা দেখা দেয়, অর্থাৎ শুধু ফিজিওথেরাপিতে যাঁদের ব্যথা উপশম হয় না, তাঁদের জন্য রয়েছে হাঁটুর সম্পূর্ণ অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপন করার চিকিৎসা। এই অস্ত্রোপচারের সাত দিন পরেই রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
এরপর তিনি কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারবেন। মাস খানেক কিছু ব্যায়ামও করতে হবে তাঁকে। তবে এসব রোগী আর কখনোই সম্পূর্ণ হাঁটু ভাঁজ করতে পারবেন না।
প্রতিরোধের উপায়
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।
আর হাঁটুব্যথা সহনীয় পর্যায়ে থাকতেই জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনুন। তাহলে ভবিষ্যতে হাঁটুব্যথা আপনার জন্য দুর্দশা বয়ে আনবে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।