আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাঁর স্বপ্নের মৃত্যু নেই

ভালো থাকার আছে যে উপায়......

“আমরা দুজন এক গাঁয়েতে থাকি, সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ”। আর একজন সাধারণ বাঙালী হিসেবে আমার নিকট সুখের বিষয়টি হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর আমি এই বাঙলায় জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু যে বেদনা আমৃত্যু তাড়িয়ে বেড়াবে তা হচ্ছে- একই মাটিতে জন্ম নিয়েও আমি ৭ই মার্চে রেসকোর্সে উপস্থিত থাকতে পারিনি, হতে পারিনি লাখো জনতার একজন, শুনতে পারিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর অমর কবিতাখানি..........। আমার যখন জন্ম তখন বঙ্গবন্ধুবিহীন দেশ স্বৈরাচারের রাজত্বে। যখন একটু-আধটু বুঝতে শিখলাম তখনও দেশ স্বৈরশাসকের কবলে।

বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিচয় বাবার মুখে ইতিহাস শুনে। অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলের হাতে একসময় বাবা তুলে দিলেন এম.আর. আখতার মুকুল-এর “আমি বিজয় দেখেছি”। বিস্মিত হবার প্রতিভা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই, তারপরও জীবনের মধ্যাহ্নে দাঁড়িয়ে যা কিছু আমাকে বিস্মিত করে তার প্রতিটি পরতে পরতে আছে- রবীন্দ্রনাথ আর বঙ্গবন্ধু। বাঙালিকে এতো আপনার চেয়ে আপন করে আর কে দেখেছে? কে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও বলেছে...আমার বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না? স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জনক ছিলেন।

এদেশের মানুষের ওপর তাঁর বিশ্বাস ও আস্থা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর কখনও মনে হয়নি যে দেশের কেউ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। আর তাইতো তাঁর ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে ১৫ই আগস্টের কালরাত্রিতে ঘাতকরা বাঙালীকে করেছিল পিতৃহীন। দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। বাংলার মীরজাফরদের চক্রান্তে রক্তে লাল হলো ৩২ নম্বরের বাড়িটি।

শহীদ কাদরীর ভাষায়, “বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়, বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়, না, কোন উপমায় তাদের গ্রেফতার করা যাবে না। তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম, বুট, সৈনিকের টুপি, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিল, তারা ব্যবহার করেছিল এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো, বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো দেখতে, এবং ওরা মানুষই, ওরা বাংলার মানুষ এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি শুনবো না কোনোদিন। ” কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। ঘাতকের পুনর্বাসিত হতে দেখেছে, পুরস্কৃত হতে দেখেছে।

আইন করে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাংলার জনগন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, শাস্তি চায় জাতির জনকের হত্যাকারীদের। এতবড়ো অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোন জাতি দিনবদলের অভিযাত্রায় শামিল হতে পারে না। ডঃ আহমেদ শরীফ লিখেছিলেন, “আমরা এমনই দুর্ভাগা জাতি, জীবিতকালে কাউকে সম্মান জানাতে পারিনা, কেবল তিরস্কার করতে পারি, মৃত্যুর পর আমরা কেবল প্রশংসার ফুলঝুড়ি ছড়াই।

” বঙ্গবন্ধুর দুর্ভাগ্য হচ্ছে তাঁর বেলাতে এ লাইনগুলোও সর্বাংশে সত্য প্রমানিত হয়নি। আমাদের তথাকথিত জাতীয়তাবাদীরা প্রমান করেছেন জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী। তাইতো ১৫ আগস্টের শোকের দিনকে আনন্দ আর উৎসবের দিনে পরিণত করার বিকৃত রুচির পরিকল্পনাও কারও কারও মাথায় এসেছিল। আমাদের প্রজন্ম বড্ড অভাগা, নৈরাশ্য আর হতাশায় ভরা এক শূণ্যগর্ভ সময়ের মুখোমুখি আমরা। আঁধার সময়ে রচিত মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস কাগজের পাতায় পাতায়।

নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস আজও বাতাসে। একটি সত্যবদ্ধ ইতিহাস পাওয়ার জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে আমাদেরকে! ইতিহাস রচিত হোক ইতিহাসের নিয়মেই। তবে আমরা এটুকু জেনেছি, বুঝেছি- যে মাটিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, যে মাটির সোঁদা গন্ধে আমাদের ঘুম আসে, যে বাতাস আমরা নিঃশ্বাসে টেনে নেই, তার সবকিছু যাঁর বদৌলতে তিনি আর কেউ নন, তিনি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ‘স্বদেশী সমাজ’ এ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘স্বদেশকে একটি বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে আমরা উপলব্দি করিতে চাই। এমন একটি লোক চাই, যিনি আমাদের সমস্ত সমাজের প্রতিমাস্বরূপ হইবেন।

তাঁহাকে অবলম্বন করিয়াই আমরা আমাদের বৃহৎ স্বদেশীয় সমাজকে ভক্তি করিব, সেবা করিব। তাঁহার সংগে যোগ রাখিলেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির সংগে আমাদের যোগ রক্ষিত হইবে। ’ বঙ্গবন্ধু আমাদের সেই মহামানব। লেলিনের যেমন রাশিয়া, তুরস্ক কামাল আতাতুর্কের, ম্যান্ডেলার আফ্রিকা, মহাত্মা গান্ধীর ভারত, মাও সেতুঙের নয়া চীন, তেমনি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর। ব্রিটেনের সাবেক সাংসদ জুলিয়াস সিলভারম্যান বলেছিলেন, ‘তিনি তাঁর দেশের মানুষের জনক ছিলেন।

......তার স্বপ্ন আর বিশ্বাসের মৃত্যু নেই। সে’দিন বেশী দূরে নয় যখন বাংলাদেশ আবার স্বাধীন হবে। তখন বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্মৃতি, স্বপ্ন এবং দর্শনই হবে বাংলাদেশের চালিকাশক্তি। ’ নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর দর্শনে বিশ্বাসী, তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পক্ষে। আমরা জাতির জনকের হত্যার বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চাই।

অবসান চাই নেত্রকোনার কেন্দুয়ার বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিরণ চৌধুরীর নগ্ন পায়ে হেঁটে চলার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.