আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যানবাহন ও সড়ক দুর্ঘটনার গাণিতিক সমীকরণ

যুক্তি বাদি জ্ঞান উন্নয়নের মূল সোপান

বিআরটিএ'র তালিকায় সারাদেশে রেজিস্টার্ড যানবাহনের সংখ্যা ১৪ লাখ। আর বিআরটিএ'র ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক রয়েছে সাড়ে ৯ লাখ। অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার। খবরটি সহযোগী একটি দৈনিকের। পরিবেশিত এ তথ্য থেকে দুটো বিষয় আমাদের কাছে পরিষ্কার।

এক. ৫ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের ঘাটতি থাকলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিধি ক্রমবর্ধমান হবে না তো কী হবে। দুই. ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের এ পরিমাণ ঘাটতি তাহলে সংশ্লিষ্ট মহলেই এখন স্বীকৃত সত্য। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনার আর দোষ কোথায়? পরিবেশিত উলি্লখিত তথ্যের চেয়ে যদি প্রকৃত পরিসংখ্যান আরও বেশি হয়, তাহলে? বিআরটিএ'র তথ্য মতে, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি রয়েছে ৬০ হাজার। তাহলে তো আরও অনেক বেশি যানবাহন চলছে লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে। চালকদের ভাষায়, 'দুই নম্বর লাইসেন্স'।

প্রশ্ন_ ১৪ লাখ রেজিস্টার্ড গাড়ি চালাতে ৯ লাখ লাইসেন্সধারী চালক থাকে কিভাবে কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারে? তাহলে কী বুঝব, গোটা পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা এবং ফলস্বরূপ ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা ও লোকক্ষয় কর্তৃপক্ষের হিসাবের বাইরে নয়। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু বলাই বৃথা। এ সম্পাদকীয় যেদিন লেখা হচ্ছে সেদিনও পত্রিকার পাতায় শিক্ষক, পুলিশ সার্জেন্টসহ ২০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে। মোট কথা প্রতিদিনই বাধ্য হয়ে অর্ধকোটি মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে লাইসেন্সবিহীন চালককের গাড়িতে যাত্রী হতে হচ্ছে। আর পুলিশের চোখের সামনেই তারা গাড়ি চালাচ্ছে।

কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় লিখেছিলাম। আমরা এটাই বলার চেষ্টা করেছি, আজকের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রটি দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার ফসল। আজকের পরিবেশিত উপাত্ত সেই জ্ঞাত অবহেলারই সংখ্যাগত বহিঃপ্রকাশ। চালকরা বলছে, বিআরটিএ'র কর্মকর্তারাই তাদের হাতে এ দুই নম্বর লাইসেন্স দিচ্ছে। এভাবে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ছাড়াই ৬০ শতাংশ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, যা সর্বাংশে ভুয়া।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) জানিয়েছেন, রাজধানীতে চলাচলরত যানবাহনের ৭০ শতাংশ চালকের লাইসেন্স ভুয়া। এমনকি এসব চালকের কোন নির্ভরযোগ্য প্রশিক্ষণ নেই। ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীতে চলাচলরত মিনিবাসের ৮০ শতাংশ চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। তারা ট্রাফিক আইন এবং গাড়ি মেইনটেন্যান্স সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। তারপরও আমাদের দুর্ভাগ্য_ অবস্থা এ পর্যায় এসেছে যে, বাধ্য হয়েই জেনে-শুনে বিষ পান করা ছাড়া বিকল্পও নেই।

বাস মালিক ফেডারেশন বলেছে, তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় বৈধ লাইসেন্সধারী চালক ছাড়া বাস চালাবে না, তাহলে ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী ৮০ শতাংশ মিনিবাস বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং জীবন আমাদের অদক্ষ বাস চালকদের হাতেই বন্দি থাকছে বাধ্য হয়ে। এর আশু সমাধান আদৌ সম্ভব কি-না সেটি ভাবতেও গবেষণার দরকার। বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দক্ষ চালক তৈরি এবং বৈধ লাইসেন্স প্রদানের নিশ্চয়তার জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ৬টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তৈরির পরিকল্পনা তারা করছে। ভালো কথা।

পরিকল্পনা করা হোক। তার আগে সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি যে পর্যায় গেছে, জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি কিছু করা যায় কি-না, সে পথেই এখন ভাবা উচিত নয় কী!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.