আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‌‌'বিলাসী' গল্প থেকে সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর। (উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষারী্থ ও যারা বাংলা পড়ান কেবল তাদের জন্য)



প্রশ্ন \১\ নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। সৌদামিনী মালো স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে ধানী জমি, বসতবাড়ি, পুকুরসহ কয়েক একর সম্পত্তির মালিক হয়। এই সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেওর মনোরঞ্জনের। সৌদামিনীর সম্পত্তি দখলের জন্য সে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একবার সৌদামিনী দুর্ভিক্ষের সময় ধান ক্ষেত্রের পাশে একটি মানবশিশু খুঁজে পায়।

অসহায়, অসুস্থ শিশুটিকে সে তুলে এনে পরম যতেœ আপন সন্তানের মতো লালন পালন করে। মনোরঞ্জন সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করতে প্রচার করে যে, নমশূদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ যে মহাপাপ, হিন্দু সমাজের জাত ধর্ম শেষ হয়ে গেল। ক. ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী কে? খ. মৃত্যুঞ্জয়ের ‘জাতবিসর্জনের’ কারণ বর্ণনা কর। গ. সৌদামিনী চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটি বিলাসীর চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘মনোরঞ্জন যেন বিলাসী গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি’- বিষয়টি মূল্যায়ন কর। ১ নং প্রশ্নের উত্তর ক. জ্ঞান বিলাসী গল্পের বর্ণনাকারী ন্যাড়া। ন্যাড়া আসলে লেখকেরই প্রতিনিধি। খ. অনুধাবন মৃত্যুঞ্জয় সমাজের সকল রীতিনীতি উপেক্ষা করে বিলাসীকে বিয়ে করে তার জাতবিসর্জন দেয়। সে ছিলো ব্রাহ্মণের জাত।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের উচু জাত বিসর্জন দিয়ে তার চেয়ে অনেক নিচু জাতের বিলাসীকে বিয়ে করে সে। মুত্যুঞ্জয়ের এ জাতবিসর্জনের ঘটনায় আসলে ভালোবাসার এবং প্রেমের জয়গান ধ্বনিত হয়েছে। বিলসীর প্রেমের মাঝে মৃত্যুঞ্জয় এমন এক আহ্বান দেখেছিলো যা তাকে সমাজ সংসারের সকল বাধা ও লোভ উপেক্ষা করে বিলাসীর কাছে ছুটে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সুতরাং বলা যায়, বিলাসীর প্রতি প্রেমের অমোঘ আকর্ষণেই মৃতুঞ্জয় তার জাতবিসর্জন দিয়েছিলো। গ. প্রয়োগ সৌদামিনী মালোর চরিত্রের যে দিকটির সাথে বিলাসীর চরিত্র মিলে যায় তা হচ্ছে তাদের উভয়ের মানবপ্রেম।

অনুচ্ছেদে দেখা যায়, সৌদামিনী মালো প্রবল ভালোবাসায় একটি পথশিশুকে নিজের কাছে টেনে নেয়। তাকে মাতৃপ্রেমে লালন করে। যদিও পরবর্তীতে এ শিশুটির জাতকে কেন্দ্র করেই স্বার্থান্বেষীরা তাকে নাজেহাল করে। একই বৈশিষ্ট্য এবং পরিণতি দেখা যায় বিলাসীর ক্ষেত্রেও। বিলাসী সাপুড়ে মেয়ে।

কিন্তু তার মধ্যে মানবপ্রেমের অনুভূতি প্রবল। সে অনুভূতি জাতপাতের ভেদ মানে না। সে অনুভূতি সকল বিপদ তুচ্ছ করে ভালোবাসাকে বাচিয়ে রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করে। এ কারণেই আমরা দেখি, সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সে মৃত্যুঞ্জয়কে দিনের পর দিন সেবা করে বাঁচিয়ে তুলে। অবশ্য এ ভালোবাসার জন্য তাকেও মূল্য দিতে হয়েছে।

এখানেও সৌদামিনী মালোর সাথে তার পরিণতির মিল লক্ষ্যণীয়। ঘ. উচ্চতর দক্ষতা উপরের অনুচ্ছেদে দেখা যায়, সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেওর মনোরঞ্জন সম্পদের লোভে সৌদামিনীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালায়। বিভিন্ন অজুহাতে সে সৌদামিনীর সম্পদ গ্রাস করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত সে সৌদামিনীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণের জাত নষ্ট করার অভিযোগ আনে। মনোরঞ্জন প্রচার করে যে, সৌদামিনী পথ থেকে কুড়িয়ে এনে যে শিশুটিকে বড় করে তুলেছে সে আসলে ব্রাহ্মণ সন্তান। আর সৌদামিনী হচ্ছে নমশূদ্র।

সুতরাং ব্রাহ্মণ সন্তানকে লালন করে সে পাপ করেছে। অথচ যখন ছেলেটি অনাহারে রাস্তায় মারা যাচ্ছিল তখন কেউ তাকে রক্ষা করতে যায় নি। সুতরাং সৌদামিনীর বিরুদ্ধে মনোরঞ্জন ও তার সমর্থকদের অভিযোগ ছিলো সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মনোরঞ্জন সৌদাামিনী মালোর সম্পত্তি দখলের জন্যই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে সমাজচ্যূত করার ফন্দি করেছিলো। একই বিষয় আমরা লক্ষ্য করি, বিলাসী গল্পের খুড়ার মাঝে।

মৃত্যুঞ্জয়ের এ খুড়ার মতলব ছিলো মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করার। সে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দিয়ে সমাজের চোখে তাকে ঘৃণিত করার প্রচেষ্টা চালায়। মৃত্যুঞ্জয় যখন ভীষণ অসুস্থতায় মরনোন্মুখ হয়ে যায়, তখনও সে তাকে দেখাশোনা করে নি। বরং সে তার মৃত্যু কামনা করেছিলো। কিন্তু বিলাসী যখন প্রবল ভালোবাসা ও যতœ দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়কে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে তখন সে প্রচার করে বেড়ায় যে, সাপুড়ে মেয়ে বিলাসীর হাতে ভাত খেয়ে মৃত্যুঞ্জয় কঠিন অন্নপাপ করেছে।

এভাবে সে মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজের চোখে অপরাধী বানিয়ে তার সম্পত্তি দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চালায়। সুতরাং আচার-আচরণ এবং কর্মকাণ্ড নিরিখে বলা যায়, ‘মনোরঞ্জন যেন বিলাসী গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি’।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।