আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত ও পাকিস্তানের বিদ্বেষ পূর্ণ মনোভাব ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির গ্রাফ

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পূর্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট সুপ্তাবস্থায় ছিল। তখন আমাদের দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ভারত কিংবা পাকিস্তান ভিত্তিকই ছিল। ইমরান খান থেকে আজহারউদ্দীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা এনে দেয়। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার আস্তে আস্তে বাড়া শুরু করে।

বলা বাহুল্য যে আইসিসি ট্রফির প্রতিযোগী দেশ গুলা প্রত্যেকেই ছিল আইসিসির সহযোগী সদস্য এবং বাংলাদেশ থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল একমাত্র কেনিয়া ছাড়া। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই ক্রিকেট পাগল ছিল। বাংলাদেশ যখন ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করে ঠিক তখনই দেশের ক্রিকেট আস্তে আস্তে তার সুপ্তাবস্থার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। আসলে আজকে আমার লেখার উদ্দেশ্য হল। ভারত ও পাকিস্তানের বাংলাদেশকে নিয়ে চুল্কানির উদ্রেক এবং তাদের খেলার মাঠের বাইরের খেলা বিষয়ক।

বাংলদেশ তার প্রথম ওয়ানডে জয় করে কেনিয়ার বিপক্ষে, তারপর বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত তারা হারের বৃত্ত হতে বের হতে পারে নাই। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপে প্রথম জয় আসে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, এবং বড় বোমা ফাটায় পাকিস্তানকে হারিয়ে। যার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে। পাকিস্তানের চুল্কানির উদ্রেক শুরু হয়ে যায় তখন থেকেই। এবং ওই ম্যাচ নিয়ে ম্যাচ পাতানোর পর্যন্ত অভিযোগ উঠে, অগুলা আর কিছুই ছিল না বিস্ব ক্রিকেটীয় রাজনীতি ব্যাতিত।

প্রথম টেস্ট বাংলাদেশের সাথে খেলে ভারত। কিন্তু প্রথম টেস্টেই বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করে বসে ৪০০ রান, যা টেস্ট ইতিহাসে অনন্য। অবশ্য সেই টেস্টে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটের হার বরণ করতে হয়। বলা বাহুল্য ভারত পাকিস্তান ওই সময় বরাবরই শক্তিশালি দল ছিল, বলা যায় পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ ছিল সেইটা, ভারতেরও অবস্থা মন্দ ছিল না। এরপরে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে তেমন কিছু নেই।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাজে ভাবে হেরে আসার পর, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার আবেদন পর্যন্ত উঠে, অবশ্য সেটা আর শেষ পর্যন্ত টিকে নাই। ২০০৩ সালে ডেভ হোয়াটমোর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান, একে বলা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের পুনর্জন্ম। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের সাথে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স চোখে পরে, লড়াই করার মানশিকতা গড়ে উঠেছে, এই দেখে বাঙালি শান্তি পায় আর আশায় বুক বাধে অবশ্যই এই বাংলাদেশ কে নিয়ে তাদের গর্ব করার মত কিছু আসবে। কিন্তু মুলতান টেস্টে আম্প্যায়ার এর কিছু ভুল ডিসিশনের কারনে ওই টেস্ট আর জেতা হয়ে ওঠে না বাঙ্গালিদের। আবার সেই টেস্টেই চরম এক পরীক্ষা দেন আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ রফিক, উমর গুল তার বোলিং এর পূর্বেই ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে যান কিন্তু টা দেখে উনি বোলিং না করে আবার বোলিং মার্কে ফিরে আসেন, অথচ উনি কিন্তু আউট করতে পারতেন, এবং টেস্টটি কিন্তু বাংলাদেশ জিতে যেত, টা তিনি করেন নাই, ওইটা ছিল পাকিস্তানি চোরদের মুখে বাংলাদেশই চপেটাঘাত।

কারন বহুবার এলবিডাব্লিউর সঠিক আবেদনে সারা দেননি আম্প্যায়ার। ২০০৪ সালে আসে বাংলদেশের সাফল্য জিম্বাবুয়েতে, বুলাওয়ে মাঠে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করে বাংলাদেশ, এরপর নিজ মাঠে ট্রাই সিরিজ, যেখানে বোমা ফাটানোর মত ভারতকে হারিয়ে দেয়। এই বার শ্রু হইল ভারতীয় চুল্কানি। এরপর আর বাংলাদেশ কে পিছে ফিরে তাকাতে হয় নাই, সময়ের সাথে সাথে একের পর এক সাফল্য ধরা দিতে থাকে। কিন্তু অ্যাটম বোমটা ফাটায় বাংলাদেশ ২০০৭ সালে ভারত কে হারিয়ে, যার কারনে সেই বছর ভারতকে প্রথম পর্ব হতেই বিদায় নিতে হয়।

এইবার তো ভারতীয় চুলকানি চরম পর্যায় চলে গেল। আর বাংলাদেশ খেতাব অর্জন করল দ্যা জায়ান্ট কিলার। সেই ২০০৭ এর পর থেকে ভারতীও ক্রীড়া মিডিয়া লেগে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেছনে মাঠের ভেতরে স্লেজিং আর মাঠের বাইরে অপমান। শুরু হইল যুদ্ধ, যেই যুদ্ধ এখনও চলছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে ভারতের বিশাল সংগ্রহ ২৮৬ টপকে জিতে যায়, কিছুই হয় না।

আবার চলে যুদ্ধ। ভারত বাংলাদেশের সাথে ক্রিকেটের দিক দিয়ে যতটুকু শত্রু ভাবাপন্ন টা মনে হয় এখন পাকিস্তানের সাথেও নয়। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভাল সংকেত। কারন তারা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভয় পায়। সেই কারনেই ভারত মাঠের ভেতরের থেকে বাইরে বেশি খেলতে চায়।

আর আজকের তামিম সাকিব মুশফিক নাসিররা সেই ১৯৯৭ এর বাংলাদেশকে দেখে নাই, দেখে নাই বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ, যখন নান্নু আকরাম বুলবুল রা বলত একটি সম্মানজনক পরাজয় হলেই আমরা সন্তুষ্ট। আজকের বাংলার তরুন বাঘেরা জিততে জানে, লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনতে জানে, এরা হারতে জানে না। একটি হার কে তারা দশটি জয় দিয়ে পুষিয়ে নিতে যানে। একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে ভারত কিনবা পাকিস্তান তাদের বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষ যত বারছে বাংলাদেশের উন্নতির গ্রাফ ততই উপরে উঠছে। ওরা মাঠের বাইরেই খেলুক, আমাদের মাঠের ভিতরের খেলাই খেলব এবং জিতব।

জয় বাংলা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.