Click This Link
Click This Link
পর্ব দুই
Click This Link
পর্ব তিন
পর্ব চার
ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নিজেদের জন্য সময়। ওদের জন্য আর ব্যস্ত থাকতে হবেনা তেমন। এসময়ে আমেরিকার আবাসন নেয়া নতুন করে আবার প্রথম থেকে শুরু করা। আমেরিকায় আসার আকর্ষণ অন্যরকম তাই এপ্লাই করা। লটারী লেগে গেছে সেও ভাগ্যের খেলা ।
সুযোগ যখন এসেছে তা নেয়াই ভালো সব কিছুই ঘটে ভালোর জন্য। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় অনেক যন্ত্রনা হলো এমনটা না হলেই ভালো হতো। তেমনি মনে হচ্ছে পার্থর কাছে। ঠিক আছে ছেলেদের গুছিয়ে দিয়ে এবার দুজনে মিলে ঘুরব, দেখব। পৃথিবীর অনেক দেশে বন্ধু বান্ধব, আত্মিয় স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সবার কাছে যাব।
কাটাব কিছু আনন্দময় সময় কাজে কাজেই তো কাটল এতটা জীবন।
নিজে ডাক্তার হয়েও পার্থ বুঝেনি কী ঘটছে শরীরের অভ্যন্তরে। স্বাভাবিক জীবন যাপন খাওয়া কাজ, ক্লিনিক, পরিবার, দেশ আর ইন্ডিয়ায় আসা যাওয়া সব কিছুই সময় মতন নিয়মিতই চলছিল। কোন অসুবিধা অস্বাভাবিকতা কিছুই ছিল না শরীরে।
গোপনে বাসা বেঁধে বিস্তার লাভ করছিল ধীরে ক্যানসার ফুসফুস, কিডনি, পাকস্থলির বিভিন্ন অংশে।
যা সাধারনত হয় না। একসাথে বিভিন্ন জায়গায় ক্যানসার কিন্তু পার্থর শরীরে হলো। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল স্বাভাবিকতার মতন অস্বাভাবিকতাও মাঝে মাঝে দেখা যায়। সেই অস্বাভাবিকতার খেয়ালি খেলায় ঘুরে গেলো সুন্দর নিয়মের জীবন যাপন।
আমেরিকা আসার দ্বিতীয় বৎসরে ফিরে যাওয়ার আগে চেক- আপ করাতে গিয়ে ধরা পরল শরীরের ভিতর এই ভয়ানক অসুখের বাসা।
যা বদলে দিলো তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন। প্রথম দিকে ভালো হয়ে যাওয়ার আশায় থাকা হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল হতাসা।
আমেরিকার ডাক্তার একটার পর একটা পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যাতি ব্যস্ত করে তুলল ওদের পারিবারিক জীবন। চিকিৎসা , ডাক্তার , বাসা এর বাইরে আর কোন জীবন নাই। একটা মানুষকে বাচাঁনোর আকুল আপ্রাণ প্রচেষ্টা।
এই মনে হয় আমেরিকা থাকার সুবিধা। কোথাকার কোন মানুষ তা বিচার্য নয় একটা মানুষের চিকিৎসা দরকার সেটা সম্পূর্নরূপে দেখা হয়। তাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। খরচপাতির দায় ভার ইন্সরন্সের যা প্রথমেই অল্প দামে নেয়া হয়ে ছিল তা থেকেই আসছিল।
সব পরীক্ষা শেষে বলে দিল বড় জোড় মাস দেড়ক সময় আছে? ক্যানসারের চিকিৎসা এখনো কেমো ছাড়া আর কিছু হয়নি।
প্রথম পর্বের পাঁচবার কেমো নেয়ার কথা বলল ডাক্তার । রেডিয়েশন দিয়ে ক্যানসারের সেল গুলোকে মেরে ফেলা যাতে ছড়াতে না পারে। প্রচন্ড কষ্ট শরীরে নানান পার্শ্ব প্রতিক্রয়া, আর সবচেয়ে বড় ধাক্কা এটা কী হলো ! মানষিক ভাবে বির্পযস্ত। তিনটা ডোজ নেয়ার পর আর নিতে পারল না কেমো তারপরও মাস ছয়েক পর বেশ ভালো হয়ে উঠল। দেশে ফিরে গেলো।
এভাবে চলে গেলে তো হবে না। কেউ কিছু জানে না কোথায় কি আছে ছেলেরা বউ কোথাও কিছু পাবে না। অনেক আছে কিন্ত সব নিজেই সামলে চলেছে এতদিন পার্থ। পরিবারের সবাই ওর উপর র্নিভরশীল। যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে দেশে গিয়ে ওদের সব গুছিয়ে দিয়ে যেতে পারে।
ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় দেড় মাস বেঁচে থাকবে যে মানুষ সে মাস ছয় পর দিব্যি ভালো দেশে গিয়ে মাস চার থেকে সব জায়গা জমি ব্যবসা বানিজ্যের ব্যবস্থা করে ফিরে এলো।
কিন্তু না কেমোতে আবার ফিরতে হলো প্রচন্ড কষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তারপরও আর কোন উপায় নাই।
বেঁচে থাকার জন্য আকুল আবেদন। দুচোখ ভরে বউ সন্তানদের দেখার আকুলতা। ভালো হয়ে উঠার প্রচন্ড আশা।
তবু তর তাজা একটা মানুষ দিন দিন বিছানার সাথে মিশে যেতে থাকল । সন্তান যাদের বয়স উচ্ছোলতায় মাতার, বাবার অসুখ করে দিল তাদের ম্রিয়মান। আরো বেশী মনযোগী হলো লেখা পড়ায় সাথে কাজ আর বাবার দেখাশুনা। আর স্ত্রী তার সারা দিনরাত এক হয়ে গেলো যন্ত্রনা ক্লিস্ট মানুষটাকে একটু শান্তি দেয়ার জন্য। ব্যাথায় অস্থির শরীরের কোথায় কি ভাবে শান্তির প্রলেপ বুলাবে।
না খেতে পারা মানুষের মুখে কোন খাবার খানিকটা স্বাদ আনবে। পেটে থাকবে। ব্যাস্ত একটা মানুষ সারাক্ষন ঘরের মাঝে। বাইরে বেরুলে হাসপাতালের গাড়িতে চড়ে হাসপাতাল পরীক্ষা নিরিক্ষা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসা।
স্ত্রী সুস্থ হয়েও তার সবকাজ সব ভালোলাগা থেমে গেলো স্বামীর সেবা শুশ্রুষায়।
কাজ বাদ দিয়ে দিল ঘরে অসুস্থ মানুষ রেখে কী ভাবে বাইরে কাজ করবে? স্বামীর কখন কী প্রয়োজন হয় তাই সারাক্ষন প্রিয় স্বামীর পাশে।
যার সাথে সকাল বিকাল রাত্রির অনেক সময় জড়িয়ে আছে তার কথা কী শেষ হয় দুচার শব্দে। মনে হয় এই তো সেদিন শুরু হলো একসাথে পথ চলা। জল্পনা কল্পনার জাল বুনা। মানুষের জীবনের সময়টা মনে হচ্ছে বড় অল্প।
আর তাছাড় কাউকেই আমরা হারাতে চাইনা যেতে দিতে চাই না। প্রকৃতি তাই নিরবে নানান ছলে নিয়ে যায় আমাদের থেকে আপন জন। ভালোবাসার মানুষ। আমরা তখন মেনে নেই ভালোই হলো এভাবে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে চলে যাওয়াই ভালো । তার স্মৃতি বুকে ধারণ করে পথ চলি নিজের সে পথে যাওয়ার শক্তি আহরোণ করি।
সেই ভ্রমণের পরে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ওর বিয়ে হয়ে যায়। ছাড়া ছাড়ি হয় আমাদের দীর্ঘ কয়েক বছরের এক সাথের জীবন যাপন।
ভোর বেলা ছায়ানটে গান করতে যাওয়া। দিদির বাড়িতে হৈ চৈই সব ভাইবোন মিলে অথবা আমার খালার বাড়িতে এলেই গান করতে বলা। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানো একসাথে আর যত জল্পনার জাল বোনা।
বিয়ের দিন ওর সাথেই তো সারাক্ষন ছিলাম। খাওয়া সাজানো আপ্যায়ন । সাতপাকে বাঁধা পরার সে সময়। মাথায় কপালে এঁকে দেয়া পার্থর সিঁদুরের চিহৃ অন্য এক পরিপূর্ণ রমনি হয়ে উঠেছিল সে।
তাকে বিদায় দেয়া এয়ারর্পোটে আবার কয়েক মাস পর ফিরে পাওয়া।
পার্থ ফিরে এলো আলজেরীয়া থেকে স্থায়ী ঘর সংসার করতে চলে গেলো ওরা ঢাকা ছেড়ে ঝিনেদার কালিগঞ্জে।
আমার জীবনেও খানিক ব্যস্ততা হারিয়ে গিয়েছিলাম আমরা একে ওপরের থেকে। বছর কয় পরে থিতু হয়ে আমার স্বভাব অনুযায়ী খুঁজে বের করলাম ওকে আবার ফোনে । ছোট শহরগুলোতে নামি মানুষদের সবাই চিনে। সেই চিন্তানুযায়ী ফোনে অপারেটরের মাধ্যমে পেলাম আবার ওকে।
ঘুরতে গেলাম পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে ওর বাড়ি। ও এলো এক সময় আমার বাড়ি। এক সময় শুনলাম ও ইন্ডিয়াতে থাকছে। সেখানেও আমাদের এক সাথে পদচারণা অনেক স্মৃতির চিহৃ এঁকেছে, উড়িয়েছি অনেক স্মৃতির ধূলো বিশাল ভারতের অনেক প্রদেশ জুড়ে। আমাদের যোগাযোগের সময়গুলো গভীর ভাবে জমে উঠতে না উঠতেই আমরা দূরে চলে গেছি বারেবারে একে অপরের থেকে।
এবার আমি চলে এলাম দূরে হঠাৎ করে। ও খুঁজে বের করল আমাকে অনেক অভিযোগ করল। তারপর চলে এলো কাছাকাছি নিউইয়র্কে। আমাদের আনন্দ ভালোলাগায় কিছুটা সময় কাটানোর আগেই ওর জীবনটা বদলে গেলো বড় অন্যরকম ভাবে। চিরন্তন যে সত্য আমরা কেউ কোন ভাবেই অস্বিকার করতে পারি না।
সে বাস্তব যন্ত্রনায় আধখানা হয়ে গেলো আমার প্রিয় বন্ধু।
পার্থের এঁকে দেয়া লাল সূর্যের সে চিহৃ ওর কপাল থেকে মুঝে যাবে ভাবতে পারি না। বড্ড যন্ত্রনা হয়। শঙ্খোর সে শাঁখা কে খুলে নেবে ওর হাত থেকে? ওকি জড়িয়ে থাকবে সাদা শাড়িতে...শুধু...বাকি জীবন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।