আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবন্ধী হাফিজুরের জয় হোক ?

মামুন বিশ্বাস

পায়ে শক্তি নেই, হাঁটতে পারে না। হাতে শক্তি নেই, কোনো কিছু ধরতে পারে না। কিন্তু লেখার প্রতি তার যে অদ্যম আগ্রহ! মুখে তুলে নিল পেন্সিল। লিখতে শুরু করল স্েলটে। একপর্যায়ে পেন্সিলের জায়গা নিল কলম।

স্েলটের স্থলে খাতা। এভাবেই প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে ওঠে শারীরিক প্রতিবন্ধী হাফিজুর রহমান। কৃতিত্বের সঙ্গে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার সে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ (রোল-৫৩৭৭৬১) থেকে অংশ নিচ্ছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার এনইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হাফিজুর শিক্ষার আলো দিয়ে পঙ্গুত্বকে জয় করতে চায়। তাই তার এই সংগ্রামী যাত্রা।

গতকাল রোববার ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি ঘরের বারান্দায় মাদুরে বসে মুখে ধরা কলম দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখছে হাফিজুর। ধুনট উপজেলার বেলকুচী গ্রামের দিনমজুর মফিজ উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর। তার জন্ন ১৯৯৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। জন্নগতভাবে প্রতিবন্ধী হাফিজুর। মা-বাবা, আর চার ভাইয়ের অভাবের সংসার।

বাবার পাশাপাশি তিন ভাইয়ের উপার্জনে চলে তাদের সংসার। হাফিজুর জানায়, গ্রামের ছেলেমেয়েদের সহযোগিতায় প্রথমে সে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের স্কুলে লেখাপড়া শুরু করে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে ধুনট এনইউ উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। বাড়ি থেকে তার স্কুলের দুরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। দীর্ঘ পথ তাকে রিকশাভ্যানে যাতায়াত করতে হতো।

অর্থাভাবে প্রায়ই স্কুলে যেতে পারেনি। নিয়মিত ক্লাস করতে না পারলেও পাড়ার সহপাঠীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে সে সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করত। পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতেও তাকে ব্যবহার করতে হয় রিকশাভ্যান। মুখ দিয়ে লেখার কৌশল রপ্ত করা সম্পর্কে হাফিজুর বলে, ‘হাতে শক্তি না থাকায় প্রথমে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মুখে কলম ধরে লেখার চেষ্টা করতে থাকি।

অনেক দিনের চেষ্টায় একসময় এই অধ্যবসায় সফল হয়। ’ হাফিজুর বলে, ‘আমি জীবনযুদ্ধে হারতে চাই না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে বাঁচতে চাই না। শিক্ষার আলো দিয়ে আমার পঙ্গুত্বকে জয় করতে চাই। ’ কেন্দ্র সচিব ও ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, স্কুলে লেখাপড়ার জন্য হাফিজুরের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি।

তাকে বিনা খরচে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা উপকরণসহ যাবতীয় প্রয়োজনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সহযোগিতা করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্যও তার কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক বলেন, হাফিজুরের স্কুল পরীক্ষার ফলাফল ভালো ছিল। সে এসএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.