এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি
দানবীয় সংথ্যাগুলোকে বের করতে হলে খুব দূরে যাবার প্রয়োজন নেই। সবই রয়েছে আমাদের চারপাশে, এমনকি আমাদের দেহের ভেতরেও। কী করে তাদের চিনতে হবে সেটাই জানা দরকার। মাথার উপরের আকাশ, পায়ের নিচের বালুরাশি, চারপাশের বাতাস, আমাদের দেহের রক্ত- সবগুলোর ভিতরই লুকিয়ে আছে দৈত্যের মত সব সংখ্যা।
আকাশের বিরাট সংখ্যাগুলো বেশিরভাগ লোকের কাছেই অজানা নয়।
আকাশে তারার সংখ্যাই হোক, তাদের পরস্পরের ভেতরকার বা পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্বই হোক বা তাদের আয়তন, ওজন বা বয়স যাই হোক- প্রত্যেক ক্ষেত্রের সংখ্যাগুলোই আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়ে দেয়। মানুষ যে "জ্যোতিষিক সংখ্যা" কথাটা বের করেছে তা তো আর শুধু শুধু নয়। কিন্তু কেউ কেউ হয়তো এটা ভাবতেও পারবে না যে, এই আকাশের যেসব জিনিষকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা "ছোট" বলে আখ্যা দিয়েছেন সেগুলোকে যদি মানুষের অভ্যাসের দিক দিয়ে বিবচেনা করা হয়, তাহলে সত্যি সত্যিই দৈত্যের মত বিরাট হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সৌরজগতে কতগুলো গ্রহ আছে যাদের ব্যাস মাত্র কয়েক কিলোমিটার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সবসময় বিরাট বিরাট জিনিস নিয়ে কারবার করেন বলে এদের বলেছেন "ছোট"।
কিন্তু আকাশের বড় বড় জিনিসগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে তবেই তাদের ছোট বলে মনে হবে। আমাদের দৃষ্টিতে তারা মোটোই ছোট নয়। তিন কিলোমিটার ব্যাসের একটি "ছোট" গ্রহের কথাই ধরা যাক। জ্যামিতির সাহায্যে এটি হিসেব করা মোট্ই কঠিন নয় যে এর উপরিভাগের আয়তন ২৮ বর্গ কিলোমিটার বা ২,৮০,০০,০০০ বর্গ মিটারের সমান। এক বর্গ মিটার জায়গায় সাত জন লোক স্বচ্ছন্দে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে (সাধারণ লিফটের ক্ষেত্রফল ১.৩৭২৬ বর্গমিটার, ধারণক্ষমতা ৭ জন; ভরের ব্যাপারটা বাদ দিয়ে শুধু দাঁড়ানোর জায়গার কথাই ধরি)।
তাহলেই দেখা যাচ্ছে এই ছোট্ট গ্রহেও ১৯,৬০,০০,০০০ জন মানুষ দাঁড়ানোর মত যথেষ্ট জায়গা আছে!
যে বালুরাশির উপর দিয়ে আমরা হেঁটে যাই তাও দানবীয় সংখ্যার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। "সমুদ্রতীরের বালুরাশির মতোই অসংখ্য" কথাটি আসার যথেষ্ট কারণ আছে। পুরোনো দিনের মানুষেরা বালুকণার সংখ্যাকে ছোট করে দেখতেন। তাঁরা ভাবতেন আকাশে যত তারা আছে বালুকণার সংখ্যাও ঠিক তত। প্রাচীনকালে টেলিস্কোপ ছিল না তাই এক গোলার্ধে মানুষ খালি চোখে দেখতে পেত প্রায় ৩৫০০ তারা।
সমুদ্রতীরের বালুরাশি খালি চোখে যত তারা দেখা যায় তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি।
যে বাতাসে আমরা নিঃশ্বাস নেই তার ভেতরও এমন সংখ্যা লুকিয়ে আছে। এর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে আছে মাত্র ২,৭০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ "অণু"! সংখ্যাটা যে কত বড় তা কল্পনা করাও অসম্ভব। পৃথিবীতে এত মানুষ থাকলে তার উপযুক্ত জায়গাই পাওয়া যেত না। সত্যিই, ভূ-পৃষ্ঠে সমস্ত মহাদেশ আর সমুদ্র ধরে নিলে আছে ৫০ কোটি বর্গ কিলোমিটার।
একে যদি বর্গ মিটারে ভাঙা যায়, তাহলে দাঁড়াবে ৫০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ বর্গ মিটার। এবার ২,৭০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ কে এই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যাক। উত্তর হল ৫৪,০০০। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে প্রত্যেক বর্গ মিটারের ভাগে ৫০,০০০ এরও বেশি লোক পড়ছে!
আমরা বলেছি যে প্রত্যেক মানুষই তার ভেতরে দৈত্যের মতো বিরাট সংখ্যা বহন করে চলেছে। সেটা হল রক্ত।
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে এক ফোঁটা রক্ত পরীক্ষা করলে আমরা এক বিরাট সংখ্যার লোহিত কণিকা দেখতে পাব। এরা চাকতির মতো, মাঝখানটা চাপা। তাদের প্রত্যেকের আকৃতিই প্রায় সমান, ব্যাস ০.০০৭ মিলিমিটার, আর ০.০০২ মিলিমিটার পুরু। ১ ঘন মিলিমিটারের মতো ছোট এক ফোঁটা রক্তে অনেকগুলো কণিকা রয়েছে- তাঁদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ। মানুষের শরীরে কত কণিকা আছে? একটা মানুষের শরীরের যত কিলোগ্রাম ওজন, শরীরে রক্তের পরিমাণ তার ১৪ ভাগের চেয়ে কিছু কম লিটার।
ধরা যাক, একজন মানুষের ওজন ৪০ কিলোগ্রাম, তাহলে তার শরীরে আছে প্রায় তিন লিটার বা ৩০ লক্ষ ঘন মিলিমিটার রক্ত। খুব সহজ একটা হিসেব করলেই দেখা যাবে, তার শরীরে আছে ৫০,০০,০০০ x ৩০,০০,০০০ = ১,৫০,০০,০০,০০,০০,০০০ লোহিত কণিকা।
একবার ভাবুন তো! ১৫,০০,০০০ কোটি লোহিত কণিকা! এদের যদি সার বেঁধে রাখা যায় তাহলে কণিকার সুতোটা কত বড় হবে? সেটা হিসেব করা কঠিন নয় মোটেইঃ ১,০৫,০০০ কিলোমিটার, অর্থাৎ পৃথিবীর বিষুব রেখার চারপাশে কয়েক পাক জড়িয়ে রাখা যায়, এটা এমন লম্বা, এর ১,০০,০০০:৪০,০০০=২.৫ গুণ। যদি উপযুক্ত ওজনের কোন মানুষের কথা ধরি, তাহলে লোহিত কণিকার এই শিকল দিয়ে ৩ বার পৃথিবীটাকে জড়ানো চলবে।
এই ছোট্ট লোহিত কণিকাগুলো আমাদের দেহের অতি প্রয়োজনীয় কাজ করে।
তারা শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। রক্ত যখন ফুসফুসের ভেতর দিয়ে যায় তখন তারা অক্সিজেন শুষে নেয়, তারপর রক্তস্রোত যখন তাদের পৌঁছে দেয় আমাদের কোষকলার ভেতরে, তখন ফুসফুস থেকে বহুদূরের সেই অংশে তারা নিয়ে যায় সেই অক্সিজেন। কণিকাগুলো যত ছোট হবে আর সংখ্যায় যত বেশি হবে তাদের কাজও ততই ভালভাবে চলবে। কারণ তাহলে তাদের ত্বকের আয়তনটা বেশী হয় আর এই ত্বকের মধ্য দিয়েই তো তারা অক্সিজেন শুষে নিতে বা ছেড়ে দিতে পারে। হিসেব করলে দেখা যাবে এদের ত্বকের মোট আয়তন মানুষের বাইরের ত্বকের আয়তনের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশী।
এটা ৪০ মিটার লম্বা আর ৩০ মিটার চওড়া, অর্থ্যাৎ প্রায় ১২০০ বর্গ মিটারের সমান। এরা আমাদের শরীরের চেয়েও ১০০০ গুণ বেশি আয়তনের জায়গা দিয়ে অক্সিজেনকে শুষে নেয়, তারপর তা দেহের অন্য অংশে নিয়ে যায়।
একজন মানুষ মোট যতটা পরিমাণ খাবার খায় তাও একটা দানবীয় সংখ্যা বৈকি, জীবনের দৈর্ঘ্য যদি গড়ে ৭০ বছর করে ধরা যায়। একজন মানুষ তার সারা জীবনে যত টন পানি, রুটি মাংস, পশুপাখি, মাছ, শাকসবজি, ডিম, দুধ ইত্যাদি খায় তা চালান করতে রীতিমতো একটা ট্রেন লেগে যাবে! সত্যিই এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে একবারে না হলেও একজন মানুষ একটা ট্রেন ভর্তি জিনিস তার পেটে চালান করতে পারে।
দানবীয় সংখ্যার পূর্ববর্তী পোস্টসমূহঃ
সাধারণ তথ্যতে বিশাল সংখ্যা
দাবাখেলার কাহিনী
গণিত ও মহাপ্লাবন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।