আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শৈশবের গাড়ী হেল্পারী........উত্তেজনাকর একটি বেদনাদায়ক! বিভৎস! ঘটনা

পথের সন্ধানে পথে নেমেছি.........
১৯৮৩ সাল, তৃতীয় শ্রেনীর ফাইনাল পরীক্ষা সবে শেষ হল কয়েকদিন হয়েছে। হাতে অফুরন্ত সময়। পরের দিন কি কি করব প্রতিদিন রাতেই পরিকল্পনা করি আর ঘুম থেকে উঠে বাস্তবায়নের ধান্ধায় শলা পরামর্শ করি কিন্তু বেশীর ভাগ পরিকল্পনাই ভেস্তে যায় আমার প্রচন্ড মেজাজী বাবার জন্যে। আমার বাবা, তখনকার সময় তিনি ছিরেন প্রচন্ড রকমের রাগী একজন মানুষ আর একবারেই বিপরীত ধারার হয়েছেন আমার মা। বাবার কাছ থেকে আমরা ভাইবোনেরা যতটুকু শাসন পেয়েছি ঠিক ততটুকু আহ্লাদ পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে।

ছোটবেলায় আব্বার কাছে ভয়ে কোন আব্দার করিনি, সব দাবী দাওয়া আর প্রয়োজন মিটাতেন আম্মা। সে যাক, তা অন্য এক ব্যাপার, কখনও সময় হলে বলা যাবে। আমার দুর সম্পর্কের চাচাত ভাই, আমার থেকে এক ক্লাশ উপড়ে পড়ে। গায়ে গতরে আমার থেকে বেশ বড়। আমাদের ঠিক তিন বাড়ী পরেই ওদের বাড়ী।

বেশীর ভাগ আড্ডা আর লুকিয়ে লুকিয়ে মারবেল খেলা চলত ওদের বাড়ীর পাশের বাশঝাড় তলায়। পরীক্ষার পর প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর বেলা পর্যন্ত কখনও চলত মারবেল খেলা, কখনও ডাঙ্গুলী আবার কখনও পানিতে ডুম খেলা আরও ইত্যাদি ইত্যাদি- সে যে কি মজা লাগত তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। নিত্যদিন এসব করে করেই আর নতুন নতুন ফন্দি ফিকির করেই সময় কাটত সারাক্ষন। একদিন চাচাত ভাইটি সহ অন্য পাড়ায় গেলাম মারবেল খেলতে। খেলার এক ফাকে তখনই চোখে পড়ল আশ্চর্য! রকমের একটি গাড়ি! পিড়ি টাইপের একটি কাঠের উপড় একজন বসে আছে আর অন্যজন পিছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে, সে কি অপুর্ব! দৃশ্য।

প্রথম নতুন কিছু দেখা সে যে কি মজা আর সময়কাল যদি হয় স্বপ্নের সেই শৈশব!!!!!!!!! সেই অপুর্ব দৃশ্য দেখার পর থেকে আমার মারবেল খেলা শেষ হয়ে গেছে। সব বাদ দিয়ে ছুটে চলছি আশ্চর্য রকমের গাড়ির পিছন পিছন, সাথে চাচাত ভাই। এক সময় ওদের পটিয়ে পাটিয়ে সেই গাড়ীর সওয়ারীও হলাম, সে কি মজা! সেটাই আমার প্রথম গাড়ি চড়া। তারপর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম তার নির্মানশৈলী। ওদের কাছ থেকে জেনে নিলাম কিছু গুরুত্বপুর্ন তথ্য।

তারপর থেকে যে শুরু হল গাড়ী নির্মানের চেষ্টা, তখন আর অন্য কোন চিন্তা নাই, অন্য কোন খেলা নাই, সব বন্ধ। আমি আর চাচাত ভাই মিলে শুরু করলাম গাড়ী বানানোর অভিযান। গাড়ি বানানোর জন্যে যা দরকার তার মধ্যে শুধুমাত্র তিনটা বিয়ারিংই কিনতে হবে আর বাকী সব ফ্রি। যতটুকু মনে পড়ে তখন বিয়ারিং তিনটা কিনেছিলাম পনের টাকা দিয়ে। তারপর, দুইদিনের সেই বিশাল যজ্ঞের পর তৈরী করেছিলাম আমাদের সেই স্বপ্নের গাড়ি! স্বপ্নের ফেরারী! বানানোর পর থেকে খুশি আর উত্তেজনায় তর সইছিলনা মোটেই।

খাটফাটা দুপুরের রোদেই নামালাম আমাদের ফেরারী! বয়স এবং শারীরিক ভাবে বড় হওয়ায় প্রথমেই সে সওয়ারীর আসনটি চলে গেল চাচাত ভাইয়ের দখলে আর আমাকে বানাল তার হেল্পার। মনের রাগ দু:খ মনে চেপে রেখেই শুরু করলাম স্বপ্নযাত্রা। তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ফেরারী, চাচাত ভাই গাড়ীতে বসে উত্তেজনায় চিল্লাচ্ছে আর আমি তার উত্তেজনায় দ্বিগুন উৎসাহে গায়ের সমস্ত জোড় নিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছি। গাড়ি ছুটে চলছে সড়সড় করে। পিছনে জনা সাতেক সমবয়সী ছেলে।

একটা উৎসব মুখর পরিবেশ কিন্তু বিধি বাম! হঠাৎ চাচাত ভাইয়ের চিৎকার ওই!..ওই! ঠাকুভাই!....ঠাকুভাই!.............তারপর..........................................................................................................................................................চিৎ পঠাং........................................................................................................................................পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়ে। যাকে জন্মের মত ভয় পাই, তার সেই বড় ভাইয়ের সামনে, একবারে সদর রাস্তায়। যখন হুশে ফিরলাম তখন দেখি আমার দুই হাতের কনুই ছিলে গেছে কিন্তু ভয়াবহ যে দৃশ্য!!!! সেটা হল, চাচাতা ভাইয়ের চোখের নীচ থেকে গালের মাংস ছিলে গিয়ে হাড় দেখা যাচ্ছে আর রক্তে শরীর লাল এ লালারণ্য, কি এক বেদনাকর! বিভৎস! দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। তার অবস্হা দেখে আমার আর ব্যাথার কথা মনে নেই, দিলাম দৌড়, একবারে সুবোধ বালকের মত সোজা বাসায়। দীর্ঘ দিন পর মুখের সেই ক্ষতদাগটা তার এখনও আছে।

যখনই দেখা হয় মুখের সেই দাগটা দেখি আর তখনই মনে পড়ে সেই উত্তেজনাকর ভয়াবহ দিনের কথা। প্রায়ই কথায় কথায় সে এখনও বলে আমার কারনেই নাকি তার এ অবস্হা হয়েছিল। মাঝে মাঝেই মনে পড়ে সোনালী সেই শৈশবের কথা, হাসি কান্না আর দুরন্তপনার কথা। বড্ড ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় সেই সব দিনে................আহা! শৈশব, আমার স্বাদের শৈশব।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।