"তার ও আগে বৃষ্টি নামুক আমাদের বিবেকের মরভূমিতে/ সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক, /আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা,হৃদয়ের গ্লানি..."--শফিকুল ইসলাম
"শ্রাবন দিনের কাব্য"
পর্যালোচনায়ঃ শাম্মী খন্দকার
মনের আবেগ আর হৃদয়ের পুঞ্জিভূত বিরহ আকুতি প্রকাশের উপযুক্ত শৈল্পিক মাধ্যম হচেছ কবিতা । লেখনির মাধ্যমেই মনের সব রকম আবেগ,উচছাস ও যন্ত্রনার কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরা যায় । যা পাঠ করে পাঠক মন আনন্দে উদ্ভাসিত হয় আবার কখনও কবির বিরহবোধের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিমজ্জিত হয় শোক সাগরে । আর যে কবি পাঠক মনকে এ দু'মেরুতে অবস্থান করাতে পারে সেই সার্থক কবি ।
শফিকুল ইসলাম আধুনিক যুগের এমনই একজন কবি ।
যার কবিতায় প্রেম, বিচেছদ,যন্ত্রণা,আবেগ উচছাসের নানাবিধ রূপ শৈল্পিক শব্দে,ছন্দে প্রকাশিত হয়ে গভীর আবেগে পাঠক হৃদয় ছুঁয়ে যায় । শফিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে একজন উচ্চ পদস্থ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা । তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ "এই ঘর এই লোকালয়", দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি", "শ্রাবণ দিনের কাব্য" তার প্রকাশিত তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ । কবি তার মনের আবেগ কান্না ,বিরহ,কষ্ট সব কিছুই বর্ণনা করেছেন,প্রকৃতির সমস্ত রিনিঝিনি শব্দে বাজে হৃদয়ের গভীরে । এই সুর তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ-
"সুলতা আমার জীবন জুড়ে বর্ষা
আর কোন ঋতু নেই ।
বর্ষার ভরা আকাশের সাথে
আমি আমার অশ্রু সিক্ত
মনের মিল খুঁজে পাই।
আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।
বর্ষার মেঘ মল্লার রাগিনী
তাই আমার প্রিয়,
বর্ষার রিমঝিম বাদলের সুর
তাই আমারই মনের সুর।
সুলতা আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা"।
(সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত)
কবির মনের কান্না আবেগ বর্ষার সৌন্দর্য বর্ণনার সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে ।
কবির মনে জমাট বাধা অশ্রু বর্ষার ভরা আকাশে পুঞ্জিভূত মেঘের মত জমে থাকে । একটু স্পর্শ আর সহানুভূতির ছোঁয়া পেলেই ঝরে পড়ে অঝোর ধারায় । আরেকটি কবিতায় আমরা এমনটি দেখিঃ--
"সবার কাছে বসন্ত ঋতু
একান্ত প্রার্থিত একটি ঋতু ;
আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।
বর্ষার বাদলের সাথে তবেই
আমি আমার হৃদয়ের কান্না
মিশিয়ে নিতে পারি -
মিলিয়ে নিতে পারি
বাদলের রিমঝিম সুরের সাথে
আমার মনের অব্যক্ত কান্নার সুর।
আজ আমার জীবন জুড়ে বর্ষা
আজ আমার ভুবন জুড়ে বর্ষা।
আমি চাই আজ আমার প্রকৃতি জুড়ে
সারাক্ষণ বর্ষা নেমে আসুক ;
আর আমার মাঠঘাট লোকালয় জনপদ
সবই হুহু বন্যায় ভেসে যাক।
আর আমি সেই অতল অশ্রু সায়রে
অবগাহন করে যদি
এই হৃদয়ের জ্বালা কিছুটা
জুড়াতে পারি
হৃদয় জুড়ে এই শুধু সজল প্রত্যাশা"
(সবার কাছে বসন্ত ঋতু)
বেদনাবোধ আর বিরহবোধ জর্জরিত হৃদয় ব্যাকুল তার প্রিয়ার দর্শনের আর সান্নিধ্যের আশায় । প্রিয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে তৃষিত হৃদয় জুড়াতে চায় কবি । খুঁজে ফিরে কবি মন সেই স্থানগুলো যেখানে পাওয়া যায় প্রিয়ার স্পর্শ হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি । প্রিয়ার শরীরের গন্ধে মাতানো হাওয়া ।
কবি তার সমস্ত অন্তকরন দিয়ে মনের প্রকাশ করেছেন তার হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার স্মৃতি কথা । যা এককটি সার্থক কবিতা হয়ে পাঠক মনে ঠাঁই করে নিয়েছে । পাঠক মন কবিতাগুলো পড়ে কখনও কবির হারানো স্মৃতি বিস্তরিত ঘটনায় রোমাঞ্চিত হয় আবার পরণেই বিরহ জর্জরিত কবি হৃদয়ের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মনটা হয়ে উঠে ভরাক্রান্ত । একজন সার্থক কবিই পারেন পাঠক মনকে এভাবে নাড়া দিতে ।
এই কাব্য গ্রন্থটি পাঠ করলে মনে হয় এটি স্মৃতি বিজড়িত এ্যালবাম সদৃশ্য ।
যেখানে আছে অনেক আনন্দের ছবি, আবেগের চিত্র, বিরহের ছবি । পাতা উল্টালে মানস চোখে ভেসে উঠে এককটি জীবন্ত চিত্র । পাঠক মনকে কল্পনার রাজত্বে বিচরন করাতে জুড়ি নেই এই ট্র্যাজেডির কবি শফিকুল ইসলামের । তার কবিতার প্রধান থিমই হচেছ বিরহ । এই থিমকেই উপস্থিত করেই তার লেখনী চলে স্বপ্নের ডানায় ভর করে ।
এই কাব্য গ্রন্থের "মাধবী না বলে কয়ে" কবিতাটিতে আমরা কবির জীবনের শূন্যতা দেখতে পাই ।
"ঘরভরা শূন্যতা আজ আমাকে
গ্রাস করতে উদ্যত
মাধবী কথা বল ,মুখ খোলো
চোখ মেলো
তাকাও একটি বার মুখ তুলে আমার দিকে
তোমার ঐ দুটি চোখে আবার আমায়
বিশ্ব পৃথিবী দেখতে দাও"।
(মাধবী না বলে কয়ে)
প্রেম চিরন্তন । যুগে যুগে এই প্রেমের জন্য কতই না চরিত্র অমর হয়ে আছে । প্রেমের সার্থকতা মিলনে হলেও সব কাহিনীর চরিত্র এক সময় ট্র্যাজিক হয়ে যায় ।
তেমনি সুলতাও একটি ট্র্যাজিক চরিত্র ।
"সুলতা, ঐ নামের উচ্চারণে
আমার উষ্ণ হৃদয়ে বয়ে যায়
মুহুর্তে এক ঝলক সুবাতাস,
সুলতা,সুলতা আমার ইষ্ট নাম
যে নামের উচ্চারন মাত্রে
সঞ্জীবনী মন্ত্রের মত মুহুর্তে
মৃত্যুপথ যাত্রী আমাকে
ফিরিয়ে আনে জীবনের দিকে"।
(সুলতা তুমি শুধু)
এই কাব্য গ্রন্থটির প্রতিটি কবিতাই সুখ পাঠ্য । অল্প কথায় সবকটি গ্রন্থিত কবিতার পরিচয় দেয়াটা সম্ভব নয় । তবে এই কাব্য গ্রন্থটি সকল রকম পাঠকের মনেই দাগ কাটবে ।
ভাল লাগবে প্রতিটি কবিতা ।
কবির কাব্যগ্রন্থ পড়তে ভিজিট করুনঃ--
http://www.bbaria.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।