ঘটনাটা কার কাছে শুনেছি মনে নেই। এক কাফন চোরার গল্প। মৃত ব্যক্তিকে যে কাফনে আবৃত করে কবর দেওয়া হয়,চোরটির পেশাই ছিল সে কাফন চুরি করা। সে নিজেও চোর,তার ছেলেদেরকে ও নিজ পেশায় পারদর্শী করে তুলেছে। কাফনচোর নিজেই মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে।
মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে ছেলেরা তাদের প্রতি বাবার পক্ষ থেকে শেষ অসিয়ত জানতে চাইল। কাফনচোর সকরুণ চাহনিতে তাদের উপদেশ দিল,বাবারা এমন কাজ করবি যাতে লোকেরা আমাকে ভাল বলে। ছেলেরা বাবার মৃত্যুর পর বাবাকে ভাল বানানোর জন্য উপায় খুজতে লাগলো। অবশেষে তারা কাজ শুরু করলো । বাবা কাফন চুরির পর লাশ কবরে রেখে দিত।
ছেলেরা কাফন চুরির পর লাশ কবর থেকে তুলে কোন গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করলো। লোকজন সবাই তাদের বাবাকে কাফন চোর হিসাবে চিনত। কাফনচোরার ছেলেদের কাজকর্মে লোকজন বলতে শুরু করলো এদের বাবা অনেক ভাল ছিল । প্রয়াত কাফনচোর শুধুই কাফন চুরি করতো কিন্তু লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখতো না। অথচ এরা কাফন চুরির পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে।
কি খারাপ?আহারে .............এদের বাবা অনেক ভাল ছিল।
গল্প শেষ। এবার আসি মুল কথায়।
আমাদের দেশে ক্রসফায়ারের ঘটনা নতুন নয়। ২০০৪ সালে মহান এলিট বাহিনী তৈরী হওয়ার পর থেকে ১৬০০ মানুষ ক্রসফায়ার এর শিকার হয়েছে।
কি সন্ত্রাসী,চাদাবাজ,সর্বহারা,আওয়ামীলীগ ,বিএনপি ,জামায়াত,ভালমানুষ,
খারাপ মানুষ সবাই এর শিকার হয়েছে। ক্রসফায়ার এর পর এলিটদের পক্ষথেকে মিডিয়াকে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় বরাবরই। যার ভাষা একই রকম,গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধারে গেলে.................................................................................................................................... উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয়।
ঘটনায় কোন এলিট কে মারা যেতে দেখা যায়নি। আহতের ঘটনা সামান্য।
মাঝে মাঝে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সাজানো হয়। এলিট ফোর্স নিজেরাই অস্ত্র রেখে তা উদ্ধারের জন্য বিশাল অভিযান পরিচালনা করে। যা সম্পতি সাতক্ষীরায় সংগটিত হয়েছে। মাঝেমাঝে আক্রান্তের পরিবার থেকে এলিটবাহিনীকে ঘুষ প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। যাতে গ্রেফতারকৃতকে ক্রসফায়ার এর বদলে জেলে দেয়া হয়।
ঘুষ ঠিকই তারা রিসিভ করে কিন্তু ক্রসফায়ার থামেনা।
ক্রসফায়ার নিয়ে মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট,টকশো,কলাম,রিপোর্টিং ,নিহত ব্যক্তির পক্ষথেকে সংবাদ সম্মেলন এর প্রেক্ষিতে এলিট বাহিনী কাফনচোরার ছেলেদের ভুমিকায় অবতীর্ণ হল। তারা তাদের ক্রসফায়ার চেন্জ করলো। শুরু করলো গুপ্তহত্যা,গুম,অপহরণ। যা ক্রসফায়ারকেও হার মানালো।
প্রায় প্রতিনিয়তই জলজ্যন্ত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। এলিটদের নামে,কালো পোষাকে অসহায়দের গ্রেফতার করা হলেও থানাপুলিশ,এলিট কেউই স্বীকার করেনা। পরে আক্রান্ত ব্যাক্তির লাশ ডোবা, বিল,বালুচর,বা মাটির নিচে খুজে পাওয়া যায়। এপ্রেক্ষিতে আমরা ক্রসফায়ার ফেরত চাই। যাতে পরিবার আমার লাশটি পেতে পারে।
কারণ আমাদের জন্য ক্রসফায়ার অনেক ভাল ছিল।
একটা ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজনের শেষ ইচ্ছা থাকে তাকে নিজ হাতে দাফন করার। কিন্তু মানুষ তাও করতে পারছেনা। মৃত ব্যক্তিরও হয়তো জীবনের শেষ ইচ্ছা আমার লাশ আমার প্রিয়জনের হাতে তুলে দিও।
জম্মের পর থেকে মৃত্যুর ভার নিয়েই আমরা ছুটে চলি।
মৃত্যু হবেই জানি। সে মৃত্যুটা যদি হয় স্বাভাবিক,তা হলে মরেও শান্তি থাকবে। আর যদি মৃত্যুর পর আমার লাশ পরিবার পরিজন দেখতে না পায়,তাহলে মনোকষ্ট নিয়েই মরতে হল। আমি মরেও মানসিক শান্তিতে থাকতে চাই। একজন মানুষ হিসাবে স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবী আমি করতেই পারি।
সুঘ্রাণ কাদের
লন্ডন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।