সবকিছু বলতে হয় না.....
ক্রসফায়ার: হাইকোর্টের সুয়োমোটো
মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরধারা ইউনিয়নের সহোদর লুত্ফর খালাশী ও খায়রুল খালাশীকে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা করার দায়ে অভিযুক্ত করে র্যাব-৮-এর মেজর কাজী ওহিদুজ্জামান ও লে. হাসানের বিরুদ্ধে কেন আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হবে না—মর্মে কারণ দর্শাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট বিভাগ। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালক, র্যাব-৮-এর মেজর কাজী ওহিদুজ্জামান ও লে. হাসানকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমান ও বিচারপতি ইমদাদুল হক আযাদ সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল স্ব-প্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) সরকারের প্রতি এ রুল জারি করেন।
গত সোমবার রাতে দুই সহোদর লুত্ফর খালাশী ও খায়রুল খালাশীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। গতকাল এই সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এই সংবাদ দেখে আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে রুলটি জারি করেন। এর আগে তাদের আরও এক ভাই ক্রসফয়ারে নিহত হয়। এ নিয়ে সোমবার রাতে আরও দুই ভাই নিহত হওয়ার পর একই
পরিবারের ৩ জন ক্রসফায়ার নামক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।
লুত্ফর খালাসী ও খায়রুল খালাসীকে ক্রসফায়ারের আরও তিনদিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে র্যাব আটক করে। আটকের পর লুত্ফর খালাসীর ছেলে বাবুল খালাসী সংবাদ সম্মেলন করে বাবা ও চাচাকে ক্রসফায়ারের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
এই সংবাদ সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। লুত্ফর খালাসী একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। অল্প ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী মজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে তিনি সমাজসেবামূলক কাজেই ব্যস্ত ছিলেন।
এর আগে ২০০৫ সালে ক্রসফায়ারের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র একটি রিট মামলা দায়ের করে হাইকোর্ট বিভাগ সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিল। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের টুণ্ডা ইসমাইলকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রহুল আমিন ভুইয়া একটি রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন। এই রিট মামলার প্রেক্ষিতেও হাইকোর্ট বিভাগ সরকারের প্রতি কারণ দর্শানোর রুল জারি করেছিলেন। তবে এই দুটি কারণ দর্শানোর রুল জারির পর আর শুনানি হয়নি।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০ মাসে ১০৯ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যে গত অক্টোবরে ২৮ এবং সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ২৯ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। এর বাইরে চলিত মাসের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সহোদর লুত্ফর খালাসী ও খায়রুল খালাসীসহ ৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে র্যাব এবং পুলিশের পক্ষ থেকে কখনও বলা হয় ক্রসফায়ার, কখনও বলা হয় এনকাউন্টার; আবার কখনও বলা হয় আটক করতে গেলে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ র্যাব গঠন করার পর থেকে ৩১ আগসল্ট পর্যন্ত ৪৭২টি ঘটনায় ৫৭৭ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। তবে এই বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারে কখনও সংশ্লিষ্ট টার্গেট ব্যক্তিটি ছাড়া আর কেউ আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা কোনোদিন ঘটেনি।
আদালতের স্ব-প্রণোদিত রুল জারির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, এ রকম রুল জারির এখতিয়ার এই আদালতের নেই। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ফৌজদারি মামলার শুনানির এখতিয়ারভুক্ত আদালত। সাধারণত রিট শুনানির এখতিয়ারপ্রাপ্ত আদালত এ ধরনের রুল জারি করে থাকেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে রুলের জবাব দেয়া হবে।
এদিকে র্যাবের হাতে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান গতকাল এ প্রসঙ্গে আমার দেশ’কে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত রুল জারি করা ক্রসফায়ার ভিকটিমদের পক্ষে একটা বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ। যা অত্যন্ত অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা চ্যালেঞ্জ। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ও ক্রসফায়ার একসঙ্গে চলতে পারে না। তিনি বলেন, আদালতের এই রুল জারি ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।