রাজধানীর মাতুয়াইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশন (আবর্জনার স্তূপ) থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় অন্তত চারটি লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুটি মাথার খুলি, সাতটি পা, একটি শরীরের অংশসহ ১৬টি টুকরা (হাড়সহ) রয়েছে। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ১০টি সিমেন্টের বস্তার ভেতর থেকে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, খণ্ডিত অংশগুলো মিলিয়ে দুটি পূর্ণাঙ্গ দেহ শনাক্ত করা গেছে। এর একটি পুরুষ ও একটি নারীর। আরও অন্তত দুটি দেহের অংশ থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। ঘটনার পর পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা লাশের পরিচয় শনাক্তে তদন্ত শুরু করেছে।
ওয়ারী অঞ্চলের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করা হয়। এসব হাড়গোড় আসলে কতজনের, তা পরীক্ষা জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দেহে আঘাতের ধরন দেখে মনে হচ্ছে তাদের অন্তত এক মাস আগে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া এসব বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না। কতজন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়েছে, তা ডিএনএ ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। লাশগুলো কোথা থেকে কীভাবে এলো তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দেহের প্রতিটি অংশই ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে। করাত ব্যবহারও করা হতে পারে। আর এটি হত্যাকাণ্ড না অন্যকিছু, তা তদন্ত করে দেখা হবে। সূত্র জানায়, যেসব জায়গা থেকে মাতুয়াইলে আবর্জনা নিয়ে আসা হয় সেসব এলাকার কোথাও হত্যার ঘটনাটি ঘটতে পারে। পরে তা হয়তো গভীর রাতে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় ও ময়লার গাড়ির সঙ্গে এগুলো স্তূপে আসে। তবে কিছু কঙ্কাল স্ক্রু ও তার দিয়ে লাগানো ছিল। কঙ্কাল ব্যবসায়ীদের এটি কাজ কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, সংবাদ পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পেঁৗছে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
ডিসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকৌশলী, ল্যান্ড ফিল্ডের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এ এইচ এম আবদুল্লাহ হারুন জানান, এখানে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩০০ গাড়ি বর্জ্য ফেলার কাজ করে। টোকাইরা বর্জ্যের ভেতর থেকে পরিত্যক্ত বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করে। তারাই প্রথমে বিষয়টি দেখতে পেয়ে ডিসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জানায়। পরে ডিসিসির কর্মীরা পুলিশে খবর দেয়। তিনি আরও বলেন, এখানে বাইরের কোনো গাড়ি আসার সুযোগ নেই। ডিসিসিরই কোনো ময়লার গাড়িতে করে এগুলো আনা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ডিসিসির ওই ডাম্পিং স্টেশন। সাধারণ মানুষের চলাচল ওই এলাকায় নেই বললেই চলে। আশপাশে বাড়িঘর নেই। স্থানীয়রা জানায়, দিনের বেলায় পথশিশুরা ময়লার স্তূপ থেকে বিভিন্ন সামগ্রী খুঁজে বেড়ায়। সন্ধ্যার পর পুরো এলাকায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে ছিনতাইকারী বা অপরাধীদের ওই এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে ডিসিসির ময়লাবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের গাড়ি ওই এলাকায় কখনো দেখা যায় না। মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী আয়নাল হক ও রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো গতকালও সকাল ৭টার দিকে ভাঙারি কিনতে ময়লার স্তূপে আসেন তারা। পথশিশুরা তাদের জানায়, ভোররাতে আবর্জনার স্তূপের উত্তর দিক থেকে বস্তাবন্দী মানুষের শরীরের টুকরা পাওয়ার পর থেকে আর কেউ ভাঙারি সংগ্রহ করেনি। খণ্ডিত লাশগুলো উদ্ধারের পর পশ্চিম দিকের জলাশয়ের সামনে রাখা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।