যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
মানুষ তীব্রতম শোকও তিনমাসের বেশি বহন করতে পারে না। এরপর তার ভেতরের ব্যবস্থাপনা তার অস্তিত্বের জন্য তাকে সহনশীল করে তোলে, কোন না কোনভাবে মানিয়ে নিতে বাধ্য করে, আবার শুরু করতে প্রণোদনা দেয়। আবার শুরু করা; মানব জাতির এক অসামান্য হাতিয়ার, বিকশিত হবার এগিয়ে যাবার।
৩রা জুন রাতে স্মরণকালের ভয়াবহতম অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছেন অনেক মানুষ। এই মানুষগুলোর সাথে একাত্মতা বোধ করেছি কল্পনায়, গণমাধ্যমের কল্যাণে, প্রচারে, কষ্টে, বেদনায়। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম: ১০৯ এবং আরো বাড়ছে? এটা মৃত্যু নয় বন্ধু সিস্টেমেটিক কিলিং। গণমাধ্যমে দেখেছি লাশ বয়ে বেড়ানো কফিনের মিছিল, শোকের মাতম, কবরস্থান উপচে পড়া লাশের ভিড়। দেখেছি বার্ণ ইউনিটে মানুষের আহাজারি।
এরপর স্তিমিত হয়ে এসেছে শোক, মানুষ আবার নি:শ্বাস নিতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপের দোলা লেগেছে। আশাবাদের প্রতীক হিসেবে বিয়ে হয়েছে আক্রান্ত তিন কন্যার। আমরা সহজ সমাধানের শোকমুক্তির আনন্দে ভেসেছি। সরকার ঘটনা সামাল দিয়েছে।
এরপর ঘটেছে আরো নানা ঘটনা, আবিষ্কৃত হয়েছে পাটের জিনোম, মঞ্জুর আর মহিউদ্দিন নিয়ে উন্মাদনা বাঙলাদেশ, পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। প্রকৃতি শূণ্যস্থান পছন্দ করে না, আমাদের স্মৃতিগুলো ভ'রে উঠেছে নতুন অভিজ্ঞতায়।
এমনি প্রেক্ষাপটে আমার সুযোগ হয়েছিল নিমতলি ঘুরে দেখার। ইভেন্ট হিসেবে ছবি তোলার জন্য বড় ঘটনা হলেও খুব যেতে ইচ্ছে করেনি। মানে ঘটনা টাটকা টাটকা থাকার সময়েও।
শোকের ছবি, পরাজয়ের ছবি অব্যবস্থার স্কুপ আমাকে টানেনা তেমন। কারণ আমি এর পরিবর্তন চাই খুব তীব্র জোড়ালো আকুতি অনুভব করি বুকের ভেতরে যে আমি এর পরিবর্তন চাই। আর এই পরিবর্তন আকাঙ্খা নিয়েই এই ছবিব্লগ।
নবাব কাটরায় ঢোকার মুখের রাস্তা ছেয়ে আছে শোক পতাকায়, শোকের মাতমে। এই গলিতে ঢুকতে আমার ভয় হয়, দূর থেকে আমি দেখি মানুষের পরাজয়ের ছাপ দেয়ালে দেয়ালে লিখিত।
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া আচ্ছাদন কেবল কষ্টের কথা বলে।
এই জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতো কেউ, বৃষ্টি দেখতো, সব পুড়ে গেছে। আমাদের লোভ আর দুর্নীতির কাছে পুড়ে গেছে সেই চোখ।
ধ্বসে পড়েছে দেয়াল, যে দেয়াল আমরা বানাই নিরাপত্তার জন্য।
মাতমের গলিতে পরিণত হয়েছে প্রাণ চঞ্চল পথ
আমরা স্তুপ করে জমা করে রেখেছি আমাদের ব্যার্থতা
হয়ত এই মোটর বাইকের শব্দে ঘুম ভাঙতো কোন বালিকার, পাড়াত যুবকের সামর্থের গল্প বলত এই বাইক।
সমস্ত স্বপ্ন আর অস্তিত্ব ছাই হয়ে গেছে
বই বাঁধাইয়ের জীবিকা জ্বলেপুড়ে গেছে, খুলে গেছে জীবনের বাঁধন
এই কলতলায় হত পাড়াত আলাপ, কুশল বিনিময়, জীবনের উৎসটা পুড়ে গেছে
সাধের নিরাপত্তা, মৃত্যুর শৃঙ্খল হয়ে গেছে
আমাদের আবিষ্কার আমাদের ব্যবস্থাপনাও পুড়ে গেছে
পুরো আকাশ জুড়ে শোকের জলধারা, আর তার মাঝে প্রাণ
পুড়ে গেছে কমিটির মানুষ, পুড়ে গেছে নবাব কাটরা
আমরা যে কত বিপদজনক জীবনে আছি, নিজেদের দুর্নীতির কারণে এ যেন তারই স্মারক
কোন সাটার বন্ধ করা দরকার তা যেন ভুলতে বসেছি
এই চক্র আমার পুড়িয়ে দেবে নির্ঘাত, কোন স্প্রীং আর কাজ করবে না।
আমরা দেয়ালে দেয়ালে ঝোলাবো শোকের পতাকা
যদিও ঠিক একই সময়ে কাজ করবে এই শিশু আবার পুড়ে যাবার ঝুঁকি নিয়ে
আমরা স্তুপ করব ভোগের মল
এই হাস্যজ্জ্ব মুখগুলো ছিন্নভিন্ন হবার জন্য দিন গুনবো
আর শহীদ মিনার বানিয়ে দিয়ে আসবো পোড়া পুষ্পের স্তবক
এভাবে তো পুরো দেশ একদিন শহীদ মিনার হয়ে যাবে। আজ রাজনীতি হেলে পড়বে, কাল দালান, ভেঙ্গে যাবে পঙ্গু ব্যাবস্থাপনা আর হত্যা হবে শতকোটি মানুষের দল।
এমনটা তো আসলে হতে দেয়া যাবে না, আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই এমনটি হওয়াকে প্রতিরোধ করতে হবে। আজকে, এখন থেকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।