বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সম্প্রচার গোটা বিশ্বের অগণিত মানুষের কাছে এবার ভীষণ অপরিচিত ঠেকছে। প্রতিবছর খেলার মাঠে অন্যতম আকর্ষণ থাকে গ্যালারি থেকে ভেসে আসা দর্শকদের সমস্বরে গাওয়া গান। টিভির ভলিউম সবটুকু বাড়িয়ে না দিয়ে খেলা দেখে অনেকে মজা পান না।
কিন্তু এবার টিভির সাউন্ড অফ করে কিংবা অনেক কমিয়ে দিয়েই খেলা দেখতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। কারণ বিশ্বকাপের বিদ্যুৎচমক উত্তেজনার মধ্যে অসীম বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে একটানা বোঁ বোঁ শব্দ। মনে হতে পারে কোটি কোটি মৌমাছির ঝাঁক কারো ওপর হামলে পড়েছে! খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হজম করতে হচ্ছে এই শব্দ। যারা আসল কাহিনী জানেন না তারা মনে করছেন তাদের ডিশ লাইনে সমস্যার কারণে এই বোঁ বোঁ শব্দ করছে। শুধু টিভি দর্শকদের কাছে নয়, মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া সাধারণ দর্শক, সাংবাদিক, কিংবা ধারাভাষ্যকাররা সুস্থ কান নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন কি না সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে!
বিশ্বকাপের খেলায় এই বিরক্তিকর শব্দ কেন? প্রতিটি দেশের টিভি চ্যানেল নিজ নিজ জনগণের নিকট থেকে প্রশ্নবানে জর্জরিত।
যারা খেলা সম্প্রচার করছেন তারাও দ্বিধান্বিত। এই উৎপাত থেকে টিভি দর্শকদের মুক্তি দেয়ার প্রথম ঘোষণা দিয়েছে বিবিসি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই টিভি চ্যানেলটি বলেছে, দর্শকদের ‘মৌমাছি মুক্ত’ বিশ্বকাপ খেলা উপহার দেয়া হবে। বিবিসির ঘোষণার পর আরো অনেক টিভি চ্যানেল একই ঘোষণা দিয়েছে। অনেক ফুটবলারও বলেছেন এই যন্ত্রণা থেকে তারা মুক্তি পেতে চান।
তবে বিষয়টি যথেষ্ট ‘স্পর্শকাতর’ বলে কেউ প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে সাহসও পাচ্ছেন না।
জিনিসটি হচ্ছে ‘ভুভুজেলা’। এটি একটি প্লাস্টিক সিঙ্গা। কয়েক ইঞ্চি থেকে কয়েক হাত লম্বা এই সিঙ্গাটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতির একটি অংশ। দক্ষিণ আফ্রিকানরা ছাড়াও আরো অনেক ভিনদেশী দর্শক প্রায় ৪ ডলার মূল্যের এই সিঙ্গা কিনে স্টেডিয়ামে ঢুকছে।
পুরো ৯০ মিনিট জুড়ে তারা স্টেডিয়ামে উপস্থিত লোকজন এবং গোটা বিশ্বের টিভি দর্শকদের কানের পর্দা কতটা শক্ত তার পরীক্ষা নিচ্ছে! অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে স্টেডিয়াম এলাকায় কান বন্ধ করার ইয়ার প্লাগ ও তুলোর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে! এসব বিক্রি করে লাখপতি বনে যাচ্ছেন অনেকে।
ভুভুজেলা নামক এই সিঙ্গা ১৪৪ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। বিমান আকাশে উড়ার সময় যে শব্দ হয় তার চেয়েও এই মাত্রা অনেক বেশি। প্রথম দুই একদিন পর ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলে বিশ্বকাপের আয়োজকরা তাতে রাজি হয়; কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর মনে করে পরে তারা পিছু হটে। ইতিমধ্যে ২০ লাখের বেশি ভুভুজেলা বিক্রি হয়ে গেছে!
গতকাল বিবিসি এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
যদি ভুভুজেলা সিঙ্গা বিশ্বকাপের মাঠ থেকে না হটানো হয়, তবে আমরাই টিভি দর্শকদের স্বার্থে গ্যালারির সাউন্ড বন্ধ করে সম্প্রচার করব। কেবল ভাষ্যকারের এবং রেফারির বাঁশি ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাবে না’। ইতিমধ্যে বিশ্বের বহু গণমাধ্যম জরিপ চালিয়েছে, তারা ভুভুজেলা নিষিদ্ধ চান কি না। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় শতভাগ ফুটবল অনুরাগী জানিয়েছেন, তারা এই শব্দ থেকে মুক্তি চান।
মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলো অভিযোগে অভিযোগে জর্জরিত।
দর্শকদের দাবি, খেলা দেখার সময় তারা এই বিরক্তিকর শব্দ থেকে মুক্তি চান। ইউ ফাইভ টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যতই এটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতির অংশ হোক না কেন, এটি ‘দোজখের শব্দ’ ছাড়া আর কিছুই নয়, অসহ্য! তাই এটি ছেঁটে ফেলে খেলা সম্প্রচার করা হবে। ইতিমধ্যে ইউরোপ আমেরিকার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলো ফিফার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে এই শব্দের বিরুদ্ধে। রিয়েল মাদ্রিদ এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, এই শব্দের মধ্যে খেলোয়াড়দের মাঠে মন সংযোগে ব্যাঘাত ঘটছে, তাই ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করা হোক। ইতিমধ্যে ফ্রান্সের অধিনায়ক প্যাট্রিস এভরা বলেছেন, এই শব্দের কারণে তার দলের খেলোয়াড়রা স্টেডিয়ামে যেতে ভয় পাচ্ছেন! তারা হোটেলে বসে থাকতে চাচ্ছেন তবুও মাঠে যেতে চাইছেন না।
ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখকরা বলছেন, তারাও স্টেডিয়ামে বসে লিখতে পারছেন না। খেলা শেষ হতে না হতেই দুই কান বন্ধ করে ভোঁ দৌড় দিচ্ছেন হোটেলের দিকে!
(কপি পেস্ট-ইত্তেফাক অনলাইন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।