আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার সঠিক পথে আগাইতেছে, আমাদের ভাল লাগতেছে, বাচ্চালোগ তালিয়া বাজাও

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

আজকের জনকণ্ঠ পত্রিকাটা সবার পড়া উচিত। পত্রিকার শিরোনাম 'দেশ সঠিক পথেই'। শিরোনামটা পইড়া মনটা ভাল হয়া গেল। দেশ যদি সঠিক পথে আগায় তাইলে দেশের একজন তরুণ নাগরিক হিসাবে আমাদের খুশী হওয়ার কথা।

কিন্তু কেন জানি তেমন একটা খুশী হইতে পারলাম না। মনে হইলো, কোথাও একটা সমস্যা আছে। নিউজটা বলতেছে, আগামী ৫ বছরে মৌলবাদী রাষ্ট্র হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের নাই। জরিপে তরুণরা এইটা মনে করে। আগামী ৫ বছর কেন কোনো সময়েই বাংলাদেশের 'মৌলবাদী' রাষ্ট্র হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

এই কথা সত্য যে এইখানে ধর্মভিত্তিক বৈধ ও অবৈধ রাজনৈতিক দলগুলোর সীমিত জনসমর্থন আছে। কিন্তু 'মৌলবাদী' রাষ্ট্র বলতে যেমনে ধর্মভিত্তিক দলগুলার ক্ষমতা আরোহন বুঝায় সেই জিনিশ এইখানে হওয়ার সম্ভাবনা বহুকাল পর্যন্ত নাই। জনকণ্ঠের নিউজেই আছে, তরুণরা মনে করতেছে, আগামী ৫ বছরে দুর্নীতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বাহ, তাইলে এই জরিপের ভিত্তিতে কি এই শিরোনাম দেওয়া যায় যে দেশ সঠিক দিকে আগাইতেছে? নিউজটা পইড়া মনে হইলো, শিরোনামে একটা ধাপ্পা দিয়া একটা জরিপের ফল বিকৃতভাবে উপস্থাপন কইরা সরকাররে তেল দেওয়ার কাজ সারা হইছে। তেল দেওয়া খারাপ কিছু না।

তেল প্রাপ্য হইলে সরকার তা বেশি কইরা পায়। বাংলাদেশে প্রচুর মিডিয়া সরকাররে তেল দিতেছে। মিডিয়াগুলার বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কারণে সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার ঐতিহ্য বিগত সব সরকারের আমলে চইলা আসতেছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি আমলে তারেক রহমানের দুর্নীতি নিয়া ইঙ্গিতও দেওয়া যাইতো না। পত্রিকাগুলার কর্পোরেট স্বার্থের কারণে তারা সেলফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়া যায়।

নিজেদের এবং সরকারকে তারা এমনে নিরাপত্তা দেয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাতাবরণে। চাপা দেওয়া খবরগুলা যখন বাইরায়া পড়ে তখন মিডিয়া ও সরকারের এই কারসাজি বুঝা যায়। চাপা দেওয়া খবর ছাড়া পাইলে বল্গাহারা হয়া উঠে। যাই হউক, সরকারগুলা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সমর্থন উপভোগ করে সাধারণত এবং ভাবে দেশ ভাল চলতেছে, আমরা ভাল চলতেছি, মানুষ রাস্তায় নামবে না, কোনো সমস্যা হবে না। সাধারণত প্রায় সব মিডিয়াই ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে থাকে।

কিছু মিডিয়া স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি অবলম্বন করে। পক্ষে বা বিপক্ষে না গিয়া সাংবাদিকতা এথিকস নিয়া থাকে। তারা জনপ্রিয় হইতে পারে আবার নাও পারে, কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এই ধরনের স্বাধীন মিডিয়াগুলা সরকারের চাইতে বড় কোনো শক্তির সমর্থনপুষ্ট হয়। আর বাকী থাকে কিছু বিরোধী দল সমর্থিত পত্রিকা। এরা যেন তেন প্রকারে সরকারের সমালোচনা করতে থাকে।

এখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পত্রিকার এই বিভাজনের কোনো এদিক-উদিক হয় নাই। অধিকাংশ পত্রিকা সরকারকে সমর্থন দিছে। এমনকি স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতির পত্রিকাগুলাও সরকার সমর্থক হিসাবে ছদ্মবেশ ধারণ করছে। দুই একটা পত্রিকা বিএনপি-জামাত সমর্থক হিসাবে টিকে আছে। গণতান্ত্রিক আমলগুলাকে এই চর্চাই দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া চইলা আসতেছিল।

ভাবা যাইতেছিল, একটা অগণতান্ত্রিক শাসনের পর আওয়ামী শাসনেও এই অবস্থা চলবে। কারণ আওয়ামী লীগ কনফিডেন্টলি দেশ শাসন করবে এই আশা আছিল। কারণ, ১. তারা বিপুল জনসমর্থন নিয়া ক্ষমতায় আসছে। সংসদে তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ২. বাইরের ও ভেতরের শক্তিগুলা তাদের সমর্থন দিছে।

৩. অধিকাংশ মিডিয়া তাদের পক্ষে আছে। ৪. ধারণা করা যায়, জনগণও এখন পর্যন্ত মনে করে আওয়ামী লীগ বাকী সময় দেশ শাসন করুক। ৫. বিরোধী দলের অবস্থা খারাপ। জামাত বিচারের ভয়ে, আর বিএনপি কোন্দলে, মামলায়, দেশান্তরে অস্থির। বামদের বড় অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগ করতেছে।

আওয়ামী লীগের কনফিডেন্সের পঞ্চম কারণ হইতে পারে তার শক্তিশালী দলগত অবস্থান। মন্ত্রিসভায় প্রথমে সংস্কারপন্থীদের নেওয়া হয় নাই। ভাবা গেছলো এরা একটা ষড়যন্ত্র পাকাতে পারে। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয় নাই। কাচা মন্ত্রীরা পারবে না এমন আওয়াজও বেশি দিন টিকে নাই।

প্রশাসন আওয়ামী লীগ নিজের মতো কইরা সাজাইছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের মাস্তানী, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, খুনাখুনি আছে কিন্তু সেইটা সরকারের সমস্যা না, জনগণের সমস্যা। বলা হয়, এরকম ভাল অবস্থা কোনো সরকারের অতীতে ছিল না। সরকার যেমনে বিডিআর বিদ্রোহ সামাল দিছে আর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করছে তাতে বুঝা যায় অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানেই তারা আছে। আশা করা যাইতেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে তাদের এমন শক্তির দেখা পাওয়া যাবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কয়টা ঘটনায় মনে হইতেছে, যতটা ভাবা গেছলো ততোটা না, সরকার আসলে কনফিডেন্ট না। অপেক্ষাকৃত ছোট ও অগোছালো বিরোধী দলকে তারা আক্রমণ করা শুরু করছে। যেইখানে বিএনপিকে স্বাধীনভাবে বাড়তে দিলে তারা ৫ বছরে পুরা গুছাইতে পারবে বইলা মনে করা হয় না সেইখানে সরকারের এই আগাম আক্রমণ একটু বেশি সতর্কতা। যাই হোক, আওয়ামী লীগ বিএনপির রাজনীতির ধারা এই। ফলে তাদের বিবাদ মাইনা নেওয়া যায়।

কিন্তু সরকার যখন বিভিন্ন টিভির লাইভ টক শো, নির্দিষ্ট গেস্ট, টিভি চ্যানেল, পত্রিকা, ফেসবুকের মতো মিডিয়াগুলা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে যায় তখন একটু নড়ে চড়ে বসতে হয়। এইটা ঠিক যে, এই সব মিডিয়া বা অনুষ্ঠানই ভিন্ন ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ হইছে। কিন্তু এর মধ্যে একটা সূত্র আছে। বিটিআরসি একটা সূত্র। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটা সংগঠন তৈরি হইছিল গুরুতর অপরাধ দমন সম্পর্কিত বিশেষ কমিটি।

এই কমিটি দুর্নীতি দমন কমিশনে অফিস করতো। বিভিন্ন জনের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতো, অভিযানও পরিচালনা করতো। পরে জানা গেল, এই কমিটিটাই অবৈধ। এমনকি এমনও জানা গেল, এই ধরনের কোনো কমিটি কোনো কালে আছিল না। প্রশ্ন তাইলে ওই কমিটির অভিযান পরোয়ান এইগুলার কী হবে? এই প্রশ্ন কেউ তোলে নাই, উত্তরও পাওয়া যাবে না।

সেই প্রশ্নে উত্তর আপাতত আমাদের দরকারও নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে বিটিআরসির কার্যক্রমে ওই সংস্থাটির সঙ্গে তাদের তুলনা করার ইচ্ছা হয়। ধরো, মারো, কাটো নীতিতে চলতেছে প্রতিষ্ঠানটা। প্রথমে সবগুলা দেশী ফোন কোম্পানি বন্ধ করলো, পরে দুইটা টিভি চ্যানেল বন্ধ করলো, এরপর ফেসবুক তাদের হামলার শিকার হইলো। অপরাধ হইলে আইন আছে, বিহিত আছে কিন্তু ধরো মারো কাটো নীতিতে বিটিআরসি এমন অবস্থা তৈরি করছে যে, মানুষ বিশেষ কইরা তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল বলতে এখন ডিডিজিটালাইজেশন বুঝতেছে।

ডিজিটাল মানে এখন ডিজিটাল-বিরুদ্ধ কাজ করা। এই সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বইলা তরুণদের সমর্থন নিছিল, সেইটা এখন এক বিটিআরসির কারণেই কেউ বিশ্বাস করতেছে না। শেষ ফেসবুক বন্ধ করার ঘটনায় সরকার ব্যাপক জনসমর্থন হারাইছে। সরকার যদি তরুণদের সমর্থন ফিরে পাইতে চায় তাইলে বিটিআরসিকে সামলাইতে হবে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।

বিচার আপাতত মতীন হয়া আছে। মতীন পরিস্থিতিতে কবে সেইটা সঠিক খাতে আসবে কেউ জানে না। গণতন্ত্রমনা মানুষ মনে করে আওয়ামী লীগ সরকার টিকে থাকুক। ৫ বছর কেন আগামী নির্বাচনেও তারা আসুক। কিন্তু আওয়ামী লীগের চালচলে মনে হইতেছে তারা নিজেরাই সেইটা চায় না।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নানা কথা শোনা যাইতেছিল। তখন বলা হইতো, ওই সরকার রাজনীতিকদের এমন ছবক দিছে যে, দেশ নাকি কোনোদিন আগের অবস্থায় ফিরবে না। দেশের রাজনীতিকরা দুর্নীতির কথা সহজে ভাববে না। মিডিয়ার স্বাধীনতার উপর কেউ চড়াউ হবে না। আরও যে কতকিছু হবে না তার লিস্ট দীর্ঘ।

সবচেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগ বিএনপি মিলে এমন ভাই ভাই হয়া দেশ চালাইবে যে সেইটা দেখার মতো হইবে। এইসব সায়েন্স ফিকশন মিথ্যা প্রমাণ কইরা মাত্র ১৮ মাসে আওয়ামী লীগ দেশকে আগের অবস্থায় ফিরায়া নিয়া গেছে। এর একক কৃতিত্ব তাদেরই পড়তে হবে। আমি এখন ফখরুদ্দিন আহমেদের প্রথম দিনের বক্তৃতাটার কপি খুঁজতেছি। পইড়া দেখতে চাই, সায়েন্স ফিকশন হিসাবে।

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক গতিবিধি, রাজনীতি, কথাবার্তা দেইখা মনে হইতেছে দলটা মনে করে তাদের জনসমর্থন আর নাই। ফলে, তারা ভয় পাইছে। ক্ষমতাসীনদের ভয় মারাত্মক, এইটা হামলার আকারে প্রকাশিত হয়। আওয়ামী লীগের ভয় এখন হামলার আকারে প্রকাশিত হইতেছে। এই অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হইলো সরকারকে সমর্থন দেওয়া।

তাদের ভয় ভাঙানো। নইলে জাতির কপালে দুঃখ আছে। এই কথা সত্য, আওয়ামী লীগ আমাদের পানি-বিদ্যুত-গ্যাস কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাইতে পারে নাই। তাদের দলের মাস্তানরা দেশে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করছে।

দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলার মাজা ভাইঙ্গা দেওয়া হইছে। দেশকে কোনো যথার্থ নীতিতে চালাইতে তারা পারতেছে না। তরুণদের জন্য কোনো স্বপ্ন নাই তাদের কর্মসূচিতে। চাকরির ব্যবস্থা নাই। এই নাইয়ের তালিকা দীর্ঘ।

হাভাতে এই দেশে এইটা থাকবেই। কিন্তু আমাদের দরকার গণতন্ত্র। গণতন্ত্র না থাকলে নাইও থাকবে না। তাই আসেন আমরা সরকারের ভয় ভাঙাই। কারণ ক্ষমতাসীনদের ভয় হামলার আকারে প্রকাশিত হয়।

নিজেদের স্বার্থেই আমাদের উচিত সরকারের হাত শক্তিশালী করা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.