সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
হারানো সুরের বেদনা
ব্লগে অনেকেই অনেক সুন্দর সুন্দর গান পোস্ট দেন-সেই সংগে লিংক দিয়ে দেন। যাতে করে পাঠক গানের বাণী পড়েই তার প্রিয় গানটি শুনেও তৃপ্ত হতে পারেন। ব্লগার "হ্যামিলনের বাশী ওয়ালা" প্রায় নিয়মিত পুরোনো দিনের কিম্বা বর্তমান সময়ের অনেক জনপ্রিয় গানের পোস্ট দেন। আমি সুযোগ পেলেই সেইসব গান শুণতে চেস্টা করি। সেই পুরোনো দিনের গানের সাথে বর্তমান সময়ের গানের কী অমিল! তা শুধু গানের কথায় নয়, তাল-লয়-ছন্দ সব ক্ষেত্রেই বিষদৃশ্য!
হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালা যেসব গানের পোস্ট দেন-সেই গানগুলো অনেকের কাছেই অত্যন্ত প্রিয়, অনেককেই করে নস্টালজিক।
এর বিপরীত চিত্রঃ- কিছুদিন পুর্বে ফার্ম গেইট ওভার ব্রীজে উঠেছিলাম। ওখানে ডুয়েট গান বাজচ্ছিল(পুরুষ শিল্পীটির নাম কালাম বয়াতী, আর মহিলা শিল্পীকে বলা হয় "বাউল সম্রাজ্ঞী"(ভাগ্যিস ফেন্সী সম্রাজ্ঞী বলা হয়না), তিনি এখন একজন এম পি) ! পাঠক গানের কথাগুলো লিখতে আমার লজ্জা লাগছে-তবুও লিখতে বাধ্য হচ্ছি-গানের কথা কতটা খারাপ হতে পারে-তা আপনাদের জানানোর জন্যই। ছেলে শিল্পীঃ-"ও ছেমড়ী তোর জাম্বুরা গাছে পাকা জাম্বুরা ঝোলে------(বাকীটুকু লিখলে পি সি অপবিত্র হয়ে যাবে) মেয়ে শিল্পীঃ-"ও ছ্যামড়া তোর পিন্দনের কাপড় রসেতে ভেজে"(বাকীটুকু নাইবা লিখি)।
এগুলো কি ধরনের গান? কারা লেখে এই গান? কারা করেই এই গানে সুর? কারা গায় এই গান? একটা গানের সাথে গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। বুঝিনা এইসব গানের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত এই তিন ধরনের মানুষ কি মানুষের পয়দা! মানুষ হলে এই গান কি করে লিখে? কিকরে গায়! গানের নামে এই অসভ্যতা শুনলেই বন্দুকের(Gun)কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে ক্রস ফায়ারের কথা।
এদেরকে কি ক্রস ফায়ারে দেয়া যায়না? আসলে কেনো এমন হয়? কেনো এমন হলো?
গীতিকারদের সৃজনশীলতা কি হারিয়ে গিয়েছে? সুরকারদের সৃজনশীলতা কি শেষ হয়ে গিয়েছে? সুর কি হারায়? শিল্পীরা কি হারায়? সত্যি বলছি-এমন সব প্রশ্ন আমাকে বিচলিত করে ফেলেছে! এই প্রশ্নগুলো আমাকে বার বার আন্দোলিত করে। সুরের ইন্দ্রজাল মানুষকে ভাবনার জোয়ারে ভাসায়, আবেগ ছুঁয়ে যায়। এক সময় সুরের মোহনায় হারিয়ে যেতাম কোনো এক অজানা স্বপ্নের জগতে। সুর শেখাতো কীভাবে ভালোবাসতে হয়। গানের কথা শেখাতো কি ভাবে ভালোবাসতে হয়।
গানের সেই চিরন্তন কথা, সেই চেনা সুর এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। চেনা গান অচেনা সুরে রিমিক্স করে গাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এভাবে চেনা গানের চেনা সুর বাদ দিয়ে অচেনা সুরে গাইলে একদিকে যেমন গান তার মৌলিকত্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে থাকছে না গানের সেই আবেদন। কিছু বিখ্যাত গান গাওয়া হচ্ছে ভিন্ন সুরে। অথচ যাঁর কণ্ঠে ওই গানটি বিখ্যাত হয়েছে, তাঁর অনুমতি পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে না।
এক সময় গান রচনা করা হতো এই ভেবে যে, গানটি যেন তার আবেদন ধরে রাখতে পারে আজীবন। কিন্তু এখনকার গান সৃজনশীল মনোজগতের বিনোদন হিসেবে কাজ করতে অক্ষম। ক্ষণিকের আবেদন আর সাময়িকভাবে সুস্থ মনোজগতে অস্থির চিন্তা-ভাবনা জাগানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। গান কে না ভালোবাসে (?) প্রতিটি মানুষই মনে মনে, অনুচ্চস্বরে কখনো বা উচ্চস্বরে নিজের অজান্তেই গেয়ে ওঠে প্রিয় কোনো গান। আবেগমিশ্রিত মায়াবী সুরের কারণেই গানের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা আর মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
কথা, সুর আর কণ্ঠ। । এই তিনের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চির আবেদনময়ী কোনো গান, যেটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে আজীবন। সে সুর মানুষ কখনো ভোলে না; সে গান কখনো হারিয়ে যায় না। কিন্তু এখনকার গান আগের মতো কেউ আর মনে রাখে না।
শুধু তাই নয়, এখনকার গানে স্থান পায় না আর কোনো সর্বহারা মানুষের বেদনার কথা; স্থান পায় না পথশিশু কিংবা ক্ষুধায় কাতর অনাথ শিশুর যন্ত্রণার কথা। মোটামুটি ভাবে বলা যায়-বর্তমানের প্রায় সকল গানই "তুমি-আমি/ ভালোবাসাবাসি"র গান। অথচ বাস্তবে সেই ভালোবাসাবাসিরও কোনো স্থান নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।