আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোয়েন্দারা করিয়া প্রমাণ করিল যে, তাহারা পারে। তাহলে পাবলিকের জন্য পারে না কেন ?

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ ও মহানবী (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের জের ধরে ফেসবুক বন্ধ বাংলাদেশে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার দায়ে একজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। এই গ্রেফতারের মাধ্যমে গোয়েন্দারা প্রমাণ করে ছাড়ল যে, তারা ইচ্ছা করলে যে কোন অপরাধীকে খুব দ্রুতই গ্রেফতার করতে পারে। অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে এবং ফেসবুকও বন্ধ হয়েছে। যে ছুরি দিয়ে খুন করা হল, সেই ছুরি খুনের জন্য দায়ী নয়, দায়ী হল ছুরি ধরা হাতের মালিক।

গ্রেফতার করা হয় খুনীকে এবং খুনের জন্য দেশে ছুরির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় না। যদি অপরাধের জন্য অপরাধ সংগঠনের উপকরণটি নিষিদ্ধ করা হয়, তবে দেশে লাঠি, দা, বটি, কুড়াল, ছুরি, চাকু ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার্য অসংখ্য জিনিস নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। এমনকি স্ক্র ড্রাইভারও নিষিদ্ধের তালিকায় পড়ে যেতে পারে। যাকগে ফেসবুক নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছেন যে, ইচ্ছা করলে সরকার যে কোন সাইট আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সরকার কি ভেবে দেখেছে ফেসবুক বন্ধ করার ফলে তরুণরা ফেসবুকের বিকল্প খুঁজে দেখছে এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ সাইটের দিকে ঝুঁকছে যেগুলো ফেসবুকের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীন ? ওই সব অখ্যাত সাইটের দিকে যুবসমাজ ঝুঁকলে সেটা তো আরও ক্ষতিকর হবে।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আমরা প্রায়ই পত্রিকায় খবর পাই, কোন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী বিশেষত যুবলীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীরা নানা জায়গায় ইভটিজিং করে বেড়াচ্ছে। ইভটিজিংএর সঙ্গে জড়িতদের কখনও কোন রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এমন কোন খবর আমরা এখনও পাই নি। অন্য দিকে, ইভটিজিং এর সাথে জড়িত হয়েছে মোবইল ফোন ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট। প্রায়ই পত্রিকায় খবর বেরোয়, কোন মেয়েকে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের সময় মোবাইল ফোনে তার নগ্ন ছবি তুলে রেখেছে এবং সেটা সিডি আকারে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে।

কখনও কখনও সেই নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করছে ধর্ষিতা পরিবারকে। তাদের হুমকি দিয়ে ব্লাকমেইল করছে এবং চাঁদা আদায় করছে। এ দিকে কেউ কেউ কোন মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ছবি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিচ্ছে। এই সব সিডি বা ইন্টারনেটে ছবি ছাড়ার মাধ্যমে কত কত মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে , সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। তাছাড়া এই মেয়েরা দিনের পর দিন ব্লাকমেইলের শিকারও হচ্ছে।

কিন্তু এই সব জঘন্য কাজে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারের কোন খবর আমরা পাই না। আমরা এতকাল ভেবে এসেছিলাম, গোয়েন্দারা এতটা দক্ষ নয় যে, তারা এই সব অপরাধীকে ধরতে পারবে। কিন্তু এবার ফেসবুকে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা নিজেরাই প্রমাণ করেছেন যে, তারা ইচ্ছা করলে এই ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারেন । তাহলে যারা মেয়েদের নগ্নচিত্র ইন্টারনেটে প্রকাশ করছে এবং যারা মেয়েদের নগ্নচিত্র গোপন ক্যামেরায় ধারণ করছে তাদের কেন গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হচ্ছে গোয়েন্দারা ? যারা মেয়েদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির সাথে জড়িত তাদের কেন সরকারী দল থেকে বহিষ্কার করা হয় না ? যারা ধর্ষণ করার সময় নগ্নচিত্র ধারণ করে এবং সিডি আকারে বাজারে ছাড়ে তাদের কেন কঠিন বিচার হয় না ? গোয়েন্দারা তো ইচ্ছা করলেই অপরাধীকে ধরতে পারে, তাহলে কেন আম-জনতার ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয় ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি একজন নারী এবং একজন মা। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন একজন নারীর সম্মানহানি কত বড় অপরাধ।

ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ধর্ষণকালে নগ্নচিত্র ধারণ, গোপন ক্যামেরায় নগ্নচিত্র ধারণ, সিডি আকারে বাজারে প্রকাশ এবং ইন্টারনেটে প্রকাশ - এই সব অপরাধ নারীকে চরমভাবে অবমাননা করে। সরকারী দলের অনেকে এই সব অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পায় না বলে অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। সামান্য কিছু ঘটনা পত্র-পত্রিকা মারফত আমরা জানতে পারি। কিন্তু অপরাধী সরকারী দলের হলে তাকে পুলিশ প্রকাশ্যে দেখলেও খুঁজে পায় না।

সেক্ষেত্রে সরকার প্রধান এবং দলীয় প্রধান হিসেবে আপনি এই সব কুলাঙ্গারকে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সেই সাথে এই সব অপরাধী যে দলেরই হোক বা কোন দলের না হোক, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে একটি কথা স্মরণ রাখা দরকার, অপরাধ সংঘটনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়তেই থাকবে। তাই বলে আমরা প্রযুক্তিকে নিষিদ্ধ করে বসে থাকলে চলবে না। বরং প্রযুক্তির অপব্যবহারকারীদেরই ঠেকাতে হবে, ব্যবহারকারীদের নয়।

আমরা প্রযুক্তিবান্ধব না হলে আমাদেরই ক্ষতি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.