আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৈশোরের বইঃ আমার প্রিয় তিন গোয়েন্দারা...

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত একটা সময় ছিলো যখন তিন গোয়েন্দার বই ছাড়া একটা দিন কল্পনাই করতে পারতামনা। কেমন বুঁদ হয়ে থাকতাম এক একটা বই এর ভেতর! অবস্থাটা এমন ছিলো যে তখন যে ৫০/৬০ টা ভলিউম বের হয়েছিলো তার কোনটার মধ্যে কি বই আছে তার সবটাই ছিলো আমার নখদর্পনে। প্রতিটা বইয়ের নাম সিরিয়ালি মুখস্থ বলে যেতে পারতাম। কি প্যাসনেটটাই না ছিলাম!! যে মনযোগ আমি ওদিকে দিয়েছি তার কিয়দাংশও যদি সে সময় পাঠ্যবই এর পেছনে দিতাম, বোধ করি, বাবা মা আমাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আরেকটু কম করতেন। এবার আষাঢ় মাসের প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।

সারাদিন টিপটিপ কিংবা ঝম ঝম যে ভাবেই হোক বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। ছুটির দিন। তাই বাইরে বের হবার তাড়া নেই। এই সময় বিকেল গুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। বৃষ্টি পড়ছে।

আলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ এর মধ্যেই একটা অপার্থিব ভাব চলে আসে। এরকম একটা সময়ে বই পড়তে যে কি আনন্দ তা যে বুঝতে পারলোনা তার জন্মই বৃথা। আজকালকার বই বিমুখী ছেলে মেয়ে গুলো যে কি মিস করে চলেছে তা তারা নিজেরাও বুঝতে পারছে না। তিন গোয়েন্দাকে হঠাৎ খুব মিস করছি এই একনাগাড় বৃষ্টির কারণেই।

তখন এইরকম বৃষ্টি পড়লে আমি সোজা গিয়ে আমার জানালার পাশে বসে যেতাম। রহস্যের বই গুলোতে বেশির ভাগ সময়েই বৃষ্টি পড়ে। বাইরের বৃষ্টি, বইএর ভেতরের বৃষ্টি, দুটোয় মিলে সে কী অতীন্দ্রিয় পরিবেশের সৃষ্টি করতো তা বর্ণণা করার মত না। বই পড়তে পছন্দ করি কারণ তা পরিবেশের মধ্যে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করে। এখন আমি এক জগৎ এ আছি।

বই এর ভেতর জগৎটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমার প্রিয় তিন গোয়েন্দা গুলোও একটু অন্যরকম। পড়লে মনে হয় চারপাশে কেমন যেন গুমোট একটা ভাব। কিছু একটা যেন ঠিক নেই! মনে পড়ে ‘প্রেতের ছায়া’ বইটির কথা। পড়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই।

কিন্তু কিশোর মুসা রবিন এর দেখা পাচ্ছিনা। অথচ এদিকে কয়েকটা মেয়ে তাদের বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে এসে একের পর এক মরতে বসেছে! ওই বই এর শেষে ছোট খাটো এমন এক টুইস্ট ছিলো যে রীতিমত চমকে গিয়েছিলাম। ‘বিপজ্জনক খেলা’র কথা বলা যায়, যেখানে এক পাগল লোকের খপ্পরে পড়েছে তিন গোয়েন্দা আর তাদের বন্ধুরা। নির্জন এক দ্বীপ এর মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদেরকে। হাতে কিছু সময় দিয়ে বলা হল পালাও ওই বনের মধ্যে।

আর এক ঘন্টা পর তোমাদেরকে শিকার করা হবে!! কাহিনীটা খুব জনপ্রিয় এক বিদেশী বইএর। কিন্তু জানিনা এ বই গুলো পড়তে পড়তে যেমন গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যেতো মূল বইগুলো পড়লে তেমনটা হবে কিনা। রকিব হাসান, লেখকের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো সিরিয়াল কিলারের কাহিনী নিয়ে লেখা আরেক ফ্রাঙ্কেস্টাইন, ভ্যাম্পায়ারের দ্বীপ, সৈকতে সাবধান, মায়াজাল, রাত্রি ভয়ঙ্কর, গ্রেট মুসাইয়োসো… এখন বুঝতে পারছি টুইস্ট আর সিরিয়াল কিলারের মুভি গুলো এতো ভালো লাগে কেনো! এখন মনে হয় একটু বড় হয়ে গেছি। সেবা প্রকাশনীর ছোট সাইজের পেপারব্যাকে তিন গোয়েন্দা পড়া এখন সম্ভবত আমার গা গতরের সাথে মানানসই না, কিন্তু যখন কোন বই এর পেছনে ‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা আমি কিশোর পাশা বলছি অ্যামিরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে।

হলিউড থেকে মাত্র কয়েকমাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম…………’ দেখি তখন নিজেকে সংবরণ করা এখনো একটু কষ্টসাধ্য হয়েই দাঁড়ায় বৈকি!!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.