আমার মন খারাপের পরেও, আমি আছিরে তোর পাশে...
ভেতরে ভেতরে হীরা অস্থির হয়ে ওঠে। কিছু একটা তো করতে হবে। নইলে মা-কে নিয়ে কি করে চলবে? হীরা নামটি ভাইয়ার দেয়া। ভাইয়াকে এমন একটি নাম রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেছিলেন ”তুই যে আমার কাছে হীরার চেয়ে দামী”। সেই ভাইয়া, হঠাৎ কি হলো ভাইয়ার? কিছুই জানা যায়নি এখনও।
ভাইয়ার মোবাইল বন্ধ। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে হীরা। ওর একটা ইন্টারভিউ আছে আজ সকাল ১১টায়। সদ্য অনার্স ফাইনাল দিয়েছে। চাকরীর যোগ্যতা হিসাবে চাওয়া হয়েছে গ্রাজুয়েট।
হীরা গ্রাজুয়েট না হয়েও দরখাস্ত করেছিলো, তাকে ডেকেছে ইন্টারভিউতে। অনভ্যস্ত হাতে একটা শাড়ি পড়ে বের হয়, যাতে একটু ম্যাচিউরড্ লাগে ওকে। বুকের ভেতর হাজারো অনিশ্চয়তার তোলপাড়।
সম্পূর্ন কার্পেটে মোড়া ফ্লোর, অটবির ওয়ার্ক স্টেশন- অফিসটা দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেল হীরা। ”ইশ্, যদি চাকরীটা হতো”.. মনে মনে ভীষনভাবে কামনা করতে থাকে চাকরীটা।
১১টায় ইন্টারভিউ হওয়ার কথা। এখন বাজে ১২টা। আশ্চর্য! হীরার মেজাজ খারাপ হতে থাকে। হঠাৎ বেশ স্মার্ট একজন ভদ্রলোক রুম (যেটাকে অফিসের বস্ এর রুম বলেই মনে হয়েছে) থেকে বের হয়ে বাইরে চলে গেলেন। হীরা রিসেপশনে যে লোকটা বসেছিলো সটান তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
তীক্ষন কন্ঠে জানতে চায় ”আমাকে আসতে বলা হয়েছে ১১টায়। দেড় ঘন্টা অলরেডী পার হয়ে গেছে। আমাকে দেরী করে আসতে বললেই হতো। ” হীরা-র মায়াবী মুখে হঠাৎ বেমানান রাগের ছটা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খায় লোকটি। আমতা আমতা করতে থাকে।
এমন সময় পেছন থেকে একটি ভরাট কন্ঠস্বর বলে ”আপনি আসুন আমার সঙ্গে”। " ইন্টারভিই হয়। তাকে আবার বসতে বলা হয়। দুপুর পর্যন্ত বসে থেকে যে লোকটি বাইরে গিয়েছিল সে ফিরে এলে তার সাথে কথা বলা হয়। লোকটি হীরা-কে জিঞ্জেস করে ”কম্পিউটার জানা আছে?” উত্তরে হীরা বুকের ভেতরের উত্তাল ঢেউ সামলে বলে ”না”।
" বাসায় হীরা-র একটি ডেস্কটপ আছে। সেটাতে গান শোনা ছাড়া আর কিছু করা হয়নি এযাবৎকাল। ভীষন আফসোস হয় হীরার। কেন সে কম্পিউটার-টা একটু প্র্যাকটিস করলোনা। চাকরীটা বুঝি হলোনা।
লোকটা হীরা-র দিকে ডেইলী স্টার এগিয়ে দিয়ে নির্ধারিত একটি অংশ বাংলায় অনুবাদ করতে বলে। আবারও বুকের ভেতর বড় একটা ঢেউ আছড়ে পড়ে। নিশ্চয়ই ভুল হবে। চাকরীটা হবেনা। কি হবে তাহলে?? প্রমাদ গোনে হীরা।
কোনরকম কিছু একটা উত্তর দেয় । হীরা দুটি শব্দ বলে তো লোকটা বলে পাঁচটা। তারপর অন্যান্য কিছু হালকা কথাবার্তা। লোকটা তাকে দুদিন পর জয়েন করতে বলে। হীরা কি বলবে? তার কি লোকটাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ? কিভাবে ধন্যবাদ দেবে সে? লোকটা তার কত বড় উপকার করেছে সেকথা হীরা তাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেনা।
কোন কথা না বলেই বিদায় নেয় হীরা।
পজিশন রিসিপশনিস্ট। বেতন সাড়ে চার হাজার টাকা। আজব! এখন যে ফ্ল্যাটে মা-কে নিয়ে ও থাকে তার ভাড়াই তো মাসে সাত হাজার টাকা। বাসা ছাড়তে হবে।
ছোট্র কিন্তু ছিমছাম একটা বাসা নিতে হবে। সেটা ফ্ল্যাট বাড়িতেই হতে হবে। মা ফ্ল্যাট ছাড়া থাকতে পারবেনা। ছোট্র বাসায় এত ফার্নিচার ধরবেনা। বিক্রি করতে হবে।
বিক্রির কথাটা মনে হতেই বুকের ভেতরটা খচখচ করতে থাকে। ভাইয়ার জিনিসপত্র সব। ভাইয়ার অনুমতি ছাড়া কি করে বিক্রি করে? কিন্তু ভাইয়ার সাথে যে যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। অফিস থেকে রের হয়ে বাসায় ফেরার পথে শুধু এসবই ভাবতে থাকে হীরা। এত ভাবনা কোনদিন তাকে ভাবতে হবে এটাই তো ভাবা হয়নি কখনও।
.. .. .. .. ..
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।