আমার মন খারাপের পরেও, আমি আছিরে তোর পাশে...
একটা চিঠি---কত আকাঙ্খার চিঠি---অপেক্ষার চিঠি---স্তব্ধ করে দিলো সময়কে---মুহূর্তে ভেঙে দিলো একটু একটু করে গড়ে ওঠা স্বপ্ন। অ--নে---ক দিন পর ভাইয়ার চিঠি। সুদূর প্রবাস থেকে। ”সামনের মাস থেকে আমি আর কোন টাকা পাঠাতে পারবোনা”। ----চিঠির সারমর্ম।
মা-কে নিয়ে চার ভাইবোনের মধ্যে সবেমাত্র অনার্স ফাইনাল দেয়া সবচেয়ে ছোট বোনটি বিশাল ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সযতেœ আগলে রেখেছে তিল তিল করে গড়ে তোলা ভাইয়ার একগাদা আসবাবপত্র। ভাইয়ার পাঠানো টাকাই বাসা ভাড়া, সংসার খরচ, বোনটির পড়ালেখা সবকিছুর একমাত্র সম্বল। কি হবে তাহলে এখন? কি করে চলবে সংসার? মায়ের ওষুধ, বোনের পড়ার খরচ? না----এই ভাবনাটি তখন মোটেও আচ্ছন্ন করেনি মা আর ছোট বোনটিকে। আচ্ছন্ন করেছে অন্যরকম এক আতংক। হঠাং কি হলো ভাইয়ার? মায়ের বড় আদরের ছেলেটি কি বড় কোন সমস্যায় জড়ালো? চিঠিতে তো আর কিছু লেখা নেই! বোনটি মুখস্ত হয়ে যাওয়া চিঠি আবার মেলে ধরে চোখের সামনে।
কোন লাইন যদি লিখতে গিয়ে কলমের কালি শেষ হয়ে যায়! আবছা লেখাটি যদি ফাঁকি দিয়ে চোখের আড়াল হয়ে থাকে! খোঁজে---বোনটি অস্থির হয়ে ভাই-এর বিপদের চিহ্ন খোঁজে। নাহ্----কিচ্ছু লেখা নেই। চিঠি হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে কি করবে? ভাইয়ার খোঁজ নেবে কি করে? ভাইয়ার একটি ফোন আছে। সেখানে ফোন করতে হবে। কলিং কার্ড কিনতে বাইরে যেতে হবে।
ভাবতে থাকে বোনটি--------।
সেই কত বছর আগে ভাইয়া মা আর তিনটি ভাইবোন-কে মনের মত করে সুখ দেবে বলে নিজের সব স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে পাড়ি জমায় দূরদেশে। যাওয়ার আগে হাজারো স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়ে যায় প্রতিটি ভাইবোনের অন্তরে। ছোট বোনটির মনে পড়ে সে পাগল হয়ে কেঁদেছিলো ভাইয়া চলে যাওয়ার সময়। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে।
ভাইয়া খুঁজেছে কত তাকে। পরে নিজের ওপর ভীষন রাগ হয়েছে বোনটির---যাওয়ার মুহূর্তে ভাইয়ার আদর থেকে নিজেই নিজেকে বঞ্চিত করেছে বলে। সবচেয়ে আদর বুঝি এই বোনটিকেই করতো ভাইয়া। মনে পড়ে ---- প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামায পড়তে যাওয়ার আগে বোনটির হাত-পায়ের নখ কেটে দিত ভাইয়া। ক্লাসের নোট করে দিত ভাইয়া নিজে।
সেই নোট পড়ে প্রতি ক্লাসেই ফার্স্ট-সেকেন্ড হতো বোনটি।
সেই ভাইয়া----চার বছর পর দেশে ফিরলো! সব ভাইবোন, মা দুচোখ ভরা স্বপ্ন, হৃদয় ভরা ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষায়---”ভাইয়া আসছে। ভাইয়া এলে আমরা এটা করবো। ভাইয়া এলে আমরা ওটা করবো। ভাইয়া-কে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো।
” ”তুই কিন্তু ভাইয়া-কে মটরশুটি দিয়ে ফ্রাইড রাইস রান্না করে খাওয়াবি”---ছোটদা বলে ছোট বোনটিকে। ছোট বোনটির রান্নার ভীষন ভক্ত সে। ছোট বোনটি খাবার টেবিলে না থাকলে যার খাওয়া হয়না। ছোট বোনটি বাসায় না থাকলে যার কার্টুন দেখা হয়না। সবাই মিলে কি উত্তেজনা----ভাইয়া আসছে।
... ... ... ... ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।