আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রপক্ষ যখন আত্মঘাতী ছায়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়



রাষ্ট্রপক্ষ যখন আত্মঘাতী ছায়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ফকির ইলিয়াস ================================ যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পদত্যাগ করেছেন। তার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। তিনি ছাত্রসংঘের পক্ষে ভিপি নির্বাচন করেছিলেন, এমন কথা বলেছেন স্বয়ং জামাতের নেতারাও। তারপরও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন এই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে।

এই ঘটনা নিয়ে বইছে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার ঝড়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার অঙ্গীকারটি ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। তারা এই কাজটি করার জন্য রাষ্ট্রের জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কাজটি করতে কোথায় যেন বার বার ঘাপলার শিকার হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। মীর কাশেম আলী একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচিত। সরকার যে কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে বিধিনিষেধ জারি করে। অথচ দেখা যায় এই মীর কাশেম আলী ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়েই সৌদি আরবে পাড়ি জমান। মীর কাশেম আলী সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বাংলা সংবাদপত্রে তার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে অতীতের মতো আর ভুল করবে না। আর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা এলে আরো বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করবে। ’ প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন, তিনি কিন্তু দুটি প্রধান দলের মর্জি তোয়াজ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার সাক্ষাৎকারগুলো আমি পড়েছি মনোযোগ দিয়ে।

কোথাও বর্তমান সরকারের একটু মৃদু সমালোচনাও তিনি করেননি। বরং সরকারের মনরক্ষা করে কথা বলেছেন। তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তিনি ঢাকা বিমানবন্দরের ভিআপি লাউঞ্জ দিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান। এখন আসা যাক, প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের নিয়োগ প্রসঙ্গে। সাবেক সচিব আব্দুল মতিনের অতীত পরিচয় এবং কর্মকাণ্ড সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর না জানার কোনো কারণ নেই।

তারপরও তাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল পদে নিয়োগ দেয়ার আগে খুব গভীরভাবে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ তা করেনি। কেন করেনি? বহুল প্রত্যাশিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ বিষয়টি তো মোটেইি ছেলেখেলা নয়। আব্দুল মতিনের পদত্যাগের পর বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া দেখলাম টিভিতে। তিনি বলেছেন, ‘প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা’ বলে নাকি কোনো পদ ছিল না।

প্রতিমন্ত্রী এসব কী বলছেন? গোটা দেশবাসী এতোদিন শুনে আসলো ‘প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা’ পদটির কথা। এখন মন্ত্রী বলছেন তা নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি! রাষ্ট্রপক্ষের এমন অসংলগ্ন বক্তব্য খুবই বেদনাদায়ক। তা মানুষকে বিভ্রান্তই করছে মাত্র। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, আব্দুল মতিন পদত্যাগ করলেও তদন্ত কমিশনের অন্য যারা সদস্য রয়েছেন, তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। কাজ চালাতে হবে, এর যে কোনো বিকল্প নেই- তা সরকার পক্ষ ভালোই জানে এবং বুঝে।

কিন্তু কথা হচ্ছে সরকার এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন? কেন নিজেই নিজের বৈরী হচ্ছেন, সরকারের নীতি নির্ধারকবৃন্দ? বর্তমান সরকার বিভিন্ন বিষয়ে অপরিপক্কতার উদাহরণ দিতে শুরু করেছে, সে সাক্ষ্য তাদের বিভিন্ন কাজ থেকেই বেরিয়ে আসছে। আঘাত আসতে শুরু করেছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও। পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম রায় হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। তার পরপরই মিজানুর রহমান নামের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা টাঙ্গাইলে খুন হয়েছেন। গোটা দেশজুড়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ক্যাডাররা মুক্ত অস্ত্র হাতে মহড়া শুরু করেছে।

বরিশালে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মারামারির দৃশ্য সবাইকে অবাক করেছে। দেশজুড়ে চলছে অবাধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি। পুলিশের আইজি, সকল জেলার পুলিশ সুপারদেরকে নিয়ে জরুরি সভা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তার এই আহ্বানও প্রমাণ করেছে, এই বিষয়টি নিয়ে কোথাও ঘাপলা রয়েছে সরকারের অভ্যন্তরে। কথা ছিল মে মাসের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের চার্জশিট দেয়া হবে। পদত্যাগী তদন্ত প্রধান আব্দুল মতিন মিডিয়ায় সরাসরি বলে গেছেন তদন্ত কমিশনকে পর্যাপ্ত পরিমাণ লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে না সরকার। তিনি বলেছেন, একটি পুরোনো মিনিবাস দেয়া হয়েছে। তারও জ্বালানি তেল দেয়া হয়নি নিয়মিত।

ফলে তদন্ত কমিশন ঢাকা শহরের বাইরে কোথাও যেতে পারেনি। এর হেতু কি থাকতে পারে, তা নিয়েও জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন দানা বাঁধছে। রাষ্ট্রক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী নয়। আওয়ামী লীগ মেধাবী ত্যাগী মানুষদের মূল্যায়নে উদারহস্ত না হলে আরো সংকটে নিমজ্জিত হতে পারে সরকার। মনে রাখা দরকার, এই প্রজন্ম খুব ঘনিষ্ঠভাবে সরকারকে পরখ করছে।

---------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। ১১ মে ২০১০ মংগলবার প্রকাশিত ছবি- জিরার্ড কর্টেনবট

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.