পিলখানা হত্যা মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আনিসুল হক ও মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে অসহযোগিতা করেছেন। তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান বহুল আলোচিত এ মামলার রায়ে এ মন্তব্য করেছেন।
৫ নভেম্বর রায় ঘোষণার এক মাসের বেশি সময় পর গতকাল সোমবার এর প্রত্যয়িত অনুলিপি আসামির আইনজীবীদের দেওয়া হয়।
আইনজীবী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। আর মোশাররফ হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন।
আদালতের মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এটা দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি জানি না, কেন তিনি এ ধরনের মন্তব্য লিখেছেন। ’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো আদালতকে সহযোগিতা করেছি। এ জন্য রায় ঘোষণার সময় আদালত সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষকে ধন্যবাদও দিয়েছিলেন। এখন জানি না, কেন তিনি রায়ে এমন বিষয় উল্লেখ করলেন।
’
তিন হাজার ৬৭৮ পৃষ্ঠার রায়ের মধ্যে তিন হাজার ৫২০ পৃষ্ঠায় বিচারক এ মন্তব্য করেন। বিচারক লিখেছেন, তিনি এ আদালতের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ‘অজ্ঞাত কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন তাঁকে অসহযোগিতা করতে শুরু করেন। এই আইনজীবীর আচরণ দেখে তাঁর মনে হয়েছে, তিনি যেন কোনোভাবেই আদালতকে সহযোগিতা করতে চান না। যুক্তিতর্কের সময় বিষয়টি তিনি তীব্রভাবে বুঝতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন।
বিচারক আখতারুজ্জামান এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হকের নাম উল্লেখ করে রায়ে বলেন, এ মামলার যুক্তি-তর্ক শেষ হওয়ার পর তিনি আনিসুল হক ও মোশাররফ হোসেনের কাছে মামলার নথি (কেস ডকেট) চেয়ে পাঠান।
কিন্তু তাঁরা সেটা দেননি। রায় ঘোষণার আগের দিন বিকেলে মোশাররফ হোসেন সেই নথি তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। বিচারক উল্লেখ করেন, ‘জানি না, এটা কোন ধরনের অসহযোগিতা, একজন কোর্ট অফিসার হিসেবে মোশাররফ হোসেনের এ অসহযোগিতা মোটেও কাম্য ছিল না। ’
আদালতের এ মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি কখনো আমার কাছে কোনো ধরনের নথি চাননি। এ ধরনের কোনো চিঠিও তিনি দেখাতে পারবেন না।
’
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিডিআর হত্যা মামলার নথি ছিল প্রায় ৮৫ হাজার পৃষ্ঠা। এত বড় নথি বিকেলে নিয়ে সেটা পড়ে পরদিন কী করে বিচারক রায় দিলেন, সেটাই প্রশ্ন। রায়ে বিচারকের এ মন্তব্য পুরো রায়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি তড়িঘড়ি করে মনগড়া রায় দিয়েছেন। ’
রায়ে বিএনপির নেতা নাসির উদ্দীন পিন্টু ও আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারক বলেন, নাসির উদ্দীন এলাকায় অতিশয় প্রভাবশালী লোক।
তাঁর ভয়ে সাক্ষী আদালতে আসতে ভয় পান। এক আসামি তাঁর ভয়ে আদালতে আসতে রাজি হননি। তোরাব আলী সম্পর্কে একই মন্তব্য করে বলা হয়, তদন্তকালে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জবানবন্দি ১৬১ ধারায় রেকর্ড করা হয়নি। বিচারক বলেন, আদালতে সাক্ষী আনার দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের তথা পুলিশের। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তারা কি ভয় পেয়েছিল, নাকি পুলিশের ব্যর্থতা আছে এ ক্ষেত্রে?’
এ দুই আসামির ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রায়ে যে অভিমত দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়।
কোনো সাক্ষী আদালতে আসতে ভয় পেয়েছেন, এমন অভিযোগ কখনো আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তোরাব আলীর বিরুদ্ধেও ১৬১ ধারার সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল।
রায় ঘোষণার কিছুদিন আগে পর্যন্ত এ আদালতের বিচারক ছিলেন জহুরুল হক। তিনি মামলার সব ধরনের শুনানি করেন। সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ করেন তিনি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ মামলাটি তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের কাছে স্থানান্তরিত হয়। তিনি এ মামলার রায় দেন। রায়ে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। আর নাসির উদ্দীন পিন্টু, তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনের।
খালাস পান ২৭৭ জন।
তবে রায় ঘোষণার পর আসামিদের রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একাধিক আসামির আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ পাওয়ামাত্র ১২ জন আসামি রায়ের অনুলিপি পেয়েছেন। অন্যরা অনুলিপি পাননি। কবে পাবেন, তা-ও কেউ জানেন না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।