আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াম, পাড়ে লয়ে যাও আমায় সেদিন সূর্য তার উত্তাপ দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছিল বুনোপশ্চিম। সবাই বলাবলি করছিল যে,এতো উত্তাপ সূর্যদেব বিগত একদশকে ছড়াননি। ট্রেইলে দূর থেকে বিরাট ধুলোর মেঘ ভেসে ভেসে আসছিলো। কাছে আসতেই দেখা গেলো দুইটি স্ট্যালিয়ন আর তাদের উপরের আরোহীদের। সাদা স্ট্যালিয়নে বসা প্রথমজন সাম্য ও ভদ্র চেহারার।
মাথায় দামী হ্যাট। গলায় লাল ব্যান্ডানা। ঘামে ভিজে ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে। পাশেরজন বদরাগী চেহারার আর উসকোখুসকো চুলের। পড়নে কাউবয় শার্ট আর রঙচটা মলিন জিন্স।
তাদের ব্যবহত ট্রেইলটা আউট লরা ব্যবহার করে,হেল সিটি থেকে মিসিসিপি যাওয়ার জন্য। দুইপাশে পাহাড় সারি। আর উত্তরে কান্ট্রিরিভার। সাপের মত এঁকেবেঁকে চলে গেছে দক্ষিনের টড টাউন পর্যন্ত। ট্রেইলের মাঝখানে মাঝখানে আউট ল দের ঘাঁটি।
বেপরোয়া কোন মার্শাল আর কঠোর আইন থেকে বাঁচতে এখানে চলে আসে খুনে ডাকাতের দল। আদর করে এটাকে ডাকে তারা হাইড এন্ড সিক।
-তাহলে টমি,জোয়ান কার্লকে আমরা নরকে পাঠিয়েই ছাড়ছি কি বলো হে ? সাম্য চেহারার মধ্যবয়সী বলে উঠলো।
-অবশ্যই। নরকের সবচেয়ে নোংরা ডাইনীটা তার জন্য বরাদ্ধ করে রাখো শেরিফ জনসন।
আমার আর তর সইছে না। তিনটে স্টেজ লুট আর টেড সিটির বারটেন্ডারের মেয়েকে ধর্ষণ!অনেক উড়ে বেরিয়েছে সে এতো দিন।
-একজন আউট ল মেরে যদি ২০০০ ডলার আয় করা যায় তবে ক্ষতি কি ?বুক পকেট থেকে ওয়ান্টেড পোস্টারটা বের করলো বাউন্টি হান্টার প্রাক্তন শেরিফ জনসন। গোটা গোটা অক্ষরে সেখানে লেখা-“ওয়ান্টেড জোয়ান কার্লঃডেড অর অ্যালাইভ”।
-এবার আমাদের পালা।
শেয়ালের মতো হেসে উঠলো টমি।
স্পারের দাবড়িয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা টমির বাদামি স্ট্যালিয়নের পেটের দিকে দৃষ্টি হানলো সাদা স্ট্যালিয়নের মালিক জনসন।
-তোমায় উত্তেজিত মনে হচ্ছে? কুল ডাউন ওল্ড চ্যাপ। ওর ওক গাছের কেবিনের অবস্থান আমি জানি। কার্লের সাগরেদ লুটেরা হ্যানসম আমাকে জানিয়েছে।
অবশ্য এই কথা বের করতে হ্যানসমের পিঠের ছাল তুলে ফেলেছি আমি। হে হে…….
-আমি ঠিক আছি। ওল্ড পার্টনার। আজ ভালোই ভালোই কাজটা শেষ করে টড সিটির বারের সবচেয়ে দামী ট্যাকিলা গিলতে চাই আমি। ব্যস।
-গানহোল্ড থেকে সিক্স শুটার বের করলো জনসন। সমান্তরালে তাক করো আর গুলি ছুড়ে শুইয়ে দাও,বয়। ডুয়েল লড়ার ভঙ্গিতে অস্ত্র নাড়াচড়া করতে করতে বললো জনসন। তারপর শরের গিয়ে ফুর্তি করো।
প্রায় সন্ধ্যায় ট্রেইলের বাঁকে ঘোড়া থামালো দু জন বাউন্টি হান্টার।
পাশের পাহাড়ের ঢালে চড়তে শুরু করলো। ঝোপঝাড়গুলো এড়িয়ে পাহাড়ের সমান্তরাল পাশটায় চলে এলো। সামনে নিঃসঙ্গ এক কেবিন। টিমটিম আলো জ্বলছে।
-এখানেই!পার্টনার?জিজ্ঞেস করে উঠলো টমি।
-হুম। এটাই সে কেবিন ওল্ড চ্যাপ। তুমি পিছন দিকটা সামলাও। ওখানে তার একমাত্র চ্যালা হারডি থাকে। আমি সামনের দিকে গিয়ে কার্ল কে সামলাচ্ছি।
ফিসফিস গলায় বলে উঠলো জনসন।
-জে হুকুম,পার্টনার। স্মিত হেসে কেবিনের পিছনের অন্ধকারে মিশে গেলো টমি।
মৃদু পায়ে কেবিনের দরজার সামনে সামনে চলে এলো জনসন। দরজা সামান্য খোলা।
কান পাতলো সে। নারী ও পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসছে কানে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো সে,নড়বড়ে বিছানায় কোন মেয়েকে নিয়ে কার্ল ফুর্তিতে ব্যস্ত।
হোল্ডস্টার থেকে পিস্তল বের করে হঠাৎ করে কেবিনে ঢুকে পড়লো জনসন। সাথে সাথেই চমকে পরস্পর থেকে সরে গেলো আদিম প্রবৃত্তিতে রত দুই নর-নারী।
-আহ,অসময়ে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত কার্ল। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না।
-কে তুমি,কোন আস্তাবল থেকে এলে ? থলথলে মোটা শরীরের অধিকারী কার্ল বাজখাই গলায় প্রশ্ন করে উঠলো।
-হ্যা। আস্তাবল থেকেই এসেছি।
কিন্তু তোমাকে নরকে পাঠাতে এসেছি। হোল্ডস্টার থেকে পিস্তল বের করে সাথে সাথেই ড্র করলো জনসন। পর পর তিনটি গুলি কার্লের উদাম বুকে ত্রিভুজাকার রক্তের ধারা রচনা করে দিলো। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো জোয়ান কার্ল।
হোল্ডস্টারে অস্ত্র রাখতে রাখতে ভয়ে কাঁপতে থাকা কার্লের মেয়ে মানুষের দিকে তাকালো জনসন।
-সরি ম্যাম। আপনাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত নষ্ট করে দেওয়ার জন্য আমি আবারও নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। কিন্তু এটা দেখুন।
বুক পকেট থেকে কার্লের নামে জারি করা ওয়ান্টেড পেপারটা বের করে মেয়েটির হাতে দিলো জনসন। সন্দেহের চোখে জনসনের দিকে তাকিয়ে পেপারটা হাতে নিলো স্বর্ণকেশী তরুণী।
-তারমানে, তুমি বাউন্টি হান্টার? চাপা গলায় প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তরুণী।
- উহু,আমি না আমরা। আমার পার্টনার আছে। বলতে বলতে কেবিনের পিছন দিকে গুলির শব্দ হলো।
-আমার পার্টনার ও সৎ ভাই টমি।
পিছনে হার্ডিকে কাতল করেছে। ম্যাম,আপনার কোন ক্ষতি আমি করবো না। শুধু প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে।
-আমি কিছু জানি না কার্ল সম্পর্কে। আমতা আমতা গলায় বলে উঠলো তরুণী।
আমাকে পাশের শহর থেকে এনেছে কার্ল। এর জন্য সে ডলার ব্যয় করেছে।
-তুমি এখানে ক দিন ধরে আছো? জনসন বুঝতে পারলো সে কার্লের ভাড়া করা সস্তা মেয়ে মানুষের সাথে কথা বলছে।
-তিন দিন। আমি আসলেই জানি না।
-আসলে, খাঁকরি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলো জনসন। কার্লকে আইন খুঁজে বেড়াচ্ছিল কারন সে তিন তিনটে স্টেজ লুট করেছে। টেড টাউন থেকে মিসিসিপি যাচ্ছিলো সেগুলো। ওখানে সরকারী কোষাগারের ত্রিশ হাজার ডলার আছে।
-আমি তার লুটের বিষয়ে কিছুই জানি না।
সত্যিই জানি না। দুর্বল গলায় জবাব দিলো তরুণী।
-এই কেবিনে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে টাকাগুলো। তুমি বিগত দুই দিন কিছুই দ্যাখো নি?সাহায্য করলে অবশ্যই তুমি পুরস্কৃত হবে।
-দাঁড়াও,বুড়ো ঘোড়া ।
এইবার মেয়েটির গলায় উৎসাহের জোয়ার দেখতে পাওয়া গেল। আমি জানি,আমি বোধ হয় জানি।
-হ্যা,এইতো। এভাবে বলে ফেলো বিউটি। কথা দিচ্ছি রোমান্সের আগে আমরা সবচেয়ে দামী রেস্টুরেন্টে ডিনারটা সারবো।
-কার্ল বিছানার পায়ার কাছ থেকে টাকা বের করে রসদ কিনতে হার্ডিকে দিয়েছিলো। সামনের বাম পাশে। সেখানে দেখতে পারো।
-তাহলে,শুরু করা যাক প্রিয়ে। পায়ার দিকে পা বাড়ালো জনসন।
বিছানার বাম পাশের পায়া ভাঙতেই ভিতরের কোঠরে ভাঁজ করা ডলারগুলো পেয়ে গেলো সে।
-সত্যিই তোমার সাথে ডেটে যাচ্ছি সুন্দরী। জনসন পিছু ঘুরতে ঘুরতে বললো।
হঠাৎ পিছন থেকে গুলির শব্দ হলো। কাত হয়ে পড়ে গেলো জনসন।
কোন মতে ঘুরে তাকালো সে।
-সে সুযোগ তুমি পাবে নাকি,আমার সন্দেহ আছে পার্টনার। টমির আওয়াজ। ওগুলো এখন আমার টাকা,বুড়ো ষাঁড়। তুমি ভেবেছিলে বাউন্টি হান্টিং করে আমি নিজের জীবনের আনন্দটা নষ্ট করবো?কক্ষনো না।
ত্রিশ হাজার ডলার এখন আমার।
-বিশ্বাসঘাতক!আমি তোকে………….
টমির পাশ থেকে পিস্তল গর্জে উঠলো। বুলেট ছুটে গিয়ে লাল টিপ পড়ালো জনসনের কপালে। চিরকালের জন্য থেমে গেলো সাবেক শেরিফ বাউন্টি হান্টার জনসনের গলা।
-ধন্যবাদ লিনা ডার্লিং।
ভাগ্যিস প্ল্যান করে আমি তোমাকে কার্লের কেবিনে পাঠিয়েছিলাম। হেসে উঠলো টমি।
-আমি জানি প্রিয়,মেয়ারের মোটেল রুমে তোমার পাশে শুয়ে যখন প্ল্যান শুনেছি তখনই আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, এটা কাজে দিবে। যাক,আমাদের ছকে কষা পরিকল্পনা তাহলে সফল হলো ।
-তথাস্তু।
হেসে উঠলো টমি। এবার শুধু আমি আর তুমি সুইটহার্ড। কাছে এসো। সে টড সিটিতে তোমাকে ছাড়ার পর থেকেই আমি ব্যাকুল হয়ে আছি। কাছে টেনে নিলো সে লিনাকে।
-উফ। এবার যেন সত্যিকারের মরদের স্পর্শ পাচ্ছি। থলথলে কার্ল বুড়োটার পাশে থাকতে থাকতে এই কয়দিন হাপিয়ে গিয়েছিলাম।
জড়িয়ে ধরলো লিনা টমিকে। মুহূর্তেই কেঁপে উঠলো লিনা।
ঠায়………………..ঠায়
পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে গুলির শব্দ হলো। অবিশ্বাসের চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে লিনা। টমিকে জড়ানো দুহাত ছেড়ে দিলো। গরিয়ে পড়লো টমি। পিছনে দুটো গুলি হজম করে।
হাত থেকে পিস্তলটা দূরে ছুড়ে দিলো লিনা।
-দুঃখিত টমি। আমি জানি আমাকে তুমি ব্যবহার করেছো। আমার মতো নষ্টকে তুমি সত্যিকারেই গ্রহন করতে না। আমি জেনে শুনেই টোপ গিলেছি।
তখনো ডাঙ্গায় উঠা স্যামন মাছের মত মোচড় খাচ্ছিল টমি। অস্ফুট স্বরে কোন মতে বলে উঠলো সে- কেন, লিনা?
-আমার একটা স্বপ্ন ছিলো। নিজের একটা রেস্টুরেন্ট থাকবে। নোংরা বারবনিতার জীবন আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। এই ত্রিশ হাজার ডলার নিয়ে আমি কলরডো চলে যাবো।
সেখানে চেইন সিটিতে দোকান চালাবো। জলের মতো কলকলিয়ে বলতে থাকে লিনা। কখন যে টমি মারা গেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।
দুলকি চালে ছুটছে বাদামী মেয়ার। একজন মহিলা আরোহী।
রাতের মধ্যেই ট্রেইল পাড়ি দিতে হবে,ভাবলো লিনা। রাতের আবহাওয়াটা ঠান্ডা। সবাই বলাবলি করছিলো,বিগত এক দশকে রাতের আঁধারে এতো হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়ে নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।