আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ পার্লামেন্টে বাঙালির সুনিশ্চিত অভিষেক

একটি হৃদয় হাজার আকাশ

বৃটিশ পার্লামেন্টে বাঙালির সুনিশ্চিত অভিষেক সমাগত আনন্দলগ্নে বেজে উঠুক সম্মিলিত করতালি নির্বাচন ২০১০। বৃটেনের জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও বাংলাদেশীদের জন্য অপেক্ষা করছে একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। একজন বাঙালির হাউস অব কমন্সে পদার্পনের মধ্যদিয়ে সূচিত হবে একটি নতুন অধ্যায়ের। একটা বড় কিছুর প্রাপ্তিতে আনন্দে আত্মহারা হবে বাংলাদেশী কমিউনিটি, দুলে উঠবে বাঙালি জাতিসত্ত্বা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চেঞ্জ বা পরিবর্তনের আওয়াজ তুলে বিশ্ববাসীকে আন্দোলিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তাতে বাস্তবতার কোনো মিল না থাকলেও আশাহত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলো, নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, নিমিষেই তার সেই গ্লামারাস উক্তি লুফে নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতা-নেত্রীরা। কেউ কেউ নির্বাচনী বৈতরণী পার পেতে সফলও হয়েছেন। অনুকরণীয় সেই অনুরনন এখনও সর্বত্র লক্ষ্যনীয়। বৃটেনের নির্বাচনে পার্টি প্রধান থেকে শুরু করে এমপি পদপ্রার্থীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মুখেও এধরনের শ্রুতিমধুর প্রতিশ্রুতিই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

নির্বাচনে সংখাগরিষ্টতা নিয়ে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন একজন বাংলাদেশী প্রতিনিধির স্বর্ণালী হাউস অব কমন্সের সবুজ চেয়ারে নিশ্চিত আসন লাভের মাধ্যমে রচিত হবে বৃটেনের পরিবর্তিত ইতিহাস। হবে বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার রাজসিক ইতিহাসের সূচনাও বটে। আর তা এমনিতেই হচ্ছে না। এমন একটি ইতিহাস সৃষ্টিতে তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আসন্ন এই মধুক্ষণের পেছনে রয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ত্যাগ-তিতীক্ষার সুস্পষ্ট ছাপ।

উর্বর বীজতলা তৈরীতে তাদের ঘাম জৈব সার হয়ে মিশে আছে। বিশ্লেষকগণ যেমন বারাক ওবামার বিস্ময়কর বিজয়ের মধ্যে পূর্বসুরী মার্টিন লুথার কিং এর কালজয়ী বক্তব্য ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর পূর্ণতা খুঁজে ফেরেন। এবার একটু পেছনে তাকাই। চোখ রাখি ইতিহাসের পাতায়। কৈশোরে বাবা-মার কাছে সারেং, জাহাজীদের গল্প শুনেছি।

আশপাশের গ্রামের মতো আমাদের গ্রামেও সারেং বাড়ি নামে একটি বাড়ির আলাদা পরিচয় আছে। কিন্তু তখন তার মর্মার্থ বুঝিনি। অনেক পরে জানা হলো এই সারেং জাহাজীরাই আমাদের বিলেত জয়ের সৈনিক। ইংরেজরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বঙ্গদেশ তথা ভারতবর্ষে যাত্রা করলেও কূটকৌশলে সিংহাসনে চড়ে বসে। অতঃপর দু’শো বছর শাসন এবং শোষণের পর যখন ফিরলেন তাদের প্রায় পিছু তাড়া করেই ফিরলেন বাঙালিরা।

বাঙালিরা অবশ্য শাসন করতে পারলেন না, শোষণও। তবু বলা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছিলেন তারা। বিভিন্নভাবে এদেশে থেকে যাওয়ার মাধ্যমে সামাজিক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেলেন বৃটেনের। প্রাচ্যের লোভাতুর খাদ্যাভ্যাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পাশাপাশি প্রভাবিতও করলেন পাশ্চাত্যবাসীদের। আজ তৃতীয় প্রজন্মে এসে ঠেকেছে বাঙালির অভিবাসনের ইতিহাস।

তাই বলে একেবারে মসৃন ছিলো না বাঙালির জীবন যাত্রা। আলতাব আলীদের রক্তঝরা পথে হেঁটে এসেছি আমরা। নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে বর্ণবাদীদের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়েছে। এই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি বরং নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বৃটিশরা আমাদের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত রাখেনি কখনো।

বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এসেছেন আমাদের অগ্রজেরা। জাতীয় রাজনীতিসহ স্থানীয় সরকার অবকাঠামোতে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেই সম্পৃক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গের অবতারণের কারণ হচ্ছে - বৃটেনের সর্ববৃহৎ ফোরামের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা আরেকটি ইতিহাস নির্মাণ করতে যাচ্ছি। ঐতিহাসিক এ যুগসন্ধিক্ষণের মূহুর্তে আমাদের আরো বড়ো করে ভাবতে হবে। নির্বাচিত করতে হবে এমন একজন যোগ্য প্রতিনিধি, যিনি তার অবস্থান থেকে আরো কোনো মহাস্থানে আমাদের এগিয়ে যাবার পথ উন্মুক্ত করবেন।

এখন দুঃস্বপ্ন মনে হলেও আমাদের ভাবী প্রজন্ম হয়তো তা নস্যি প্রমাণে সমর্থ হবে। বেথনাল গ্রীন এন্ড বো। যে নির্বাচনী আসন থেকে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আর এখান থেকেই লেবার পার্টিতে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বাঙালিদের রাজনীতির হাতে খড়ি। বাংলা টাউন প্রতিষ্ঠাসহ টাওয়ার হ্যামলেটসে একচ্ছত্র নেতৃত্বের সূচনা।

হাউস অব কমন্সে বাঙালি প্রতিনিধির পদার্পন স্বল্পতম দূরত্বে অবস্থান করলেও ইতিপূর্বে আমাদের অনৈক্য, বিভক্তিতে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। আর এর সুযোগ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। সর্বশেষ ২০০৫ সালের নির্বাচন টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। নিজের স্বার্থে বা যে কারণেই হোক একজন বাঙালির জন্য মুক্তাঙ্গন (বাঙালি প্রার্থীর জন্য ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার না দাঁড়ানোর অঙ্গিকার) ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশীদের তার পাশে কাতারবন্দি করতে সক্ষম হয়েছিলেন মানবতাবাদী জর্জ গ্যালওয়ে। সে সময় বাংলাদেশী জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বাংলা মিডিয়াও তার পক্ষে ব্যাপকভাবে কাজ করেছিলো।

যার ফলশ্রুতিতে এ এলাকার সর্ববৃহৎ দল লেবার পার্টির প্রার্থী ওনাকিংকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং লেবারসহ সবক’টি পার্টি পরবর্তীতে বাঙালি ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারেনি। এবার প্রধান প্রধান সবক’টি পার্টির প্রার্থী বাঙালি। বলা যায়, সব পথের মোহনার নাম সুনিশ্চিত বিজয়। অন্যভাবে বললে বলা যায়, বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বি বাঙালি। তম্মধ্যে একজনের ভাগ্যে বিজয়মুকুটতো থাকছেই।

অনেকে হয়তো ভাববেন এতো সহজ বিষয়! কিন্তু এখানেই যতো বিপত্তি। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছি আমরা। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হবে। এলাকা, আত্মীয়তার বন্ধন বাধা হয়ে দাঁড়াবে। জাতিগত স্বার্থের অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদেরকে এ দ্বন্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সচেতন মানুষমাত্রই তা উত্তরণে সক্ষম হবেন বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া এই যে সব প্রার্থীই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত- তাও আমাদেরই সংগ্রামের ফসল। এখন আমাদের এই ফসল ঘরে তুলবার সময় এসেছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত মূহুর্ত যতোই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের হার্টবিটও বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসনের বাংলাদেশী লোকজন হাউস অব কমন্সে তাদের প্রথম প্রতিনিধির অভাবনীয় অভিষেক ক্ষণ অবলোকনে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একজন প্রার্থীর হেরে যাওয়া তার ব্যক্তিগত বেদনার কারণ হলেও একজন বিজয়ীর আনন্দ হবে সমগ্র বাঙালি জাতির আনন্দ। এমনকি ঐক্যের মোহনাও। এ মূহুর্তে আমরা আমাদের নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে যে যা-ই করি না কেন, শুভক্ষণে বেজে উঠুক সম্মিলিত করতালি। ঐতিহ্যবাহী বৃটিশ পার্লামেন্টের ভাবী বাঙালি প্রতিনিধির প্রতি অভিষেক পূর্ব অভিনন্দন, ফুলেল শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.