হৃদয় ছবি
স্কুল বিজনেস বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার যুবকদের একটি ভাল ব্যাবসাতে পরিণত হয়েছে। আমদের অনেকেই না বুঝে এই সকল স্কুল নামক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পা দিয়ে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত আমরা নিজেরাই নষ্ট করছি।
কিছু শিক্ষিত (ডিগ্রি বা মাষ্টার্স পাশ) বেকার যুবক একটি বাড়ি বা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেখানে ৫/৬ টা ক্লাস কক্ষ তৈরি করে এবং প্রতিটি ক্লাসে ১০/১২ টা করে বেঞ্চ বসিয়ে দেয়। এবং ৫/৬ টা ক্লাসের জন্য ৫/৬ টা শিক্ষক/শিক্ষিকা ভাড়া করেন নাম মাত্র বেতনে। যারা রোটেশনাল বেসিসে বিরামহীন ভাবে শুধু পড়িয়ে যেতে থাকেন।
এই সকল শিক্ষকদের জন্য কোনো টিচার্স রুম ও থাকে না। একটি রুমে একটি টেবিল আর কতগুলো চেয়ার ফেলে রাখা হয় যা অভিভাবকগনের ওয়েটিং রুম, টিচার্স রুম এবং হেড-মাস্টার্স অফিস হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এটাকে থ্রি-ইন ওয়ান রুমও বলা যেতে পারে, এতে ২ টা এক্সট্রা ক্লাস রুম পাওয়া যায়।
এবার বলি শিক্ষক/শিক্ষিকাদের কথা। এই সকল স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সর্বোচ্চ বেতন স্কেল হলো প্রতি মাসে ৬০০ টাকা (প্রতি মাসে ৩০০ টাকা এবং ফ্রি শিক্ষক/শিক্ষিকাও আছেন অনেক)।
এতো ক্ষুদ্র বেতনে কোন টাইপের শিক্ষক/শিক্ষিকারা ক্লাস নিতে আসেন সেটা আপনারা বুঝতেই পারছেন। ক্লাস ফাইভ অথবা সিক্স পাশ অথবা ম্যাক্সিমাম মেট্রিক ফেইল হলো এই সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাদের কোয়ালিফিকেশান। এই সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাদের কাছ থেকে আমরা কি ভালো শিক্ষা প্রত্যাশা করতে পারি? এরা শুধু বই রিডিং পড়ে আর পড়া দিতে পারে, পড়াটা বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও এদের থাকে না। সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারলে পড়া মুখস্ত করানোর প্রয়োজন হয় না। আর ভালো ফলাফলের জন্য ভালো শিক্ষক/শিক্ষিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাগন পড়া বুঝানোর চেয়ে চিল্লা-পাল্লা আর পিটিয়ে পড়া আদাই করাতে বেশি পারদর্শী। এই সকল শিক্ষকদের মতে পড়া মুখস্ত পারলেই পরিক্ষায় ভালো হবে এবং স্কুল নিয়ে কেউ মন্তব্য করবে না বা কটুক্তি করতে পারবে না; আর তাদের স্কুলের সুনাম বাড়বে। পড়া সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের ধারণা বা দক্ষতা সম্পর্কে সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ নেই এই সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাদের। স্কুল দেখেই আমরা আমাদের সন্তানদের সেখানে পাঠিয়ে দেই, কিন্তু স্কুলের শিক্ষকদের মান নিয়ে আমরা একটুও ভাবি না।
আমরা কেনো প্রতারিত হই? এখন সে প্রসঙ্গে আসি।
এই সকল স্কুলের বেতন স্কেল প্রতি মাসে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। আমরা ভাবি এতো বেতন যখন, তখন স্কুলের মান নিশ্চই ভালো হবে। কিন্তু শিক্ষকদের কোয়ালিফিকেশানের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে চলেন, আর আমরাও তেমন একটা কেয়ার করি না। আবার এই সকল স্কুল ব্যাঙের ছাতার মতো সংখ্যায় অনেক, তাই আপনার বাড়ির খুবি সন্নিকটেও কয়েকটা খুঁজে পাবেন। এসব স্কুলে পড়লে ছাত্র-ছাত্রিরা অভিভাবকের সাহায্য ছাড়া নিজেরাই যাতায়াত করতে পারে।
তাই পরিবহন সংক্রান্ত ঝামেলা এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের চিন্তার বিষয় হলো, আমরা আমাদের সন্তানের ভবিষ্যত সুন্দর হওয়ার জন্য তাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি, আর তার জন্য যদি আমরা আমাদের সামান্য শ্রম না দিতে চাই তাহলে বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। আরো আছে আমাদের অজ্ঞতা এবং অবহেলা।
নাম মাত্র পুঁজিতে বিপুল আয়ের কারনে এই সকল স্কুল নামক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়ে যাচ্ছে। এই স্কুল গুলোর কুফল আমরা তাৎক্ষনিক ভাবে বুঝতে পারি না, তাই আমরা নিজেদের সন্তানদের এই সকল স্কুলে পাঠিয়ে অনেকটা স্লো-পয়জনের মতো আমাদের সন্তানদের জীবনকে অনিশ্চয়তার পথে পাঠাতে সাহায্য করে যাচ্ছি।
এই সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া অত্যান্ত জরুরী। শুধু নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পাঠানো বন্ধ করলে হবে না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই এই সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তাই আমাদের উচিত এই সকল স্কুল সোজা বন্ধ করে দেয়া। পুলিশ অভিযান এর মাধ্যমে এই সকল রেজিস্ট্রেশানহীন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, হেড-মাষ্টার আটক; স্কুল বন্ধ করে দেয়ার মতো গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।
যাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রতারণার মাধ্যমে এরা ব্যাবসা করতে না পারে। শুধু সরকার বা পুলিশ নয়। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। যারা এই বিষয়ে সচেন নন তাদের সচেতন করার দায়ীত্বও আমাদের। আমরা যদি এই প্রতারণাকে প্রতিহত না করি, তবে এটার ভুক্তভুগি আমরা ছাড়া আর কেউই হবে না।
আপনাদের কমেন্ট সদা স্বাগত
ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।