আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ
যারা লেখাপড়া বা অন্য কোন বিষয়ে কারো কাছে কিছু শিা লাভ করে তাদেরকে ছাত্র বা শিষ্য বলে। এ হিসেবে সকল মানুষই ছাত্র। কিন্তু শিা ব্যবস্থার আলোকে ছাত্র বলতে প্রথম শ্রেণীতে থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত অধ্যয়নরত মানুষদের বোঝানো হয়। বলা চলে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্র। এদের মূল কাজ লেখাপড়া করা এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ি পরীায় অংশগ্রহণ করে একে একে সকল স্তর বা শ্রেণীর লেখাপড়া শেষ করা।
সকল অভিভাবক এবং শিা প্রতিষ্ঠান এটাই চায়। ছাত্রদের মূল্যায়ণ করা হয় পরীার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। পরীায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য ছাত্রের যেমন ঘুম হারাম হয়ে যায় তেমনি অভিভাবকের দুশ্চিন্তার কোন কমতি থাকেনা। শিা প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র অধ্যয়ন করলে তাকে বেতন ফি নানা ধরণের খরচ দিতে হয় । ছাত্রটি চলে গেলে তার কাছ থেকে নগদ টাকা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে কোন শিক বা কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা চান না একজন ছাত্রও পরীায় ফেল করে তাদের প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করুক।
যারা ভালো ফলাফল করে চলে যায় তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থাও করে প্রতিষ্ঠান। অভিভাবক, কখনো কখনো সমাজের কাছ থেকেও সে সম্মান বা নানা ধরণের পুরস্কার লাভ করে।
এই ছাত্ররাই আবার লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে যুক্ত। ছাত্ররাজনীতি দেশের জন্য কিছুটা তিকর হলেও বৃহৎ স্বার্থে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব রাজনীতির মাধ্যমেই গড়ে ওঠে।
কিন্তু ছাত্ররাজনীতি একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে কিনা চাই ছাত্ররা ফেল করুক। যারা যত বেশিদিন তাদের ছাতৃত্ব বজায় রাখতে সম তাদের হাতেই দেয়া নেতৃত্ব। অনেক ভাল ছাত্র ছাত্ররাজনীতির কর্মী। কিন্তু এমন নেতা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর যার পরীার ফলাফল সাধারণ ছাত্রে তুলনায় ভাল। এসব অনিয়মিত ও অযোগ্যরা যদি দেশ পরিচালনার কাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করকে তাহলে দেশ কেমন চলবে এটা সহজেই অনুমেয়।
যেখানে একজন ছাত্র পরীায় ভালো ফলাফল করে শিা জীবন সমাপ্ত করার চিন্তায় মরিয়া হয়ে উঠে। আবার ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হবার কারণে একজন ছাত্র চেষ্টা করে খারাপ পরীা দিয়ে ফেল করে বা পরীা না দিয়ে কিভাবে শিা জীবন দীর্ঘায়িত করা যায়। কারণ দলের নেতা হতে হলে তাকে অবশ্যই সবচেয়ে সিনিয়র হতে হবে এটা অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাদের বিশ্বাস এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বার বার পরীা না দিয়ে সিনিয়রিটি দেখাতে পারলে সভাপতি বা বড় বড় পদ তার জন্য নির্ধারিত। বিশেষ করে দেশের উচ্চ শিা প্রতিষ্ঠান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজগুলোতে এ প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা, চট্রগ্রাম,জগন্নাথ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনার্স(মাস্টার্স) পড়ানো হয় এমন সকল সরকারি কলেজে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেতা-কর্মীরা ব্যতিব্যস্ত। আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল এবং জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির একই নীতিতে নেতৃত্ব দেয়া হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন ও সেক্রেটারি মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু ছাত্রীগের পদে তারা বহাল রয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জাতীয় সংসদ নির্বাচেনে অংশ নিয়ে আবার ছাত্রদলের সভাপতির পদে আসীন হয়েছেন।
যতদূর জানি সালাউদ্দিন টুকুর মেয়ে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ছাত্র শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম ছাত্রত্ব শেষ করে পিএইচডি গবেষণায় ভর্তি হয়ে নামকাওয়াস্তে ছাত্রত্ব বজায় রেখেছেন।
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে। ইতোমধ্যে ইসলামি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। খুব স¤প্রতি জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষিত হবে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ হল কমিটির নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই নিয়মিত ছাত্র নয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার একটি অবলম্বন হচ্ছে সমাজ কল্যাণ ইনিস্টটিউট। রাজনীতি ছাত্রত্বের পরিচয়টুকু ব্যবহার করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীরাই মাস্টার্স শেষ করে এ ইনিস্টিটিউটের ছাত্র হয়ে যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ৫০জনের সম্ভাব্য নেতৃত্ব ধারণা করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগের ছাত্রত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় ২০০৯ সালের ১৭ফেব্রয়ারি ।
এক বছর পার হয়েগেছে কমিটি নেই। স¤প্রতি কমিটি গঠনের গুঞ্জন উঠেছে। তাই অনেক কর্মী কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য তারা তাদের শিা জীবন বিলম্বিত করছে। পরীা না দিয়ে বা একটি পরীা দিয়ে বা শুধু মোখিক পরীা না দিয়ে পদ পাওয়ার আশায় কোনমতে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছে অনেকে। কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার আশায় যারা লবিং শুরু করেছেন তাদের মধ্যে নাহিদুর রহমান খান সাগর ও এসএম শামীম এগিয়ে।
এই দু‘জনের একজন মাস্টার্স পরীার একটি পরীা দিয়ে বাকী পরীা দেয়নি। অন্যজন মাস্টার্সের ভাইভা পরীা দেয়নি। সেক্রেটারি পদে জাফর বিন রশিদ প্রিতম, নিয়ামুল পারভেজ, কামরুল হাসান সুমন, আসিফসহ ৩১,৩২ ও ৩৩তম ব্যাচের অনেকেই পরীায় অংশ না নিয়ে অনিয়মিতদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। এখানকার নেতা-কর্মীরা অনিয়মিত ছাত্র হওয়ার জন্য হিড়িক শুরু করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও পরবর্তী কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্ব জিয়াউর রহমান জিয়া, জাকির হোসেন, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ তারা সকলেই মাস্টার্স পরীা না দিয়ে ছাতৃত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
ফেল করা আদু ভাই ছাত্ররাই ক্যাম্পাসে বড় পদ পেয়ে আসছে এবার পাওয়ার আশায় আদু ভাই সেজে বসে আছে। আবার এরাই নাকি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি কামরুল হাসান রিপন এবং সেক্রেটারি গাজী আবু সাঈদের ছাত্রত্ব কখন ছিল একথা জুনিয়র নেতা-কর্মীরা কেউই জানেনা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি গোলাম মওলা শাহীনের ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়েছে এবং পরবর্তী নতুন কমিটিতে আরিফ, জাকির, সোহেল, কাজি মনিরসহ যাদের নাম আসছে তাদের কারোরই ছাত্রত্ব নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি আউয়াল কবির জয় পদ পাওয়ার আগে মাস্টার্স পরীায় অংশ না নিয়ে আদুভাই দলের নাম লিখিয়েছেন। আর এখানে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে।
সভাপতি সেক্রেটারী পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে অনেক আগেই তাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার কথা। ইডেন কলেজের সভাপতি নিঝুম ও সেক্রেটারি তানিয়ার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে কমপে ৩ বছরের অধিক সময়।
ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব তৈরি করা তাহলে মেধাবী ছাত্রদের হাতেই নেতৃত্বের ভার অর্পণ করা অত্যাবশ্যক। যারা শুধুমাত্র একটি পদের লোভে আদু ভাই সাজতে পারে তারা আর যা পারুক অন্ততঃ কোন দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। দেশে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হলে আদুভাই মার্কা নেতা বাদ দিয়ে যোগ্য মেধাবীদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।